আশরাফ আলী
বাবাকে নিয়ে স্মৃতিমূলক লেখা
আব্বা চাইতেন তাঁর জানাজা যেন আপন ছেলে পড়ায়
আব্বা মারা যাবার পনেরো দিন আগের কথা। হাসপাতাল থেকে বাড়ী আসছেন। ডাক্তার শ্বাস কষ্টের জন্য নিয়মিত নেবুলাইজার করার জন্য বলেছে। খুব সম্ভব প্রতি ছয় ঘণ্টায় একবার করে। এজন্য একটি নেবুলাইজার মেশিনের ব্যবস্থা করি। যাতে বাড়িতে নেবুলাইজার করা যায়। নেবুলাইজার মেশিনটি আমি যখন বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি তখন আব্বা বার বার আম্মাকে বলছেন কোথায় আছি, কোথায় পৌঁছেছি জিজ্ঞেস করার জন্য। আম্মাও বার বার কল দিচ্ছেন। আমি কল রিসিভ করে কোথায় আছি না আছি জানাচ্ছি। যখন বাড়ি গিয়ে পৌঁছি তখন সাথে সাথে নেবুলাইজার মেশিন ঠিক করে আব্বাকে নেবুলাইজার করাই। এরপর শ্বাসকষ্ট কিছুটা কমে।
পরদিন যখন বাড়িতে থেকে চলে আসবো তখন আব্বার কাছে গেলাম। তখন তিনি আমাকে কয়েকটি কথা বললেন; যে কথাগুলো শুনলে এখনও একা একা বসে কাঁদি। এই যখন লিখতে বসলাম তখনও চোখের পানি চলে আসছে। আব্বার কথাগুলো ছিল- ''আমি আর মনে হয় বাঁচবো না। জীবনে অনেক কিছু করেছি, ভুল হয়েছে। আমার জন্য দোয়া কইরো...।''
তখন আমি আব্বার পাশে বসে কাঁদছি আর শিশুদের মতো বারবার বলছি আব্বা তোমার কিছুই হবে না। তখন আমিও আব্বার কাছে মাফ চাই। এদিন আব্বার জন্য খুব মায়া লেগেছিল। তখনও বলতে পারিনি আব্বা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
এরপর আব্বা আমার মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেছিলেন আর বলছিলেন তোমার তো পরীক্ষা। আমি বলেছিলাম আমার পরীক্ষা আছে। বাড়ী থেকে মৌলভীবাজার গিয়ে পরীক্ষা দেব। তিনি তখন বলেছিলেন যাও। মনযোগ দিয়ে পড়ে পরীক্ষা দাও। টেনশনের দরকার নেই। আব্বা যখন আমাকে এই কথাগুলো ছাড়াও আরও কথা বলছিলেন তখন আম্মাও পাশে বসা। তিনি কাঁদছিলেন। এবং এই সময় তিনি আরও বেশ কিছু কথা বলেছিলেন আমাকে।
আব্বার ইচ্ছে ছিল তিনি মারা গেলে ওনার জানাযার নামাজ ছেলেদের মধ্য থেকে কেউ একজন পড়াবে। আব্বার সেই ইচ্ছেটা আমি পূরণ করেছিলাম। আব্বা মারা যাবার পর আমি কাঁদিনি। তিনি মারা যাবার পনেরো দিন আগের কথাগুলো বার বার মনে হচ্ছিল। ওনার দেওয়া উপদেশগুলো এখনও মনে পড়ে। ওগো আল্লাহ তুমি আমার প্রিয় আব্বাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান বানাও। আমিন।
আজ বাবা দিবসে পৃথিবীর সকল বাবারা বেঁচে থাকুক তাদের সন্তানদের মাঝে। আর আমার আব্বার মতো যারা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন সেই সমস্ত বাবারা ভালো থাকুক কবরে।
লিখেছেন- আশরাফ আলী
আই নিউজ/এইচএ
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ