শ্যামলাল গোঁসাই
মানুষের জীবন কি ভুষিমালের জঞ্জাল?
মানুষের জীবন কি ভুষিমালের জঞ্জাল?
আপনাকে বা আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আমাদের জীবন পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা কতো সংখ্যক বিষয়কে আমাদের সাথে জড়িয়ে নিয়েছি। তাহলে, এর পরিমাণ কতোটা দাঁড়াবে? এই ধরুন, সকালে ঘুম থেকে ওঠে দাঁত মাজার জন্য ব্রাশ, টুথপেস্ট লাগে। মুখ ধৌত করতে ফেসওয়াশ, সাবান, লাগে। চুল পরিষ্কার করতে শ্যাম্পু, তৈল, চিরুনি লাগে। আবার রান্নাঘরে খাবার তৈরির জন্য ডেগ, ডেগচী, চামচ, গ্যাস, ছুরি, দা। ঘরে হাওয়া সুবিধার জন্য পাখা, পানির জন্য মটর, পোশাক, জুতা, স্বর্ণালংকার, ব্যাংকের একাউন্ট......
এভাবে হিসেব করলে পরিমাণটা এতো দীর্ঘ হবে যে, আপনি নিজেও হয়তো দেখে চমকে যাবেন! উল্টো প্রশ্ন করতে পারেন- 'সত্যিই কি আমি এতোকিছু ব্যবহার করি?'
আমাদের সবসময় চিন্তা থাকে আমাদের ব্যবহার্য বস্তুকে ঘিরে। আমরা সবসময় ওইসবকে নিয়ে ভাবতে থাকি। এগুলো আমাদেরকে সংকীর্ণ করে তোলে বলে আমার বিশ্বাস। মনোজগতের বিস্তৃতি কমিয়ে দেওয়া যাকে বলে। তাছাড়া, সারাজীবন আমরা যেসব জিনিস ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করি একটা সময় এর সবকিছুই ফেলে যাই। এগুলো তখন অকার্যকর হয়ে যায়। মানুষের জীবনের লক্ষ্য কী সেটা হয়তো বুঝতে পারা যাবে যখন কারো কাছে এইসব কিছু অকার্যকর হবে এবং তিনি কার্য-কারণের এক নতুন মাত্রা আবিষ্কার করবেন।
একজন মানুষের জীবনের ব্যবহার্য জিনিসের তালিকা দেখলে মনে হয়, আমাদের জীবনটি শুধুই নানা ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্তু জমানোর লক্ষ্যে সৃষ্ট! আমরা অতিরিক্ত এতোকিছুর সাথে জীবনকে পরিচালিত করছি প্রতিনিয়ত, যে এর সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি অনেকটা মহাকর্ষের বিস্তৃতি বাড়ার সাথে সাথে শক্তিগুলোর বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধির মতো। আমাদের কর্মময় জীবনের ব্যাপ্তি আর ঘটনা যতো বাড়ে আমাদের বিশৃঙ্খলা ততো বেড়ে যায়। এসব বিশৃঙ্খলার মধ্যে আমরা ক্ষাণিকের একটি শৃঙ্খল অবস্থার সন্ধান পেতে পারি। কিন্তু, সেটাও ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ, পুরোপুরি শৃঙ্খলিত নয়। এর কারণ, আমাদের ব্যবহার্য জিনিসের পরিমাণ। আমরা আমাদের জীবন নানাবিধ জিনিসের ব্যবহারে সাজিয়ে তুলি বটে; কিন্তু, এর পরিমাণ এতো বেশি থাকে যে এর রাশ আমাদের হাতে থাকে না শেষ পর্যন্ত।
বিষ্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, জীবনের মতো মূল্যবান একটি আশ্চর্য সময়কাল আমরা ব্যয় করি এই ব্রাশ, টুথপেস্ট, হাড়ি-পাতিল, হাওয়া খাওয়ার পাখা ইত্যাদি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে ওঠার জন্য। আমরা বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই- আমাদেরকে শেখানো হয় কতো টাকায় কতো শতাংশ সুদ দিলে কতো অঙ্কের লাভ হবে। কিংবা, একটি সাবান কোম্পানির সাবান কীভাবে আরও বেশি বিক্রয়যোগ্য করে তোলা যাবে, কোন পথে হাঁটলে স্বল্পসময়ে বেশি উপার্জন হবে। আমাদেরকে কখনো শেখানো হয়না কিংবা আমাদের মনেও এ প্রশ্নের উদয় হয় না- কীভাবে একটি তারকা মরে গিয়ে আরেকটি তারকার সৃষ্টি হয়। অদ্ভুত এ মহাজগতে কেন সময়ের সম্প্রসারণ সবদিকে এক হারে হচ্ছে! কেন আমরা অতীত মনে রাখতে পারি কিন্তু ভবিষ্যৎ নয়?
আমাদের সবসময় চিন্তা থাকে আমাদের ব্যবহার্য বস্তুকে ঘিরে। আমরা সবসময় ওইসবকে নিয়ে ভাবতে থাকি। এগুলো আমাদেরকে সংকীর্ণ করে তোলে বলে আমার বিশ্বাস। মনোজগতের বিস্তৃতি কমিয়ে দেওয়া যাকে বলে। তাছাড়া, সারাজীবন আমরা যেসব জিনিস ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করি একটা সময় এর সবকিছুই ফেলে যাই। এগুলো তখন অকার্যকর হয়ে যায়। মানুষের জীবনের লক্ষ্য কী সেটা হয়তো বুঝতে পারা যাবে যখন কারো কাছে এইসব কিছু অকার্যকর হবে এবং তিনি কার্য-কারণের এক নতুন মাত্রা আবিষ্কার করবেন। তাঁর আগ পর্যন্ত যে জীবন আমাদের, সেটাকে ভুষিমালের জঞ্জাল বললে ভুল কিছু বলা হবে না। শুধু এটাই যে, কারো দোকান শৃঙ্খলিত আর কারো দোকান বিশৃঙ্খলায় ভরা।
লেখক- শ্যামলাল গোসাঁই, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ