হেলাল আহমেদ
এমপি নির্বাচনে হিরো আলম : আছে পক্ষ আছে বিপক্ষ
হিরো আলমের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ডিশ ব্যবসা করে কিংবা কেউ কেউ বলেন চানাচুর বিক্রি করে। এরপর এক এক করে বিভিন্ন পেশায় নিজেকে জড়িয়েছেন হিরো আলম। খাটো, অসুন্দর চেহারা, শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে না পারলেও নিজেই একসময় বানাতে শুরু করেন চলচ্চিত্র, মিউজিক ভিডিও, গান। যেগুলোর মান নিয়ে নিঃসন্দেহে কথা বলবার আছে। কিন্তু, হিরো আলমের মতো করেই আমাদের মধ্য থেকে কয়জন এভাবে দাঁড়াতে পারবে? কতো জন হিরো আলমের মতো মুখ ফুটে সত্য কথা বলতে পারবেন? আর কতো জনই বা তার মতো এতো বিদ্রুপের পরেও থেমে না গিয়ে নিজের পথে অটুট থাকতে পারব আমরা?
আশরাফুল আলম ওরফে ডিশ আলম ওরফে হিরো আলম। এই মানুষটিকে বলা যায় বিগত দুই বছরে বাংলাদেশের একটি প্রধান সেনশনাল চরিত্র। বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিম্ন মানের বিভিন্ন ভিডিও, চলচ্চিত্র, গান, কবিতা বানিয়ে বিনোদন দিয়ে বর্তমানে যিনি দেশের মানুষের মুখে। সর্বশেষ আসন্ন বগুড়া উপ নির্বাচনে এমপি পদে প্রার্থী হয়ে দেশের রাজনীতিতেও পা রেখেছেন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
হিরো আলম এতোদিন সামাজিক যোগাযোগ ভিত্তিক বিনোদনের খোরাক থাকলেও নানান সময় আলোচনায় এসেছেন জাতীয়ভাবে। কখনো দেশের বড় বড় তারকারাও কথা বলতে ছাড়েন নি তাকে নিয়ে। রাজনীতিতে এমপি পদে প্রার্থী হবার পর নতুন করে জাতীয় অঙ্গনে আবারও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে হিরো আলম। কেউ বিষোদ্গার করে বলছেন- হিরো আলমের রাজনৈতিক যোগ্যতা কতোটুকু? আসলেই সে পার্লামেন্টে বসবার যোগ্য কিনা?
তবে কেউ কেউ আবার সময়ের পট পরিবর্তনে হিরো আলমের পক্ষেই কথা বলছেন। দেশের বর্তমান হালচিরত্র বিবেচনায় অনেকেই বলছেন- এতো এতো দুর্নীতিগ্রস্থ লোকেরা পার্লামেন্টে বসতে পারলে হিরো আলমের মতো একজন সাধারণ মানুষ এবং অনেকাংশেই যিনি কিনা আমাদের অনেক এমপিদের মতোই দুর্নীতিগ্রস্থ না তিনি পার্লামেন্টে বসলে সমস্যাটি কোথায়?
বলা যায়, হিরো আলমকে ঘিরে দেশে এখন দুইটি পক্ষ দেখা যাচ্ছে। একদল চাইছেন হিরো আলম যেন রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। আরেক দল অনেকটা প্রতিবাদের মতো করেই চাইছেন হিরো আলম নির্বাচনে লড়ুক এবং সম্ভব হলে জয়টাও ছিনিয়ে আনুক।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য (এমপি) । এই দুই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন হিরো আলম। কিন্তু ভোটার তালিকায় গরমিল থাকায় তার মনোনয়নপত্র প্রথমে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করেন। পরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে নিজের প্রার্থীতা ফিরে পান হিরো আলম। এরপর থেকেই রাজনীতির প্রসঙ্গে আলোচনায় আসতে থাকেন তিনি।
যে দুই আসনে হিরো আলম লড়ছেন সেখানে স্থানীয়ভাবে তার জনপ্রিয়তাও চোখে পড়ার মতো। সাধারণত নির্বাচনী প্রচারে যা দেখা যায় না তাই দেখা যাচ্ছে হিরো আলমের নির্বাচনী প্রচারে। ভোট চাইতে যখন যাচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা বুকে আগলে নিচ্ছে বাস্তব জীবনের হিরো আলমকে। অনেকেই নিজেদের সাধ্যমত খাওয়াচ্ছেন তাকে। এগুলো সাধারণ মানুষের হিরো আলমের প্রতি ভালোবাসা। যা সাধারণ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ভোট চাইতে গেলে দেখা যায় না বললেই চলে। এই দিক থেকে হিরো আলমের সাথে প্রচলিত রাজনৈতিক নেতাদের পার্থক্যটা ভাবার মতো।
সাধারণ মানুষদের হিরো আলমের প্রতি এই ভালোবাসা যদি মিথ্যা নাহয় আসন্ন নির্বাচনে হিরো আলম নির্বাচিত হবেন না তা একবাক্যে বলা বোধয় কিছুটা ভুল হবে। তবে হ্যাঁ, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়টি এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। যদি ওই দুই আসনে হিরো আলম জয় লাভ করেন হতে পারে এটিই হবে দেশের রাজনীতিতে এক নতুন সংস্কার।
২
লেখার শুরুতেই বলেছি হিরো আলমকে ঘিরে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুইটি পক্ষের অবতারণা হয়েছে। একটি পক্ষের বক্তব্য হিরো আলম রাজনীতির যোগ্য নয়। তারা তাদের বক্তব্যে বুঝাতে চাইছেন হিরো আলম একজন জুকার, আর তার মতো একজন জুকারকে জাতীয় সংসদে বসতে দেখা যেন মেনে নেয়া কষ্টকর।
হিরো আলমের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ডিশ ব্যবসা করে কিংবা কেউ কেউ বলেন চানাচুর বিক্রি করে। এরপর এক এক করে বিভিন্ন পেশায় নিজেকে জড়িয়েছেন হিরো আলম। খাটো, অসুন্দর চেহারা, শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে না পারলেও নিজেই একসময় বানাতে শুরু করেন চলচ্চিত্র, মিউজিক ভিডিও, গান। যেগুলোর মান নিয়ে নিঃসন্দেহে কথা বলবার আছে। কিন্তু, হিরো আলমের মতো করেই আমাদের মধ্য থেকে কয়জন এভাবে দাঁড়াতে পারবে? কতো জন হিরো আলমের মতো মুখ ফুটে সত্য কথা বলতে পারবেন?
হিরো আলম নিজেও জানেন তাকে নিয়ে লোকে হাসি-তামাশা করে। কিন্তু এতে তিনি ভড়কে গিয়ে থেমে যান নি। মানুষের করা হাসি-তামাশা-বিদ্রুপকে পুঁজি করে গড়ে ফেলেছেন নিজের সাম্রাজ্য। ততোদিনে হিরো আলম এমন একটি জায়গায় নিজেকে নিয়ে গেছেন যেখানে তিনি যাই করেন তা হয়ে যায় মানুষের বিনোদের খোরাক।
সম্প্রতি হিরো আলম গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সুন্দর একটি কথা বলেছেন। নির্বাচনে তার বিরোধী প্রার্থীর ব্যাপারে বলতে গিয়ে হিরো আলম বলেন- প্রত্যেকের নিজস্ব একটি জগত থাকে, যেখানে সে-ই থাকে। আমার জগতেও আমি রাজা। এখানে আমার বিপক্ষে কে আছে তা নিয়ে ভাবার টাইম আমার নাই।
আমার মনে হয় হিরো আলম যথার্থই বলেছেন। এই যে বললাম, হিরো আলমকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে, আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে এসব হিরো আলম নিজের ভাবনায় আনছেন না বা রাখছেন না। তিনি সবকিছুই যেন উপভোগ করছেন। নির্বাচনে হারলে একজন রাজনৈতিক নেতার যে লোকসান হয় হিরো আলমের সেই লোকসানের ভয়ও নেই। তার পেছনে নির্বাচনে কাওকে টাকা ঢালতে হচ্ছে না। তাই হিরো আলমের এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে দাঁড়ানোটা একটু অন্যরকম। বলা যায়, হিরো আলমকে দিয়েই বাংলাদেশের নোংরা রাজনৈতিক অঙ্গণে একটি সুন্দর পদ্মফুল ফোটার সম্ভাবনাই দেখা দিয়েছে। অথবা হয়তো হিরো আলম এতোদিন পর একদম উপযুক্ত স্থানেই (পার্লামেন্টে) নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন।
লেখক- হেলাল আহমেদ কবি এবং বার্তা সম্পাদক, আই নিউজ
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ