জসীম উদ্দীন মাসুদ
আপডেট: ১৪:৫০, ২৮ এপ্রিল ২০২৩
জাতীয় আইনগত সহায়তা; অসহায়দের আশার আলো
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা খ্যাতনামা রাজনীতিক ও আইনবিদ Alexander Hamilton আজ থেকে ২০০ বছর আগে বলেছিলেন, ‘‘The first duty of society is justice’’। প্রকৃত অর্থে সমাজ তথা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হলো মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। একটি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সমাজের দরিদ্র, নিপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারসমূহের নিশ্চয়তা বিধান করা।
সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসাবে একমাত্র আইন আদালতের মাধ্যমেই মানুষ তার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কিন্তু দারিদ্রতা বা অর্থের অভাবে কেউ যদি তার বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে না পারে অথবা আইনের আশ্রয় লাভ করতে না পারে তবে তার অন্য সব মৌলিক অধিকারগুলো ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
আইন কখনো মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করে না। মানুষে মানুষে এই ভেদাভেদ দূর করতেই বাংলাদেশ সরকার জাতীয় আইনগত সহায়তা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং এ সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালন শুরু করেছে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের ভিত্তি
আজ ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আইন ও বিচার বিভাগ এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার উদ্যোগে দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ, বিনামূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন।’ আইনগত সহায়তাপ্রাপ্তির অধিকার মূলত একটি সাংবিধানিক অধিকার। স্বাধীনতার মাত্র ১১ মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল সেখানে রয়েছে ন্যায়বিচারের স্পষ্ট নির্দেশনা।
সংবিধানের ১৯.১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে’। অনুচ্ছেদ ২৭ এ বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী’। সংবিধানের ৩৫.৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। প্রত্যেক নাগরিকের দ্রুত বিচার লাভের অধিকার থাকবে’।
ফিরে দেখা
জনগনকে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকার ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০’ কার্যকরের তারিখ অর্থাৎ ২৮ এপ্রিলকে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
জনগনকে সচেতন করার পাশাপাশি এর আরো প্রধান তিনটি উদ্দেশ্য হলো-
# দরিদ্র ও অসহায় জনগণের ন্যায় বিচারে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা,
# সরকারি আইনসেবা কার্যক্রমকে আরো কার্যকর, বিস্তৃত ও শক্তিশালী করা এবং
# সরকারি-বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আইন সহায়তা কার্যক্রম আরো গতিশীল ও কার্যকর করা।
২০১৩ সাল থেকে আইন সেবার মূলমন্ত্র সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে যথাযথ মর্যাদায় বাংলাদেশের সকল জেলায় উৎসবমূখর পরিবেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
দেশে আইনি সহায়তার বর্তমান অবস্থা
২০১২ সাল থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ১ লক্ষ ৫৭ হাজার ৩৭টি আইনি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ১ লক্ষ ৫ হাজার ৬৫০ জন দুঃস্থ ও অসহায় কারাবন্দীকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ সময়ে আইনি সহায়তা প্রদানকারী মামলার সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৪৪ হাজার ৪ শত ১৭টি, যার মধ্যে নিস্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৯ শত ৭৮টি।
বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ৮৯ হাজার ৬শত ৮৫টি, যেখানে নিস্পত্তিকৃত বিরোধের সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার ৬শত ৮৪টি এবং এখানে উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ২০ জন। ৬৪টি জেলায় ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে ১২৮ কোটি ৪১ লক্ষ ৯৩ হাজার ৯ শত ৩৬ টাকা।
আইনি সহায়তা প্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ৬ লক্ষ ৭২ হাজার ৮শত ১ জন অসহায় মানুষ। এ তো গেল ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের আইনি সহায়তার পরিসংখ্যান। এছাড়াও রয়েছে সুপ্রীম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস, ঢাকা ও চট্রগ্রাম শ্রমিক আইগত সহায়তা সেল, সরকারি আইনি সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টার ১৬৪৩০ কর্তৃক আইনি সহায়তার বিস্তৃত নেটওয়ার্ক।
সবকিছু মিলিয়ে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে ৩ লক্ষ ৫৩ হাজার ৬শত ৫৬টি আইনি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ সময়ে আইনি সহায়তা প্রদানকারী মামলার সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৬ শত ৩২টি, যার মধ্যে নিস্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬ শত ২০টি। বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির জন্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ৯২ হাজার ৯শত ৭৮টি, যেখানে নিস্পত্তিকৃত বিরোধের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৫শত ৮৮টি। ৬৪টি জেলায় ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে ১৩৪ কোটি ৯০ লক্ষ ৬ হাজার ৪ শত ৯৮ টাকা। আইনি সহায়তা প্রাপ্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ৯শত ২৯ জন অসহায় মানুষ।
আইনগত সহায়তার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল অনেক দেশে সরকারি খরচে আইনি সহায়তার পদ্ধতি চালু আছে। রাষ্ট্রের শতভাগ মানুষ যাতে আদালতের কাছে প্রতিকার চাইতে পারে, সেজন্যে এই ব্যবস্থা রাখা হয়। জাতিসংঘ ঘোষিত নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক সনদে (আইসিসিপিআর) বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি আইনের বা আদালতের আশ্রয় নিতে চান অথচ তার আর্থিক সামর্থ নেই, তবে ওই ব্যক্তিকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার জন্য সরকার বাধ্য থাকবে।
১৯৪৮ সালের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে অধিকার সম্পর্কিত যে ২৫টি অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হয়েছে তার ৬টি অনুচ্ছেদে সরাসরি বিচারের অধিকারের সাথে সম্পর্কিত, যার মূল বক্তব্য হচ্ছে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার নিশ্চিত করা।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা
প্রকৃত অর্থে ২০০০ সালের পূর্বে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সরকারীভাবে আইনগত সহায়তা প্রদানের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা ছিল না। অবশ্য কিছু কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যেমন-আইন ও সালিশ কেন্দ্র, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক, ব্লাস্ট, নারী প্রগতি, মহিলা পরিষদ, মানবাধিকার সংস্থা ইত্যাদি অসহায় ও অসচ্ছল মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়ে আসছিল। আইনগত সহায়তা দিতে বাংলাদেশ সরকারকে ২০০০ সাল থেকে সহযোগিতা করছে কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সী (সিডা)।
যেসব মামলায় সরকারি আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়:
ফৌজদারি মামলা
স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে স্বামীর বিয়ে, শারীরিক নির্যাতন, যৌতুক দাবী বা যৌতুকের জন্য নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ, পাচার, অপহরণ, ধর্ষণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক আটক বা গ্রেফতার।
দেওয়ানি মামলা
সন্তানের অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ ও দেনমোহর আদায়, বিবাহ বিচ্ছেদ, সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার, দলিল বাতিল, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, সম্পত্তির বন্টন বা বাটোয়ারা, ঘোষণামূলক মামলা এবং চুক্তি সংক্রান্ত মামলা।
যেসব বিষয়ে আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়
১. বিনামূল্যে ওকালতনামা সরবরাহ।
২. মামলা পরিচালনার জন্যে আইনজীবী নিয়োগ।
৩. আইনজীবীর ফি পরিশোধ।
৪. মধ্যস্থতাকারী বা সালিশকারীর সম্মানী পরিশোধ।
৫. বিনামূল্যে আদেশের রায় কিংবা অনুলিপি সরবরাহ।
৬. ডিএনএ টেস্টের যাবতীয় ব্যয় পরিশোধ।
৭. ফৌজদারি মামলায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যয় পরিশোধ। ৮. মামলার সাথে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ব্যয় পরিশোধ।
আইনি পরামর্শ
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার অধীন প্রত্যেকটা জেলায় লিগ্যাল এইড অফিস আছে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের দায়িত্বে আছেন একজন লিগ্যাল এইড অফিসার, যিনি সিনিয়র সহকারি জজ পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। এছাড়া সরকারি খরচে দরিদ্র বিচার প্রার্থীদের মামলা পরিচালনার জন্য প্রত্যেকটি জেলায় আইনজীবীগণের একটি প্যানেল রয়েছে। লিগ্যাল এইড অফিসার এবং প্যানেলভুক্ত আইনজীবীগণ প্রত্যেকটি জেলায় লিগ্যাল এইড অফিস ব্যবস্থাপনা ও সরকারি অর্থায়নে মামলা পরিচালনার পাশাপাশি বিনা খরচে দরিদ্র বিচার প্রার্থীগণকে আইনি পরামর্শ প্রদান করে থাকেন। আইনগত সহায়তা পেতে সুযোগ পাবে যারা: আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা ২০১৪ এর বিধি-২ এর আওতায় যে সব ব্যক্তিগণকে আইনি সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে সেটা দেখলেই বোঝা যায় দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্যে এই সংস্থা আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করছে।
যারা বিনামূল্যে এই আইনি সহায়তা পাবে
(১) অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি যাদের বার্ষিক গড় আয় সুপ্রীম কোর্টে আইনগত সহায়তার ক্ষেত্রে ১৫০০০০/-টাকা এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে ১০০০০০/- টাকার বেশি নয়।
(২) কর্মক্ষম নন, আংশিক কর্মক্ষম বা কর্মহীন কোন ব্যক্তি।
(৩) বার্ষিক ১,৫০,০০০/- টাকার ঊর্দ্ধে আয় করতে অক্ষম এমন মুক্তিযোদ্ধা।
(৪) কোন শ্রমিক যাহার বার্ষিক গড় আয় ১০০০০০/- টাকার বেশি নয়।
(৫) কোন শিশু।
(৬) মানব পাচারের শিকার কোন ব্যক্তি।
(৭) শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু।
(৮) নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে।
(৯) পারিবারিক সহিংসতার শিকার বা সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছেন এইরূপ কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি।
(১০) বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এমন কোন ব্যক্তি।
(১১) ভিজিডি কার্ডধারী দুঃস্থ মাতা।
(১২) দুর্বৃত্ত দ্বারা এসিড দগ্ধ নারী বা শিশু।
(১৩) আদর্শ গ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দ প্রাপ্ত ব্যক্তি।
(১৪) অসচ্ছল বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং দুঃস্থ মহিলা।
(১৫) প্রতিবন্ধী ব্যক্তি।
(১৬) আর্থিক অসচ্ছলতার দরুন আদালতে অধিকার প্রতিষ্ঠা বা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অসমর্থ ব্যক্তি।
(১৭) বিনা বিচারে আটক এমন ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অসচ্ছল।
(১৮) আদালত কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে বিবেচিত ব্যক্তি।
(১৯) জেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আর্থিকভাবে অসহায় বা অসচ্ছল বলে সুপারিশকৃত বা বিবেচিত ব্যক্তি।
কোথা থেকে আইনি সেবা পাওয়া যায়
জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টার থেকে
আইনি সেবা প্রদান অধিকতর বিস্তৃত ও সহজ করার লক্ষ্যে সরকার ২০১৬ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে টোল ফ্রি জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টার চালু করেছে। অফিস চলাকালীন এই কল সেন্টারের ১৬৪৩০ নম্বরে যে কোনো মোবাইল বা টেলিফোন থেকে ফোন করে আইনি পরামর্শ, আইনগত তথ্য, লিগ্যাল কাউন্সিলিং, মামলা করার প্রাথমিক তথ্য, সরকারি আইসি সেবা সম্পর্কিত যে কোনো পরামর্শ, সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে কোনো অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে অবহিতকরণ সম্পর্কিত সেবা পাওয়া যায়। এর জন্য কোনো কলচার্জ কাটা হয় না।
লিগ্যাল এইড অফিস থেকে
জেলা পর্যায়ের মামলা পরিচালনায় আইনগত সহায়তা লাভের জন্য ৬৪টি জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়। সুপ্রিমকোর্টে সরকারি আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত ‘সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের’ মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে সরকারি আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য সেখানকার শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের মাধ্যমে শ্রম আদালত বিশেষ কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়। চৌকি আদালতে সরকারি আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট চৌকি আদালত বিশেষ কমিটির কাছে আবেদন করতে হয়।
‘মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব’-এ কথা যেমন সত্যি আবার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানুষ যে কত অসহায় হয়ে পড়ে তার জ্বলন্ত উদাহরণ হলো কোন মানুষের মামলায় জড়িয়ে পড়া। মামলার প্রতিযোগিতায় যেখানে অনেক ধনকুবের নিঃস্ব হয়ে যান সেখানে দরিদ্র মানুষের অবস্থা তো আরো অসহনীয়।
অনেক দরিদ্র আবার শোষিত ও নির্যাতিত হওয়ার পরও অর্থের অভাবে অন্যায়কে নিয়ে মামলা থেকে দূরে থাকেন। দরিদ্র মানুষের চাহিদার এ জায়গাটি অভাবনীয়ভাবে পূরণ করছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা। সরকার অক্ষম, অসচ্ছল ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে একটি নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে এনে ইতোমধ্যে ২৮টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১৪২টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
আইনগত সহায়তা প্রদান এর অন্তর্ভূক্ত না হলেও অসচ্ছল ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্যে এখন সামাজিক নিরাপত্তার এক আলোকবর্তিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
তথ্যসূত্র
১. আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০, রেজিস্টার্ড নং ডি এ-১, বাংলাদেশ গেজেট, ২৬ জানুয়ারি, ২০০০
২. জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার প্রজ্ঞাপন, বাংলাদেশ গেজেট, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১১
৩. আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা, ২০১৪
৪. আইনগত সহায়তা প্রদান (আইনী পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) বিধিমালা, ২০১৫
৫. জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার ওয়েবসাইট: www.nlaso.gov.bd
লেখক : জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা ও সদস্য, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, মৌলভীবাজার
আইনিউজ/ইউএ
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ