ইমতিয়াজ মাহমুদ
আমি প্রীতি ওরাং হ ত্যা র বিচার চাই
চা বাগানের শ্রমিকদের জীবন অনেক কঠিন। ওরা একটা অন্যায্য মজুরীতে কাজ করতে বাধ্য হয়, এই দেশের সকল নাগরিকের মতো সকল অধিকার ওরা পায় না। প্রজন্মের পড় প্রজন্ম ধরে প্রায় ক্রীতদাসসুলভ অমানবিক জীবন যাপন করে প্রায় প্রতিটা চা শ্রমিক পরিবার। সেইরকম একটি পরিবার থেকে একটি শিশু ঢাকায় এসেছিল গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করতে। কাজ নিয়েছিল একজন সাংবাদিকের বাসায়। সাংবাদিক মহোদয় একটি শীর্ষস্থানীয় কাগজের সম্পাদকীয় বিভাগের উচ্চপদে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক।
সেই শিশুটি- প্রীতি উরাং ওর নাম- ওর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। এই মৃত্যুটি নিয়ে খুব কার্যকর কোন ব্যবস্থা যে নেওয়া হয়েছে সেটা দেখা যাচ্ছে না। কোন মামলা হয়েছে কি-না আমি জানিনা। হলেও কিরকম মামলা হয়েছে সেটাই বা কে জানে। এরকম ঘটনায় অনেক সময় অপমৃত্যুর মামলা বা ইঊডি মামলা করে পরবর্তীতে সেটা দায়াসারা তদন্ত করে ঘটনা চাঁপা দেওয়া হয়। যাদের বাসায় ঘটনা ঘটে ওরাও ভিক্টিমের দরিদ্র পিতা-মাতাকে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। অনেক সময় পোষ্ট মরটেমও হয় না। গরীবের শিশু কন্যা, ওর জন্যে কে বিচার চাইবে!
আপনাদের উঁচু উঁচু ভবনে এইরকম একজন প্রীতি ওরাং এসেছিল পেটের দায়ে কাজ করে খাওয়ার জন্যে। এই বিশাল সমৃদ্ধ নগরীর স্বচ্ছল আনন্দময় জীবন ওর জন্যে ছিল না। এই নগরের বড় বড় সব স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ওর জন্যে ছিল না। এইখানের সিনেমা হল, শিল্পকলা একাডেমী আপনাদের মহান গ্রন্থমেলা এইসবের কিছুই সে চায়নি। সুউচ্চ অট্টালিকায় একটি গৃহে আবদ্ধ থেকে নিতান্ত দুই বেলা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে নিয়োজিত ছিল মেয়েটা।
এই ঘটানতেও সেরকম কিছু হচ্ছে কিনা সেইটা কে দেখবে? সাংবাদিকরা কি সাংবাদিকের বাসার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় করবে? আমাদের দেশে পেশাজীবীরা এক অদ্ভুত নীতি অনুসরণ করে- অনেকটা কাক কাকের মাংস খায় না এধরনের। আমাদের পেশায়ও, অর্থাৎ উকিলদের মধ্যেও, এরকম প্রবণতা মাঝে মাঝে দেখা যায়। ডাক্তার সাহেবেরা নানা সময় একাট্টা হয়ে যান পেশাগত নীতি ভুলে সহকর্মীদের সমর্থনে। আমাদের সাংবাদিকরা প্রাথমিকভাবে ঘটনাটা রিপোর্ট করেছেন বটে, এরপর কোন ফলোআপ করবেন কি-না কে জানে!
আপনি দেখুন। তেরো বছর বয়সের একটা শিশু, নিতান্ত অভাবের তাড়নায় ওর পিতামাতা ওকে ঢাকায় পাঠিয়েছে অজানা অচেনা একটা পরিবারে কাজ করার জন্যে। দিনরাত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতো মেয়েটা। জীবনসংগ্রামে পরাজিত কোন মানুষ তো সে হওয়ার কথা নয়- বেঁচে থাকাটা ওর কাছে প্রতিদিনের একটা সংগ্রাম আর সেই সংগ্রামে সে লড়ে যাচ্ছিল। কি পরিস্থিতিতে এইরকম একজন সংগ্রামী কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে এটা দেখা এবং এই মৃত্যুর জন্যে যদি গৃহকর্তার বা গৃহকর্ত্রীর কোন দায় থাকে ওদের শাস্তি নিশ্চিত করা কি এই রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়?
আপনাদের উঁচু উঁচু ভবনে এইরকম একজন প্রীতি ওরাং এসেছিল পেটের দায়ে কাজ করে খাওয়ার জন্যে। এই বিশাল সমৃদ্ধ নগরীর স্বচ্ছল আনন্দময় জীবন ওর জন্যে ছিল না। এই নগরের বড় বড় সব স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ওর জন্যে ছিল না। এইখানের সিনেমা হল, শিল্পকলা একাডেমী আপনাদের মহান গ্রন্থমেলা এইসবের কিছুই সে চায়নি। সুউচ্চ অট্টালিকায় একটি গৃহে আবদ্ধ থেকে নিতান্ত দুই বেলা খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে নিয়োজিত ছিল মেয়েটা। এই মেয়ে আত্মহত্যা করবে এই কথা আমি মানি না। সংগ্রামী চা শ্রমিকের সংগ্রামী কন্যা ছিল প্রীতি- আপনাদের মতো ললিতলবঙ্গলতিকা ধরনের নরম মেয়ে নয়।
এটা একটা হত্যাকাণ্ড। আমি প্রীতি ওরাং হত্যার বিচার চাই। ন্যায্য বিচার চাই। যারা যারা এই হত্যার জন্যে দায়ী ওদের সকলের শাস্তি চাই। কঠোর শাস্তি চাই। বিচার চাই। বিচার কেন করবেন না?
লেখক- ইমতিয়াজ মাহমুদ, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ