অরুণ কুমার দাশ
আপডেট: ১৯:৫৪, ২৯ নভেম্বর ২০২৩
আভিজাত্য নাকি অভাব, সন্তানকে কোনটা শিখাবেন?
সন্তানকে আভিজাত্য নাকি অভাব কোনটা শিখাবেন? নেট দুনিয়ায় কয়দিন ধরে প্রচুর শেয়ার হচ্ছে এটা। কেউ আভিজাত্যের পক্ষে কেউবা অভাবের পক্ষে। আবার কেউ কেউ দুইটাই শেয়ার করছে। আসুন কয়েকটা ঘটনার আলোকে ব্যাপারটা আলোচনা করি।
ঘটনা-১:
মা শহরের নামকরা স্কুলের শিক্ষিকা, বাবা সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাদের দুইটি সন্তান। প্রথম সন্তান ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, দ্বিতীয় সন্তান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। টিনএজ বয়স অতিক্রান্ত হবার পরপরই মেয়েটি অন্য সম্প্রদায়ের একটি ছেলের সাথে অসম সম্পর্কে জড়িয়ে পরে। এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি শুরু হয়, মেয়েটি সুইসাইড এটেম্পও নেয়। এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি চলতেই থাকে। কিন্তু বাইরে থেকে এ পরিবারটিকে আমরা সুখী পরিবার বলেই মানি।
দূর্নীতি করে বাড়ি, গাড়ি বানালে আমরা বলি প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। সমাজের সকল কর্মে, ধর্মে তাদের চেয়ারে নিয়ে বসাই! বাবা মা, পরিবারের প্রতি ন্যূনতম দায়্যিত্ববোধ না থাকা ব্যক্তিটিকে আমরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, সামাজিক কর্মে সভাপতি/ সম্পাদকের দায়িত্ব দেই। এই যে স্ববিরোধী কার্যক্রম এটা কি অভাব কিংবা আভিজাত্য থেকে এসেছে?
ঘটনা-২:
মধ্যবিত্তের পরিবার, ভাল ছেলে দেখে পরিবারটি বড় মেয়ের বিয়ে দিলেন। বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যে মেয়েটিকে মানসিক রোগী বলে ছেলের পরিবার বাবার বাড়ি দিয়ে গেল এবং ফিরিয়ে নিতে অপারগতা প্রকাশ, পরিণতিতে মামলা মোকদ্দমা চলছে।
ঘটনা-৩:
ক্লাস এইটে পড়া একটা মেয়ে রাতের পর রাত মোবাইলে কথা বলে অপরিচিত একটা ছেলের সাথে, পড়ালেখায় মন নেই, বাবা মায়ের কোন কথা শুনে না, বাবা-মাকে তুই তুকারি করে। ফোন লুকিয়ে রাখলে ঘরে চলে অকথ্য কথন। লোক লজ্জায় বাবা মা কাউকেই এসব শেয়ার করতে পারেন না।
ঘটনা-৪:
দুর্গাপূজায় মদ খাওয়াটাকে অহংকারের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া একটা বন্ধুকে যখন নেশা না করা আরেকটা বন্ধু আক্ষেপের সুরে বলে তোর মুখে তো গন্ধ করছে! 'কি করবি এগুলো খেলে তো একটু আধটু গন্ধ করবেই।' বলে তাচ্ছিল্য করে তখন মদ না খাওয়া বন্ধুটি লজ্জায় ভাবে মদ খাওয়াটাই অহংকার?
ঘটনা-৫:
মেয়ে দুটি ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং আইনের মাধ্যমে মা-বাবার থেকে মুক্তি চায়। মা আদালত প্রাঙ্গণে মেয়ের পায়ে ধরছে ছেড়ে না যাবার জন্য? অবিশ্বাস্য এ দৃশ্য ও হয়তো অনেকে দেখেছেন!
পরিচিত লাগছে ঘটনাগুলো? কাছাকাছি এরকম অনেক ঘটনার স্বাক্ষী হয়তো আপনি নিজেই। উপরের ঘটনাগুলো সত্য এবং আমি যা লিখেছি তার থেকেও হয়তো তীব্র ঘটনা লুকায়িত আছে এসব পরিবারে। আমাদের অনেকের আশেপাশে এর থেকে আরো মারাত্বক মারাত্বক সব ঘটনা আছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
সন্তানকে আভিজাত্য নাকি অভাব কোনটা শেখাবেন যারাই শেয়ার দিচ্ছেন বা দ্বিধাদ্বন্দে আছেন সবার উদ্দেশ্যই সৎ। নিজের সন্তানকে সমাজে একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ হিসেবে দেখতে চান, সফল মানুষ হিসেবে দেখতে চান।
আপনাদের এই চাওয়াকে সম্মান রেখেই বলছি সন্তানকে আভিজাত্য বা অভাব কোনটাই শেখাতে হবে না যদি আপনি আপনার সন্তানের চরিত্র নির্মাণ করতে পারেন তবেই আপনার উদ্দেশ্য পূরণ হবে। সমাজে আপনাকে মাথা নিচু করে হাঁটতে হবে না, বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার চিন্তা মাথায় আসবে না।
সর্ব সম্মুখে সিগারেট খাওয়া একটা প্রজন্ম নিজেদের সিগারেট খাওয়াকে অধিকার মনে করে, নেশা করাকে বলে এটা তো বিদেশীরা পানীয় হিসাবে পান করে আমরা খেলে কি দোষ? বড়দের সাথে বেয়াদবী করাকে বলে স্মার্টনেস। শিক্ষকদের বন্ধু পর্যায়ে নামিয়ে এনে শিক্ষদের সাথে টাট্টা ইয়ার্কি মারাকে বলে এটাই সঠিক!
-
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত, আরব বিশ্বের ফাটল ভাঙবে কি?
-
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয়: মানবতার লজ্জা
দূর্নীতি করে বাড়ি, গাড়ি বানালে আমরা বলি প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি। সমাজের সকল কর্মে, ধর্মে তাদের চেয়ারে নিয়ে বসাই! বাবা মা, পরিবারের প্রতি ন্যূনতম দায়্যিত্ববোধ না থাকা ব্যক্তিটিকে আমরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে, সামাজিক কর্মে সভাপতি/ সম্পাদকের দায়িত্ব দেই। এই যে স্ববিরোধী কার্যক্রম এটা কি অভাব কিংবা আভিজাত্য থেকে এসেছে?
এর একটাই সমাধান; সন্তানের চরিত্র নির্মাণ করুন, সন্তানকে ন্যায়-অন্যায়, কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল, সেটা শেখান। ইতিবাচক আচার ব্যবহারে, ন্যায়পরায়ণতায়, বিবেকবোধে অভিজাত হতে পারে সে শিক্ষা দেন। অহংকারে, অন্যায় কর্মে, লজ্জাহীনতায়, দূর্ণীতিতে অভাবী হয় সে শিক্ষা মগজে স্থায়ী করুন। অর্থ্যাৎ, আপনার সন্তান জ্ঞান আহরণে, অন্বেষণে অভিজাত হোক সে পাঠ দেন। মূর্খতায় অভাবী হোক সে পাঠ দেন। তাহলেই একমাত্র আমাদের সবার সবার উদ্দেশ্য সফল হবে। বর্তমান সময়ে সন্তানের চরিত্র নির্মাণ কঠিন থেকে কঠিনতম কাজ এটা বলা যায় অনায়াসেই।
লেখক- অরুণ কুমার দাশ, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং সংস্কৃতিকর্মী
আই নিউজ/এইচএ
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ