নয়ন দেব
নতুন পাঠ্যক্রমের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক নিয়ে কিছু কথা (১ম পর্ব)
বিগত কয়েকমাস ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। যেগুলো দেখলে আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মানুষজন ধারণা করছেন শিক্ষাব্যবস্থা বুঝি ধ্বংস হয়ে গেলো, আমাদের সন্তানেরা বুঝিবা শিক্ষার নামে বিদ্যালয়ে গিয়ে হাঁস, ব্যাঙ হয়ে যাচ্ছে! অথচ যারা এগুলো শেয়ার দিচ্ছেন তাদের ৯৯ শতাংশ এটাই জানে না যে, একটি শিক্ষাব্যবস্থায় কোন শ্রেণির শিখন অভিজ্ঞতা কেমন হবে? বা এটি কিংবা কোন বইয়ের কিংবা কোন বিষয়ের শিখন অভিজ্ঞতা।
তারা শুধু একটাই জিনিস জানেন এমন শিক্ষাব্যবস্থা যেখানে শুধু পোষা ময়নার মতো গেলা আর পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া কেউ কিছু শিখবে না, পড়াশোনা একটা যন্ত্রণাদায়ক জিনিস, এ যন্ত্রণা না নিয়ে শেখা উচিত হবে না বা শেখা যাবে না!
নতুন কারিকুলামে এমন কিছু চটকদার বিষয়বস্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য একদম যেমন নতুন তেমনি অভাবনীয়ও। অভাবনীয় এই কারণে যে, আমরা এতোদিন যে পাঠ্যক্রমে আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দিয়ে এসেছি তার থেকে বর্তমান পাঠ্যক্রম অনেকটাই শিক্ষার্থীসুলভ। এই শিক্ষার্থীসুলভ ব্যাপারটিকেই অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ করে ছড়াচ্ছেন। তারা এগুলোকে শিক্ষার্থীর জন্য বরং হাস্যকর শিক্ষা বলেও দাবি করছেন! অথচ, আমরা একটি কথা প্রায় সকলেই মুখেমুখে আওরাই যে, শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা হওয়া উচিত শিশুবান্ধব।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই এরাই আবার বিসিএস এর সিলেবাসে মুখস্থ কেনো করতে হয় তা নিয়ে গালি দেয়। ইতিহাসের বইয়ে ইখতিয়ার বিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি এর নাম কেনো মুখস্থ করতে হবে এইটা নিয়েও তারা গালিগালাজ করত একসময়।
আপনারা যারা জানেন না তাদের কিছু ধারণা দেই। প্রায় প্রতিটি বিষয়ের জন্য অনুশীলন বই ও অনুসন্ধানী বই নামে দুইটি বই আছে। অনুসন্ধানী বই অনেকটাই আগের বইয়ের মত। ঝামেলা হচ্ছে অনুশীলনমূলক বইয়ে। এইটাতে কয়েকটি করে সেশন আছে প্রতিটি অধ্যায়ে বা শিখন অভিজ্ঞতায়। এগুলো একদমই নতুন। যা বলতে গেলে প্রথমবারের মত আনা হয়েছে এবং তা পরীক্ষামূলক।
বাংলা, ইংরেজি এবং গনিত এই তিন বিষয় এর পাঠ্যক্রম যা আছে তা আগের থেকে আপগ্রেডেড এবং অনেক ভালো মানের কন্টেন্ট। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে যেগুলো আমাদের হঠাৎ করে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবে, জীবনে চলতে গেলে এইসব Soft skills খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন অনেকেই বলবেন এগুলো তো এমনিতেই শিখে বাচ্চারা। না ভাই এমনিতে শিখে না আমি এখনও অনেক মানুষকে পাই যারা তার জীবনের ক্রান্তি লগ্নে। কিন্তু এখনও একটা ডিম ভাজতে পারে না কিংবা আলু ভর্তা করতে পারে না। শুধু আলু ভর্তাই ভাইরাল হলো কিন্তু স্কুলে র্যাম্প বানানো কিংবা প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরকে কীভাবে আপন করে নিতে এই নিয়ে যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে সেগুলো ভাইরাল হয় না, হবেও না।
নতুন কারিকুলামে নবম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীরা এখন পাইথন শিখবে যেইটার নাম আমি শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে। আর হ্যাঁ, নতুন কারিকুলামে নবম শ্রেনীতে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে একটা অংশ আছে, যেখানে একটা সেশনে শেখানো হয় কীভাবে সোশাল মিডিয়ায় ভুয়া খবর কিংবা ভুয়া নিউজকে যাচাই বাছাই করতে হয় এবং শেয়ার করার আগে দশবার চিন্তা করতে হয় তা নিয়ে স্টাডি করতে হয়।
নতুন কারিকুলামে এমন কিছু চটকদার বিষয়বস্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য একদম যেমন নতুন তেমনি অভাবনীয়ও। অভাবনীয় এই কারণে যে, আমরা এতোদিন যে পাঠ্যক্রমে আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দিয়ে এসেছি তার থেকে বর্তমান পাঠ্যক্রম অনেকটাই শিক্ষার্থীসুলভ। এই শিক্ষার্থীসুলভ ব্যাপারটিকেই অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ করে ছড়াচ্ছেন। তারা এগুলোকে শিক্ষার্থীর জন্য বরং হাস্যকর শিক্ষা বলেও দাবি করছেন! অথচ, আমরা একটি কথা প্রায় সকলেই মুখেমুখে আওরাই যে, শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা হওয়া উচিত শিশুবান্ধব। নতুন পাঠ্যক্রমে সেটিই করা হয়েছে। কিন্তু, সেটি মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে আমাদের এখানকার শিক্ষক, অভিভাবক এমনকি সাধারণেরও!
চলবে...
নয়ন দেব, লেখক, রয়েল সাইন্টিফিক পাবলিকেশন্স
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ