শ্যামলাল গোসাঁই
প্রসঙ্গ `শিক্ষা সফর` এবং `পিকনিক`
প্রসঙ্গ `শিক্ষা সফর` এবং `পিকনিক`।
'শিক্ষা সফর' এবং 'পিকনিক' শব্দ দুইটি একে অন্যের সমার্থক নয়। এই দুই শব্দ দিয়ে এক জিনিস বোঝায় না, এটা শিক্ষকদের স্পষ্ট হতে হবে। সকল 'শিক্ষা সফর'ই 'পিকনিক' কিন্তু, সকল 'পিকনিক' 'শিক্ষা সফর' নয়। এটা আমদেরকে যেমন বুঝতে হবে শিক্ষার্থীদেরও বোঝাতে হবে। কেননা, দেশে এখন 'শিক্ষা সফরে'র ব্যানার ঝুলিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীই যাচ্ছেন 'পিকনিকে'। আর এ কাজটি সবথেকে বেশি হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে। অনেক শহুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও এহেন কাজ করা হচ্ছে বর্তমানে।
প্রাইভেট স্কুলগুলোর কথা বলতে পারব না। তবে, আমার আশেপাশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে 'শিক্ষা সফর' নামের 'পিকনিক' আয়োজন হতেই দেখে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। 'শিক্ষা সফর' এবং 'পিকনিক' বিষয় দু'টিকে গুলিয়ে আদতে এসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাওয়া বদলের আয়োজনে। যেখানে সাউন্ড সিস্টেম থাকে, গানের আয়োজন থাকে, ছবি তোলার জন্য ছবি কর্ণার থাকে। থাকে না শুধু কোনো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা লাভের কোনো ব্যবস্থা। ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরের মূল উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারছে না। আমি মনে করি, এ বিষয়ে আমাদের অভিভাবকদের কথা বলা উচিৎ। শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা উচিৎ 'শিক্ষা সফর' এবং 'পিকনিক' এর পার্থক্য কোন জায়গায়?
'পিকনিক' একটি ইংরেজি শব্দ। এটি ক্রিয়াপদ (verb). বিপরীতে 'শিক্ষা সফর' একটি বাংলা শব্দ। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Study Tour. এটি একটি বিশেষ্য পদ (noun). দুইটি শব্দ দুই ভাষার। এদের মর্মার্থও আলাদা। 'পিকনিক' শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দগুলো আমরা বলতে পারি বনভোজন, চড়ুইভাতি, টুফাটুফি (সিলেটি শব্দ) ইত্যাদি। ইংরেজিতে 'পিকনিক' শব্দের অনেকগুলি সিনোনিয়াম আছে। সেগুলো হচ্ছে- outing, garden party, outdoor meal ইত্যাদি। ইংরেজি 'পিকনিক' শব্দটির উৎপত্তি ফ্রান্স শব্দ 'pique-nique' থেকে। শব্দটির উৎপত্তি ধরা হয় ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়। সে সময় ফ্রান্সে এ শব্দটি দিয়ে এমন সব আয়োজনকে নির্দেশ করা হতো যেখানে অংশগ্রহণকারীরা কোনো একটি জায়গায় সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেরাই রান্নাবান্না করে খাবার খেতেন। ধারণা করা হয় এখান থেকেই 'পিকনিক' শব্দটির যাত্রা শুরু। বর্তমানেও 'পিকনিক' শব্দ দিয়ে এমন কোনো কিছুকেই আমরা বুঝাতে চাই, যেখানে পরিবার-পরিজন বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে কোনো একটি জায়গায় গিয়ে দলবেঁধে নিজেরা রান্নাবান্না করে খাওয়াদাওয়া করি এবং আনন্দ করি।
আমি শুনিনি, আমাদের কোনো বিদ্যালয় থেকে মনিপুরী পাড়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ভাষা পর্যবেক্ষণের জন্য। শুনিনি লাউয়াছড়ায় একদল শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসা হয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। অথবা শুনিনি কোনো স্কুল থেকে শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে, শিক্ষার্থীদেরকে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী বীরদের সম্পর্কে জানাতে। এক দশক আগেও স্কুলগুলোর 'শিক্ষা সফরে'র এই চিত্র ছিল না।
অন্যদিকে 'শিক্ষা সফর' বা 'Study Tour' হচ্ছে এমন একটি সফর যাতে একদল শিক্ষার্থী বা একদল মানুষ কোনো একটি বিষয়ে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা লাভ করেন। যেমন তাঁরা এমন একটি অঞ্চলে সফর করলেন যে অঞ্চলের ভাষা তাঁরা বইয়ে পড়েছেন কিন্তু প্রত্যক্ষ করেন নি। তাঁরা সেই অঞ্চলে গিয়ে সেই ভাষাভাষী মানুষের সাথে মিশে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। এটিকে বলে 'শিক্ষা সফর'। সোজা বাংলায় যে সফরে কিছু শেখানো হয়। স্কুলের শিক্ষা সফরের ক্ষেত্রে এই শেখানোর দায়িত্ব থাকে শিক্ষকের।
Study Tour- শব্দটির উৎপত্তিও আঠারো শতকেই। ধারণা করা ১৮৭০ এর দশকে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করে আমেরিকার সেন্ট লুইস (মিসৌরি) থেকে প্রকাশিত 'গ্লোব ডেমোক্র্যাট' নামক একটি স্থানীয় পত্রিকায়। পত্রিকাটিতে কোনো বিষয়ে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা লাভের জন্য বিশেষ অধ্যয়ন ব্যবস্থা বোঝাতে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল। Collins Dictionary- তে 'Study Tour' শব্দটির ব্যাখ্যায় লিখা আছে, ''A trip or tour taken by a group of people in order to study something...'' অর্থাৎ, শিক্ষা সফর এমন একটি উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা যাতে গিয়ে একদল শিক্ষার্থী/মানুষ কোনো বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। আরেকটু বাড়িয়ে বললে, 'ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা' লাভ করেন। অর্থাৎ, আমরা দেখছি যে শিক্ষা সফরে যাওয়ার আগে একটি বিষয় নির্ধারণ করে যেতে হয়। যে বিষয়ে তাঁরা 'expedition' করবে, ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা লাভ করবে। সুতরাং, বুঝা যাচ্ছে 'শিক্ষা সফর' এবং 'পিকনিক' এর মধ্যে সংজ্ঞায়, বৈশিষ্ট্যে, স্পষ্ট তফাৎ বিদ্যমান।
প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে দেশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে 'শিক্ষা সফর' ব্যানার ঝুলিয়ে আসলে কই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের? উত্তর হবে 'পিকনিকে'। আমি বলছি না, পিকনিকে যাওয়া উচিৎ না শিক্ষার্থীদের। বরং, প্রত্যেকটি মানুষেরই উচিৎ তাঁর পরিবার, সন্তানদের নিয়ে 'পিকনিকে' যাওয়া। বনভোজন বা 'পিকনিক' আমাদের জীবনের, কাজের, পড়াশোনার একঘেয়েমি কাটিয়ে উৎফুল্লতা আনে। আমরা আর হাঁপিয়ে উঠি না। শিক্ষার্থীদেরও উচিৎ 'পিকনিকে' যাওয়া। কিন্তু, 'শিক্ষা সফরে'র নামে 'পিকনিকে' যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলতে হবে আমাদের শিক্ষকদের সামনে। কেননা, এর সাথে আমাদের বাচ্চাদের, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান স্বার্থ এবং সুযোগ বঞ্চিত হওয়ার ব্যাপার জড়িত। একটি 'শিক্ষা সফর' থেকে শিক্ষার্থীদের যে অভিজ্ঞতা হওয়ার কথা সেই অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীরা।
আমাদের দেশে এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে বছরের একদিন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলে, ডেগচিতে করে বাবুর্চির রান্না করে দেওয়া খাবার নিয়ে কোনো একটা পর্যটনকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসা। (যদিও এটি পিকনিকের সংজ্ঞায়ও পড়ে না। কারণ, পিকনিকে সবাই মিলে রান্না করে খেতে হয়। বাবুর্চি দিয়ে রাঁধিয়ে নেয়া খাবার গ্রহণ করা পিকনিকের বৈশিষ্ট্য নয়)। এখানকার শিক্ষকরা এটারই নাম দিয়েছেন 'শিক্ষা সফর'। এটা না 'শিক্ষা সফর' না 'পিকনিক'। এই সফরে না থাকছে নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ, না থাকছে শিক্ষার্থীদের expedition- এর সুযোগ। তাঁরা শুধু দলবেঁধে গাড়িতে করে একটা জায়গায় যাচ্ছে, ঘুরাঘুরি করছে, খাওয়াদাওয়া করছে এবং দিনশেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘরে ফিরে আসছে। আমাদের শিক্ষকরাও এ বিষয়ে তেমন চিন্তিত নন। তাঁদের হাবভাবে মনে হবে 'শিক্ষা সফর' বা 'পিকনিক' যা-ই হোক শিক্ষার্থীদের একদিন স্কুলের গন্ডির বাইরে ঘুরিয়ে তো আনছি। বিষয়টি এতো হালকাভাবে বলে নিলেই দায় ঘুচবে না।
উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের তাঁরা বছরের একটা সময় 'শিক্ষা সফরে' নিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা কোন প্রক্রিয়ায়, কোন উদ্দেশ্যে যাচ্ছে সেদিকে তাকান। চীনের মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য বছরে দুই সপ্তাহ মেয়াদি একটি 'শিক্ষা সফরে'র আয়োজন করা হয়। ওই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য থাকে শিক্ষার্থীদের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা প্রদান। এর ফলে চীনের মাধ্যমিকে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা সফরে গিয়ে নিবিড়ভাবে তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞানাহরণ করতে পারে। কানাডায় ছাত্র নেতৃত্বের একটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে। তাঁরা তাঁদের 'শিক্ষা সফরে' শিক্ষার্থীদের কানাডিয়ান সংস্কৃতি এবং বর্তমান সমস্যাগুলি শিক্ষা সফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাথায় বসিয়ে দেন। ছাত্র নেতৃত্বের ইতিহাস তাঁদের সামনে তোলে ধরেন প্রত্যক্ষ নিদর্শনস্বরূপ। তাঁরা মাঝেমাঝে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যান, পাশের কোনো স্থানীয় অঞ্চলে। এক অঞ্চলের শিক্ষার্থীদেরকে অন্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সাথে বসানো হয় শিক্ষা সফরে। তাদেরকে একসাথে রাখা হয়। ফলে তাঁরা শুধুই ঘুরেফিরে না, প্রত্যক্ষভাবে পরস্পরের কাছ থেকে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। কানাডায় শিক্ষার্থীদের 'শিক্ষা সফর; নিয়ে সারাবছরই কোনো না কোনো আয়োজন থাকে। সেসব আয়োজনে তাঁরা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের মতো কোনো একটি জায়গায় গিয়ে ঘুরেফিরে, খেয়েদেয়ে, ছবি তোলে, নাচগান করে বাড়ি ফিরে আসে না। তাঁরা ফিরে আসে জ্ঞান নিয়ে, অভিজ্ঞতা নিয়ে। তাঁদের এ সুযোগ করে দেন তাঁদের শিক্ষকরা। আমাদের দেশের স্কুলগুলোর 'শিক্ষা সফরের' সাথে এই দেশগুলোর 'শিক্ষা সফরের' পার্থক্য আশা করি জানানো গেছে।
কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে কেন এরকমটা হচ্ছে না? শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুল থেকে 'শিক্ষা সফরে' নিয়ে যাওয়ার নিয়ম থাকলেও কেন শিক্ষার্থীদের একপাল ভেড়ার মতো দলবদ্ধভাবে 'পিকনিকে' নিয়ে গিয়ে বেহুদাই পয়সা খসানো হচ্ছে? এর কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মূলেই সমস্যা রয়েছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে যারা শিক্ষিত হয়েছেন তারাও তাই ত্রুটিপূর্ণ। অর্থাৎ, শিক্ষিত মূর্খের মতো। তাঁরা নিজের মূর্খতাকেই সিলেবাস আকারে আমাদের শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন। ফলে মানসিকভাবে এরা আরও জড়বস্তুতে পরিণত হচ্ছে। তাঁরা শিক্ষার্থীদের জানাতে পারেন না একটি তারকার জন্ম মৃত্যু চক্র, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর হারাতে বসা ভাষার কথা, তাঁরা নিজেরাও জানেন না কীভাবে ২+২=৪ হয়। পিয়ানো এক্সিয়োমের ব্যাপারে আমাদের শিক্ষকরা জানেন কি না জানি না। বাট্রান্ড রাসেল নাকি দুই হাজার পৃষ্ঠা ব্যয় করেছিলেন ২+২=৪ হয় তা প্রমাণ করার জন্য। আমাদের শিক্ষকরা কি এসব মজার গল্প শিক্ষার্থীদের জানান?
আমি শুনিনি, আমাদের কোনো বিদ্যালয় থেকে মনিপুরী পাড়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ভাষা পর্যবেক্ষণের জন্য। শুনিনি লাউয়াছড়ায় একদল শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসা হয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। অথবা শুনিনি কোনো স্কুল থেকে শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে, শিক্ষার্থীদেরকে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী বীরদের সম্পর্কে জানাতে। এক দশক আগেও স্কুলগুলোর 'শিক্ষা সফরে'র এই চিত্র ছিল না।
বর্তমানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পর্যটনকেন্দ্র বিছনাকান্দিতে, ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে, শিমুল বাগানে। নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কিছু শেখানোও হচ্ছে না। শিক্ষকরা তাঁদের ছেড়ে দিচ্ছেন আনন্দ-ফূর্তির জন্য। নিজেরাও একপাশে আনন্দ ফূর্তি করে বিকেল শেষে আবার দলবেঁধে ফিরে আসছেন শিক্ষার্থীদের নিয়ে। এগুলো শিক্ষার্থীরা তাঁদের পরিবারের সাথেও উদযাপন করতে পারে। কিন্তু, বনভোজন আর 'শিক্ষা সফরে'র তফাৎটি নিয়ে ভাবছি না বলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
এই যে নিয়ম রেখেও হচ্ছে না, 'শিক্ষা সফর' ব্যানার লিখে 'পিকনিকে' যাওয়া হচ্ছে, 'শিক্ষা সফরে' গিয়ে শিক্ষার্থীরা আসলে কিছুই শিখছে না, এগুলোর পেছনে দায় আছে আমাদের অভিভাবকদের। তাঁরা শিক্ষা সফর থেকে ফিরে আসা তাঁদের সন্তানটিকে জিজ্ঞেস করেন না- আজকে কী কী দেখেছো বন্ধুরা মিলে? কী কী শিখলে বন্ধুরা মিলে? তাঁরা বরঞ্চ, 'পিকনিকে' যাওয়ার সময় ছেলে-মেয়ের হাতে গুঁজে দিচ্ছেন কচকচে টাকার নোট। আর বলে দিচ্ছেন 'এর সাথে মিশবে না, ওর থেকে দূরে থাকবে।' যে যত বড়লোক সে তত বড় নোট দিয়ে পাঠাচ্ছেন সন্তানদের। সন্তানরা সেই টাকা নিয়ে গিয়ে উড়াচ্ছেন 'পিকনিকে'। বাচ্চাদের মনে ছেলেবেলাতেই টাকার ব্যাপারে 'ডিসক্রিমিনেশন' ভাবনার জন্ম নিচ্ছে। অন্যদিকে, পিকনিকের চাঁদা দিতে পারছে না বলে আরেকটি শিক্ষার্থী যেতে পারছে না তথাকথিত 'শিক্ষা সফরে'। শিক্ষার্থীদের হাতে টাকা তোলে দিয়ে এই বয়সেই তাঁরা মনে গেঁথে দিচ্ছেন 'ডিসক্রিমিনেশনে'র বীজ। তাঁরা সেটি বুঝতেও পারছেন না! যাদের বোঝানোর কথা, আমাদের শিক্ষকরাও এসব বিষয়ে নির্বাক। কিছু জায়গায় শিক্ষকরাই উৎসাহী হয়ে 'পিকনিকে'র চাঁদা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। একটি শিক্ষার্থী কচকচে নোট নিয়ে 'শিক্ষা সফরে' যাচ্ছে আরেকটি শিক্ষার্থী টাকার জন্য যেতে পারছে না, শিক্ষা ব্যবস্থায় এর চাইতে লজ্জাজনক বিষয় আর কী হতে পারে?
লেখক- শ্যামলাল গোসাঁই, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী
তথ্যসূত্র:
- Canadian International Student Services
- College of Professional and Continuing Education | CSULB
- Collinsdictionary
- Wikipedia
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ