গৌতম বুদ্ধ পাল
একজন কিশোরী পদ দেব; পর্বতশৃঙ্গের মতো উঁচু তার জ্ঞান
দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় থেকে বলছি, অবিশ্বাস হলেও, কল্পনার অতীত বা চিন্তা-চেতনা ছেড়ে চৈতন্যহীন হয়ে লিখছি, যে তিনি এত শীঘ্রই ইহলোক ত্যাগ করলেন! যার ছত্র ছায়া না পেলে হয়তো জীবনের অনেক আকাঙ্খা অপূর্ণ থেকে যেত। এমন একজন তিনি, যার দর্শন মাত্র প্রণাম আসে অন্তরের অন্তস্থল। গুরু তো তিনিই যিনি জ্ঞানের ছায়াতলে নিয়ে আসেন শিষ্যকে।
কিশোরী পদ দেব শ্যামল কী, কেন ও সমাজ, দেশ ও বিশ্ব পরিমণ্ডলে তার অবদান নতুন করে বলা অনস্বীকার্যের মতো। পর্বতশৃঙ্গের মতো উঁচু তার জ্ঞান। সনাতন সমাজকে কুসংস্কারচ্ছন্ন থেকে মুক্ত করা, হিন্দু বিবাহ আইনের মতো শত শত বিশাল কার্যে যার ভূমিকা রবে চিরন্তন।
সেই ২০০৮ সালে যখন প্রথম শ্রী গৌরবাণী পত্রিকায় নিজের নামে লেখা ছাপা হয়। প্রথম কোন জার্নালে নিজের নামের লেখা ছাপা হওয়ার অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করে বুঝানো তো নিদারুন অসম্ভব। তখন সম্পাদক নিজে বাবার মোবাইলে ফোন করে বলেছিলেন গৌতমকে বলো আমার সাথে দেখা করতে। সেই থেকে শুরু, কিন্তু তার পরিসমাপ্তি এখানে ঘটবে তা ভাবনারও অতীত যেন। একজন সাংবাদিক, ব্লগার ও লেখক হিসেবে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সবটুকু অবদান উনার।
২০১৬ সাল তখন সবে মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ্ডীতে প্রবেশ, টুকাটাক ওয়েব ডিজাইন ও প্রোগ্রামিংয়ের ধারনা নিয়ে শ্রী গৌরবাণী ডট কম ও শ্রী গৌরবাণী প্রাইভেট লিমিটেড এর মতো প্রতিষ্ঠানের নির্মানে সংযুক্ত হতে পারা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল দায়িত্ব পালনে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারার মতো আমার প্রতি উনার বিশ্বাস আজও মনকে চঞ্চল, উৎফুল্ল করে তুলে।
বিশ্বব্যাপী মাসিক শ্রী গৌরবাণী পত্রিকার নিবন্ধিত পাঠক প্রায় ১০ হাজারের বেশি ও অনিবন্ধিত পাঠকের সংখ্যা ৫০ লক্ষাধিক এবং বিশ্বব্যাপী অনলাইনে যার পাঠক সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি।
কিশোরী পদ দেব শ্যামল দেশে প্রথমবারের মতো সর্বস্তরের সনাতনীদের জন্য গীতা শিক্ষার আন্দোলন হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর শ্রীচৈতন্যদেব স্টাডিজ এর অধীনে "শিশু মঙ্গল বিদ্যানিকেতন" এর মতো প্রতিষ্ঠান শহর থেকে মফস্বলের বিভিন্ন মন্দিরে নির্মান করেন। যার প্রচারে শ্রী গৌরবাণী পত্রিকা অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। তারই ধারাবাহিকতায় কমলগঞ্জে প্রথম ২০১২ সালে পশ্চিম কুমড়াকাপন সার্বজনীন দুর্গাবাড়িতে গীতা স্কুল তথা "শিশু মঙ্গল বিদ্যানিকেতন" প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে কমলগঞ্জের সকল চা বাগানে গীতা শিক্ষা আন্দোলনের প্রসার ও প্রতিষ্ঠা ঘটে। এখন পর্যন্ত দেশব্যাপী যার সংখ্যা ৫শ'রও অধিক।
২.
কিশোরী পদ দেব শ্যামল উনাকে আমি শ্যামল আঙ্কেল বলে সম্বোধন করতাম। যে কোন সমস্যায় আমার দেয়া ফোন কল কখনো গুরুত্বহীন হয়নি। সাক্ষাতে তো ঘড়ির কাটা ঘুরবে কিন্তু আলাপচারিতা শেষ হবে না। কখনো নিরাশ হইনি, খালি হাতে ফিরিনি।
কিভাবে একজন লেখক, সাংবাদিক হওয়া যায় বা বই, ম্যাগাজিন, জার্নাল সম্পাদনা করতে হয় তা হাতে কলমে শ্যামল আঙ্কেল শিখিয়েছেন। তবে প্রশিক্ষণ নিয়ে কবে যে প্রশিক্ষক হয়ে গেছি তা বলতেই পারিনি।
পরিবার থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য যেকোন সামাজিক কর্মকান্ডে কোন অভিযোগ নেই। লেখালেখি করতে গিয়ে অনেক হেনস্তার শিকার হয়েছি, হচ্ছি। পরিবার ও শ্যামল আঙ্কেল শুধু একটি কথাই বলতেন, শুধু সাবধানতা অবলম্বন করে এগিয়ে যাও। বাবা-মায়ের পরে তিনি অবিভাবক, পরম গুরু ছিলেন।
ফলে, তাঁকে হারিয়ে আমি হারিয়েছি জ্ঞানের ভাণ্ডার, গুরু, অবিভাবক ও আর্দশবান মানুষকে। কিশোরী পদ দেব একজনই, তিনি এই হইলোক আর ফিরবেন না, জন্মও হবে না। উনাকে নিয়ে যতই লিখি না কেন তা কম পড়ে যাবে। নিশ্চই তাহার আত্মজীবনী প্রকাশ হবে।
তিনি অনেকদিন ধরে অসুস্থ, এই অসুস্থতার মাঝে প্রায়শই দেখা করতে হতো। আমার সাথে উনার শেষ সাক্ষাতের দিন, এই তো গত সপ্তাহে, দেখে মনেই হয়নি তিনি চলে যাবেন।
এডভোকেট, লেখক, সাহিত্যিক, গল্পকার, শ্রীগৌরবানী পত্রিকার সম্পাদক কিশোরী পদ দেব শ্যামল গত ১৩ নভেম্বর ২০২৩ ইং ইহলোক ত্যাগ করে পরলোক গমন করেন (দিব্যান্ লোকান্ স্ব গচ্ছতুঃ)। আমরা তাহার আত্মার শান্তি কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
লেখক: গৌতম বুদ্ধ পাল; কম্পিউটার প্রকৌশলী, লেখক ও শিক্ষক, সহযোগী প্রভাষক- মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ