অ্যান্ড্রোস লিহন
নারীর শরীর কোনো ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মতাদর্শের পতাকা হতে পারে না
লেখক- অ্যান্ড্রোস লিহন, বিজ্ঞান লেখক
গবেষণায় দেখা গেছে, একজন উলঙ্গ নারীর প্রতি আমাদের ব্রেন খুব একটা আকর্ষণ অনুভব করে না, আমরা তখনই আকৃষ্ট হই যখন তার শরীরের কিছু অংশ আবৃত করে দেয়া হয় কারণ আমাদের ব্রেন সিক্রেট উন্মোচন করতে পছন্দ করে। পর্নোভিডিয়োতে যেগুলো একদম খোলামেলা সেগুলোতে আমাদের ব্রেন আনএক্সপেক্টেড রিওয়ার্ড পায় না যেজন্য সেখানে ডোপামিন থ্রিল নেই।
পৃথিবীর কোনো প্রাণী আর্টিফিশিয়াল পোশাক পরিধান করে না কারণ সূর্যের উত্তাপ ও শীতলতা থেকে প্রিজার্ভ করার জন্য তাদের শরীরে ন্যাচারাল লেয়ার আছে। শিম্পাঞ্জি অথবা বনবো পোশাক পরে না তার কারণ এই নয় যে তারা অসভ্য ও নিন্মমাত্রিক জীব। তারা পোশাক পরিধান করে না কারণ, তাদের পশম আছে, তাদের জন্য পোশাকের দরকার নেই।
ক্লাইম্যাট চেঞ্জিং অথবা প্যারসাইট থেকে নিষ্কৃতি পেতে আমরা আমাদের বডি হেয়ার হারিয়েছি, এজন্য আমাদের দেহের স্কিন খুবই সংবেদনশীল ( অনেকগুলো হাইপোথিসিস আছে)। সূর্যের তীব্র আলো থেকে চোখকে প্রোটেক্ট করতে যেজন্য আমরা সানগ্ল্যাস পরিধান করি, ঠিক একই কারণে তাপমাত্রার বিভিন্ন পরিবর্তনের সাথে আমাদের বডিকে সমন্বয় করার জন্য আমরা আমাদের দেহের চারপাশে আর্টিফিশিয়াল লেয়ার তৈরি করি (ধুলোবালিও একটা ফ্যাক্ট )।
এ ধরণের আর্টিফিশিয়াল লেয়ার কাপড়ের তৈরিও হতে পারে আবার এ ধরণের আর্টিফিশিয়াল লেয়ার ইট, বালি, সিমেন্ট ও লোহার তৈরি বিশাল বিশাল টাওয়ারও হতে পারে। শিম্পাঞ্জির কোনো বিল্ডিং নেই, পৃথিবীর আর কোনো প্রাণী তাদের দেহকে উত্তাপ ও শীতলতা থেকে প্রোটেক্ট করার জন্য মানুষের মতো বিরাট বিরাট ভবন বা পোশাক তৈরি করে না।
কিন্তু নারীর স্কিনের প্রতি আমাদের গ্রহে এত এক্সট্র্যা-কেয়ার কেন? তার কারণ আমার কাছে ঠিক স্পষ্ট না। কেন কেবল তাদেরকে যেকোনো তাপমাত্রায় বিশালাকৃতির জামা পরিধান করতে হবে, ঘরের ভেতর অবরুদ্ধ থাকতে হবে? কেন তাদের মস্তিষ্কের উপর এ অমানবিক নির্যাতন? এটা কী শরীর নাকি কোনো সুকঠিন মেটাল?
যদি ছোট পোশাক পরিধান করলে আমরা অন্যের প্রতি সিডিউস হই তবে শিম্পাঞ্জি, বনবো অথবা অন্যান্য অ্যাপসদেরও উলঙ্গ নারীর প্রতি সিডিউস হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের মধ্যেও এস্ট্রাসের পূর্বে কোনো উদ্দীপনা দেখা যায় না তেমন। আমরা কার প্রতি সিডিউস হব সেটা ডিপেন্ড করছে মস্তিষ্কের নিউরোকেমেস্ট্রির উপর। আপনি যদি নিয়মিত সেক্স করার সুযোগ পান তবে আপনার সামনে যদি কেউ উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েও থাকে আপনার ব্রেন তার প্রতি গ্র্যাভিটি অনুভব করবে না।
পৃথিবীর সকল প্রাণীই উলঙ্গ কিন্তু তারা কেন অসীমভাবে একে অন্যের প্রতি সিডিউস হচ্ছে না? জৈব রসায়নের তো একটা সীমা আছে, তাই নয় কী?
গবেষণায় দেখা গেছে, একজন উলঙ্গ নারীর প্রতি আমাদের ব্রেন খুব একটা আকর্ষণ অনুভব করে না, আমরা তখনই আকৃষ্ট হই যখন তার শরীরের কিছু অংশ আবৃত করে দেয়া হয় কারণ আমাদের ব্রেন সিক্রেট উন্মোচন করতে পছন্দ করে। পর্নোভিডিয়োতে যেগুলো একদম খোলামেলা সেগুলোতে আমাদের ব্রেন আনএক্সপেক্টেড রিওয়ার্ড পায় না যেজন্য সেখানে ডোপামিন থ্রিল নেই।
মানুষ টিকেই আছে প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য, এটাই তার জেনেটিক্যাল লজিক, আপনি কীভাবে পোশাক দিয়ে তার ব্রেন থেকে সম্মোহন মুছে ফেলতে পারেন? আবার যদি বলেন উন্মুক্ততা মস্তিষ্কের আসক্তির সার্কিটকে ডেস্ট্রোয় করে দেয় তাহলে কেন পৃথিবীর অন্যান্য জীবদের আসক্তির সার্কিট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে না? আপনার ক্ষুদ্র সিমেন্স রিজার্ভর বা অণ্ডকোষে কতটুকু সিমেন্স রিজার্ভ করা সম্ভব যে আপনি মিলিয়ন মিলিয়ন উলঙ্গ নারীর প্রতি সিডিউস হয়ে মাস্টারবেট করবেন? ব্যাপারটা কী একেবারেই হাস্যকর নয়?
আমাদের পূর্বসূরিদের মধ্যে আমাদের কাজিন নিয়ান্ডারথাল ও আমাদের অ্যানসেস্টর ক্রোম্যাগনরা পোশাক পরিধান করেছিল বলে জানা যায় । কিন্তু তাদের পোশাক ছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শর্ট।
প্রশ্ন হলো, আমাদের পূর্বসূরি পুরুষরা কেন ছোট পোশাক পরিধান করার কারণে নারীর প্রতি সিডিউস হয়ে, র্যাপ করে ,পিটিয়ে ও খুন করে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি? এমন কোনো সায়েন্টিফিক রিসার্চ পেপার দেখানো সম্ভব কী বিরাট পোশাক পরিধান করার কারণে নারীর প্রতি ধর্ষণ হ্রাস পেয়েছে, তাদের শারীরীক ও মানসিক বিকাশ সুস্থ্য ও সুন্দরভাবে ঘটেছে?
শালীনতা নির্ভর করে একটি সমাজে শালীনতার ডেফিনেশনের উপর। আমরা যখন সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত কোনো একটি নর্মের বিপক্ষে কাজ করি , আমরা এক্সিসটেন্সিয়াল আনসার্টেইনটি অনুভব করি, আমাদের মস্তিষ্কের লজ্জা ও অনুতাপের সাথে সম্পৃক্ত নিউরোকেমিক্যাল ট্রিগার হয়।
বাংলাদেশের একজন নারীর মস্তিষ্কের নিউরোকেমিক্যাল যে পোশাকের কারণে উদ্দীপিত হবে, একজন অ্যামেরিকান নারীর নিউরোকেমিক্যাল একই পোশাকের কারণে উদ্দীপিত হবে না। অতএব এখন এটাও পরিস্কার যে পোশাকের মধ্যে শালীনতা নেই, শালীনতা হলো একটি সমাজের পারসোনালিটি। যে সমাজের পারসোনালি যত উন্নত তাদের শালীনতার ডেফিনেশনও তত উন্নত হবে।
যুগ যুগ ধরে নারীদের উপর অন্যায়ভাবে যে সকল সামাজিক নর্ম চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, আমাদের এখন সময় হয়েছে সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসার। আমাদেরকে প্যারাসাইটিক থট থেকে বেরিয়ে এসে বুঝতে হবে পোশাকের জৈবিক উপযোগিতা ও অনুপযোগিতা। আমরা পোশাক পরিধান করব আমাদের পরিবেশগত প্রভাবের সাথে নিজের দেহকে সমন্বিত করার জন্য। মনে রাখতে হবে, নারীর শরীর কোনো ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মতাদর্শের পতাকা হতে পারে না!
লেখক- অ্যান্ড্রোস লিহন, বিজ্ঞান লেখক
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ