অ্যাডভোকেট সাহিদা আক্তার
জাতীয় আইন সহায়তা দিবস `২৩
বিখ্যাত আফ্রিকান- আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী মার্টিন লুথার কিং বলেছেন, 'Injustice anywhere is a threat to justice everywhere' অর্থাৎ সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় আইন সহায়তা ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। একটি আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সমাজের দরিদ্র নিপীড়িত ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারসমূহের নিশ্চয়তা বিধান করা। এ কারণে আইনগত সহায়তা ও মৌলিক অধিকার একটি অপরটির পরিপূরক।আইন মানুষের কখনো ভেদাভেদ করে না ।
গরিব ও নিঃস্ব মানুষ যাতে আর্থিক দৈন্যতার কারণে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার থেকে কোনভাবে বঞ্চিত না হয় তার জন্য সরকারি আইন সহায়তা কর্মসূচি। সরকার আর্থিকভাবে অসচ্ছল সহায় সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ্য বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করার জন্য ২০০০ সালে 'আইনগত সহায়তা প্রদান আইন-২০০০' পাশ করে।
কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর এই আইনের বাস্তবায়ন কার্যক্রম স্থিমিত হয়ে যায়। ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠন করলে আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রম সক্রিয়করনের জন্য ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টার ১৬৪৩০ চালু করা হয়।
এই আইনের আওতায় সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার একই বছর 'জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা' নামে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৮লাখ ৭৯হাজার ৯২৯ জনকে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে।এছাড়া ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৬ জনকে আইনি পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
উক্ত সংস্থার অধীনে ইতোমধ্যে দেশের ৬৪ জেলায় জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে 'জেলা লিগ্যাল এইড' কমিটি গঠন করা হয়েছে।জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির পাশাপাশি সারাদেশের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে উক্ত সংস্থার তত্ত্বাবধানে সুপ্রিম কোর্ট কমিটি, জেলা কমিটি, উপজেলা কমিটি এবং ইউনিয়ন কমিটি আইনগত সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এছাড়া বিভিন্ন শ্রম আদালত ও চৌকি আদালত গুলোতেও সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে । প্রত্যেক জেলা জজ আদালত ভবনে 'জেলা লিগ্যাল এইড অফিস' স্থাপন করা হয়েছে।জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে এখন শুধু আইনের সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে এই অফিসগুলোকে 'এডিআর কর্নার বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
পক্ষসমূহের সম্মতির ভিত্তিতে লিগ্যাল এইড অফিসে বিকল্প উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রমের সাফল্য নির্ভর করছে ব্যাপক প্রচারণা ও জনমত সৃষ্টির উপর। এখনো এ দেশের জনগণের একটি অংশ দরিদ্র ও নিরক্ষর।
এই দরিদ্র নিরক্ষর জনগণ তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে ততটা সচেতন নয়। এসব মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হলে অথবা কোন আইনি জটিলতা পতিত হলে আর্থিক দৈন্যতা কিংবা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে তারা আইন আদালতের আশ্রয় নিতে পারে না।
এভাবে নানাবিধ আর্থ সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা দারিদ্রতা বা অপ্রাচুর্যের কারণে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ন্যায় বিচারে প্রবেশাধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে।
তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের জনকল্যাণমূলক আইনি সেবার বার্তা পৌঁছে দেয়া ও সরকারি আইনি সেবার বিষয়ে অধিকতর জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৩ সালের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৮ এপ্রিলকে 'জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং তখন প্রতিবছর দেশব্যাপী মেলা, রক্তদান কর্মসূচি, পথ নাটক, সভা, সেমিনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় 'জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস‘ পালন করা হয়।দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হলো,' ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ, বিনা মূল্যে আইনি সেবার দ্বার উন্মোচন’।
লেখক : জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা। অ্যাসোসিয়েট লিগ্যাল অফিসার, এইচসিএমপি, ব্র্যাক।
আইনিউজ/ইউএ
- খোলা জানালা বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। eyenews.news-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে eyenews.news আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ