দীপংকর মোহান্ত
১৯৭০ সালের নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়
১৯৭০ সালের নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়
৭ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে লাখ লাখ মানুষের সামনে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সে দিন ঢাক শহর জনসমূদ্রে পরিণত হয়। জনতা বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে নতুন কোনো বাণী শোনার জন্য উদ্রিব হয়ে ওঠেছিল। অবশেষ এই অমর নেতা তাঁর অমীয় কণ্ঠে শোনালেন বজ্রবাণী ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’ অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের ডাক দিলেন। তাঁর ভাষণটি ছিল ১৯ মিনিটের। যা জাতির অভ্যুদ্বয়ের স্মারক হিসেবে বিশ্বে নন্দিত। বঙ্গবন্ধু আহবান জানালেন ‘যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা’ করতে। বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ’-এর স্বাধীনতার রূপরেখা ও করণীয় বলে গেলেন।
পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার বাস্তব স্বপ্নবীজ নিহীত ছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ফলাফলের মধ্যে। এই নির্বাচনে বাংলার জনগণ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দলকে একক সংখ্যাগরিষ্টতার আসন দেয়। বলতে হয় যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার বড় ধরণের উপাদান পেয়েছিল।
সুদীর্ঘ কাল থেকে বাংলা ও বাঙালিরা পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। ব্রিটিশ আমল থেকে জনগণের দ্রোহীভাব ক্রমে রাজনৈতিক চেতনায় শাণিত হয়ে থাকে। স্বাধীনতা লাভের জন্য এই ভূমির ওপর দিয়ে বহু আন্দোলনের ঝড় বয়ে যায়। মাতৃভূমির জন্য অনেক লোক শহিদ হয়েছিলেন। লাল রক্তে সবুজ জমি ভিজেছে বহুবার। তবুও কাঙ্খিত স্বাধীকার পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর সরকার বাংলাকে যারপর নাই শোষণ করছে আমাদের মুখের ভাষাকে তারা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। শুরুতেই বাঙালিরা পাকিস্তানকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। পূর্ববাংলার উৎপাদিত জিনিস তারা পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে কম দামে বিক্রি করতো; আবার এই জায়গায় দাম ছিল বেশি। ফলে পূর্ববাংলার বাঙালিরা ক্রমে একত্রিত হতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানের এই অবিচার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখাতে লাগলেন।
অতঃপর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত পথে দাঁড়িয়ে বাঙালিরা ভাষার দাবী আদায় করে নেয়। তারপর থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ক্রমে দানা বাঁধতে থাকে। যা ছিল স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম মাইল ফলক। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকরা ছিল বাঙালি বিদ্বেষী, ক্ষমতা লোভী এবং স্বেচ্ছাচারী। দীর্ঘ দিনে তারা কার্যত একটি ভালো সংবিধান জাতিকে উপহার দিতে পরেনি।
তাদের শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালি সমাজে নেতিবাচক মনোভাব প্রথম প্রকাশ্যে ধরা পড়ে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের ফলাফলে। এই নির্বাচনে মুসলিমলীগ সরকারের ভরাডুবি হয়। যা স্বাধীকার আদায়ের দ্বিতীয় মাইল ফলক বলা যেতে পারে। কিন্তু ক্ষমতালোভী পাকিস্তানীরা যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দেয়।
১৯৫৮ সালে জেনারেল আইযুব খান সংবিধান লংঘন করে সামরিক আইন জারি করে। পূর্ববাংলার লোকজন সামরিক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। ১৯৬২ সালে পূর্ববাংলার ছাত্র সমাজ হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে জয়ী হয়। সেটিও ছিল স্বাধীনতার অভিলক্ষ্যে ছাত্র সমাজের সংগঠিত হওয়ার পথরেখার একটি সোপান।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দাবী উপস্থাপন করেন। ছয় দফার মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা কৌশলগতভাবে বলা হয়েছিল। সারা দেশ জুড়ে ক্রমে ছয় দফা জনমনে রেখাপাত করে। মূলত ছয় দফায় প্রথম স্বায়ত্বশাসনের কথা স্পষ্টতর হয়ে ওঠে।
বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এই দাবীকে জোরালো করে স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতার দিকে যেতে। পশ্চিমারা এই দাবী অগ্রাহ্য করে এবং বঙ্গবন্ধুর ওপর নানা মামলা দিয়ে বারবার কারাগারে পাঠায়। ১৯৬৮ সালে আইয়ুব সরকার ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দিতেও চেয়েছিল। কিন্তু বাংলার জনগণ ছিল তাঁর পাশে। তখন তিনি তখন বাঙালির আশা আকাঙ্খার প্রতীক হয়ে ওঠেন।
১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি আয়ুব খানের পতনের লক্ষ্যে গঠিত হয় ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ তাদের ১১ দফা কর্মসূচি ছিল। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্নিগর্ভ রূপ ধার করে। গঠিত হয় ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। ছাত্ররা তখন কার্যত রাজপথে অবস্থান নেয়। ২০ জানুয়ারি পাক সৈন্যদের গুলিতে ঢাকায় আসাদ শহিদ হলে আন্দোলন আরো তীব্রতর হয়ে ওঠে। ২৪ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে পুনরায় মতিউর রহমান মল্লিক, রুস্তম আলী প্রমুখ শহিদ হন। রক্তে লাল রাজপথ।
১৬ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. শামসুজ্জোহাকে পাক সৈন্যরা গুলি করে হত্যা করলে আন্দোলন চরম মাত্রায় পৌঁছে। জেনারেল আইয়ুব সরকারের আদেশ-নির্দেশ কেউ মানেনি। ছাত্র-জনতা এক হয়ে পূর্ববঙ্গের রাজপথে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে লৌহমানব আইয়ুব বঙ্গবন্ধুর ওপর থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি সকল মামলা প্রত্যাহার করে। জনগণের বিজয় হয়। কিন্তু জনরোষ থামেনি। গণঅভুত্থান ঘটার কারণে ২৫ মার্চ এই ভয়ঙ্কর শাসক জেনারেল আইয়ুব খান মূলত বাঙালির কাছে পরাজিত হয়ে পদত্যাগ করে। এটি ছিল বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের পথে তৃতীয় বিজয়।
জেনারেল অইযুব খানের পতনের পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় বসে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়। তার প্রতিশ্রুতির মতো ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি মধ্য রাত থেকে রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ইয়াহিয়া খান প্রথমে ৫ অক্টোবর জাতীয় ও ২২ অক্টোবর প্রাদেশিক নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের চাপে এবং দাবীতে দেশের সকল নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়।
তার আগে বিভিন্ন কায়দায় টেক্সভিত্তিক ভোট ছিল; হিন্দু- মুসলিম-তফসিলি ভোট আলাদা প্রদানের নিয়ম ছিল। এমনকি চা শ্রমিকদের কার্যত কোনো ভোটাধিকার ছিল না। তারা ভ্যালি ভিত্তিক নির্বাচিত শ্রমিক প্রতিনিধি পাঠাতেন। তাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয়। তখন বিভিন্ন কারণে নির্বাচনের তারিখ পিছানো হয়েছিল। যথাক্রমে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন ৭ ডিসেম্বর ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন ১৭ ডিসেম্বর ধার্য করা হয়।
সত্তর সালের নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ‘নৌকা মার্কা’ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিল। নির্বাচনকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু পূর্ববাংলার প্রায় প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার, শহর ও জনপদে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে জনমানুষকে দ্রুত ঐক্যবদ্ধ করেন। চারিদিকে তখন নৌকার জয়ধ্বণি ওঠে।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে অর্থাৎ এম এনএন নির্বাচনে ১৬২টি আসন ছিল। এই জাতীয় পরিষদের ১৬২ টি আসন। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় নৌকা বা আওয়ামীলীগ ১৬০টি আসনে জয় লাভ করে। প্রাদেশিক নির্বাচনে ৩০০ আসন ছিল [এমপিএ]। তার মধ্যে আওয়ামীলীগ ২৮৮ টি আসন পায়। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ কল্পনাতীত জয়লাভ করে।
নির্বাচনের পর পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে মুক্তির লক্ষ্যে নবজোয়ার সৃষ্টি হয়। এই নির্বাচন ছিল বাঙালির হাজার বছরের বদ্ধ দোয়ার খোলে অরুণোদয়ের দেখার মহেন্দ্রক্ষণ। এই ফলাফলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান, ভুট্টো পূর্ব বাংলার প্রতি আরো রূঢ় আচরণ করে। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের ২৫১ জন এমএনএ এবং ২৬৭ জন এমপিএকে শপথ বাক্য পাঠ করান। এমন বিজয় ও অবস্থা দেখে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকরা ঘাবড়ে যায় এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির হাতে পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থা না দিতে নানা ফন্দি-ফিকির করতে থাকে।
পাকিস্তানী সামরিক সরকার কর্তৃক সংখ্যাগরিষ্ট আওয়ামীলীগের হাতে ক্ষমতা দিতে গড়িমসি করতে থাকলে পূর্ববাংলার জনগণ ক্ষুব্দ হয়ে ওঠে। তারা বুঝতে পারে পাকিস্তানী শাসকদের মতলব কী? অনেক চাপের মুখে অবশেষে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে বসার ঘোষণা দেয়। তার পাশপাশি করাচিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা ভুট্টো নতুন ষড়যন্ত্রের ফাঁদ তৈরি করে। তার আগেই পুর্ববাংলায় দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটে।
১ মার্চ সরকার অধিবেশন স্থগিত করে দেয়। ফুঁসে ওঠে বীর বাঙালি। এই পরিস্থিতিতে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে ক্ষুব্দ জনতা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে এবং পাকিস্তান বিরোধী শ্লোগান দেয়। তখন থেকে জোরালোভাবে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান কণ্ঠে-কণ্ঠে প্রতিধ্বণিত হতে থাকে।
২ মার্চ ঢাকা শহরে ও ৩ মার্চ সারা দেশে স্বতঃস্ফ‚র্ত হরতাল পালিত হয়। বাঙালিরা বুঝতে পারে যে, পাকিস্তানিরা কখনো বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। বরং পূর্ব বাংলায় আরো সৈন্য পাঠিয়ে বাঙালিকে দমন করবে। মানুষ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এমন ঐক্যবদ্ধ হয় যে, তা শাসকরা বুঝতেই পারেনি। তারা মনে করেছিল যে, সামরিক বাহিনী দিয়ে দমন করলে পূর্ববঙ্গের জনতাকে নরম করা যাবে। কিন্তু জনগণের নির্বাচিত জননেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্রাজ্ঞ দৃষ্টি দিয়ে জনতাকে পরিচালিত করেন। রাজপথ জনতার দখলে চলে যায়, যাতে পশ্চিমারা কোনো ভূমিকা রাখতে না পারে। বঙ্গবন্ধু তখন নির্বাচিত এমএলএ ও এমপিএকে নিজে নিজ এলাকায় গিয়ে মানুষকে সংগঠিত করার নির্দেশ পদান করেন। তিনি জন-আন্দোলনকে ক্রমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের দিকে অগ্রসর করতে থাকেন। এমতাবস্থায় পাকিস্তানী শাসকরা প্রথমে বঙ্গবন্ধুকে ডর-ভয় দেখায়। পরে লোভ দেখায় কিন্তু তিনি তাদের সাথে কখনো আপোষ করেনি। জনতা সংগঠিত হতে থাকে।
৭ মার্চ রেসকোর্সের ময়দানে লাখ লাখ মানুষের সামনে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। সে দিন ঢাক শহর জনসমূদ্রে পরিণত হয়। জনতা বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে নতুন কোনো বাণী শোনার জন্য উদ্রিব হয়ে ওঠেছিল। অবশেষ এই অমর নেতা তাঁর অমীয় কণ্ঠে শোনালেন বজ্রবাণী ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’ অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের ডাক দিলেন। তাঁর ভাষণটি ছিল ১৯ মিনিটের। যা জাতির অভ্যুদ্বয়ের স্মারক হিসেবে বিশ্বে নন্দিত। বঙ্গবন্ধু আহবান জানালেন ‘যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা’ করতে। বঙ্গবন্ধু ‘বাংলাদেশ’-এর স্বাধীনতার রূপরেখা ও করণীয় বলে গেলেন।
আশ্চর্য যে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণ কোনো কাগজ দেখে পড়েননি তিনি যেন সমস্ত বাঙালির হৃদয়ের কথা অবলীলায় বলে গেলেন। মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর ভাষণ শোনে মনন ও হৃদয়ে ধারণ করে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁর কথা কোটি কোটি কণ্ঠে উচ্চরিত হলো ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় সহ বিভিন্ন জনপদে, থানা, মহকুমা এবং জেলায় জেলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়তে থাকে।
বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি তখন আরো রক্ত দেব কিন্তু দেশকে শত্রুমুক্ত করে ছাড়ব’। বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করে বলে দিলেন, পূর্ব বাংলা থেকে আরো কোনো টেক্সের টাকা পশ্চিম পাকিস্তান যাবে না। আইন-আদালত অফিস চলবে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে। অর্থাৎ পূর্ব বাংলায় পাকিস্তান কার্যত অচল হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধুর দীপ্ত কণ্ঠে অগ্নিঝরা কথা শোনে সমস্ত বাঙালি এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। তিনি পূর্ববাংলার প্রশাসনিক ক্ষমতা চালানোর জন্য গ্রামে- গঞ্জে সংগ্রাম কমিটি গঠনের আহবান করেন। এমএল এ এবং এম পিএ গণ অর্থাৎ জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসন পরিচালনা করতে থাকেন। সেই দিন থেকে গণমানুষ সত্তর সালের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংগ্রাম কমিটি গঠন করে স্থানীয়ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত করতে থাকে। হাট-বাজার নিয়ন্ত্রণ করতো সংগ্রাম কমিটি। কেন্দ্রীয় কোনো আইন মানুষ অমান্য করে।
অবশেষে পাক সরকার গোপনে বাংলাদেশে সৈন্য ও অস্ত্র দিয়ে ভরতে থাকে। বীর বাঙালিরা ‘যার যার যা আছে’ তাই নিয়ে রাস্তায় নামে। পাকিস্তানী সৈন্যরা ২৫ মার্চ কালো রাত্রে ঢাকা শহরসহ সারা বাংলাদেশের বড়বড় নগরে বন্দরে গণহত্যা চালায়। হাজার-হাজার বাঙালিকে তারা রাতের আঁধারে হত্যা করে। এই রক্তের মধ্যেও নিরস্ত্র জনতা বুকে সাহস নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে যায়।
হায়নারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে যায়। জাতির পিতা অবস্থা বুঝেই ২৫ মার্চ রাতে ‘স্বাধীনতা’ ঘোষণার বাণী গোপনে কয়েক জায়গায় পাঠান। ২৬ শে মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বেতারের মাধ্যমে দেশ বিদেশের মানুষ জানতে পারে। অতঃপর আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ১০ এপ্রিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিয়ে ‘বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার ‘স্বাধীন মুজিবনগর সরকার’ গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল তারা দেশের মাটিতে শপথ বাক্য পাঠ করেন।
এই সরকারই পরিকল্পিত উপায়ে মুক্তি বাহিনী গঠন করে সম্মুখ যুদ্ধ পরিচালনা করেন। পরে মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধা এবং জনতা দেশ স্বাধীন করে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ায়। এই পতায় লেপ্টে রয়েছে আমাদের ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত।
লেখকের আরও লেখা-
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- বঙ্গবন্ধু, চা শিল্প এবং চা শ্রমিক
- ‘গাছ হেংলানেছে- পয়সা মিলেগা’ : চা শ্রমিক ও চা শিল্প
-
খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আইনিউজ/এইচএ
বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ