জাহাঙ্গীর জয়েস
সৈয়দ আবু জাফর আহমদ স্মরণে...
সৈয়দ আবু জাফর আহমদ স্মরণে...
আজ ২৯ মে ২০২৪ তাঁর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। আমাদের শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল আন্দোলনের একজন নির্ভীক সৈনিক ছিলেন তিনি। তিনি শোষণ মুক্ত সমাজ নির্মাণ, মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াকু মানসিকতার ধীর, শান্ত কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল এক রাজনীতিবিদ। তিনি হলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদ।
মফস্বল শহর থেকে রাজনীতি করে দেশের অন্যতম একটা প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সৈয়দ আবু জাফর আহমদ ১৯৫৪ সালের ১১ জুলাই মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবন শুরু হয় ১৯৫৯ সালে সৈয়ারপুর লক্ষ্মীবালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে মৌলভীবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৬৯ সালে এসএসসি পাশ করে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৭০ সালে মৌলভীবাজার কলেজ সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত হোন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে একই সংগঠনের প্রার্থী হিসেবে একই কলেজ সংসদে জিএস নির্বাচিত হোন।
১৯৭১ সালে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি- ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের যোদ্ধা হিসেবে চা শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯৭৩ সালে প্রথম কারাবন্দী হোন। ওই বছরই তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মৌলভীবাজার মহকুমা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৭৪ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। ১৯৭৫ সালে তিনি আবারো কারাবরণ করেন। স্বপরিবারে জাতির জনক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ সংগঠিত করতে গিয়ে বিনা বিচারে প্রায় এক বছর হাজতবাস করে ১৯৭৬ সালে মুক্তিলাভ করেন। এছাড়া স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও তিনি কারাবন্দী হোন।
কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, লড়াই- সংগ্রাম ও ত্যাগ- তিতিক্ষার কারণে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি মৌলভীবাজার মহকুমা কমিটির সহ- সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হোন এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ দিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালে পার্টির ৫ম কংগ্রেসে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ১৯৯৫ সালে ৬ষ্ঠ কংগ্রেসে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ২০১২ ও ২০১৬ সালে যথাক্রমে দশম ও একাদশ কংগ্রেসে পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। তবে অসুস্থতাজনিত কারণে ২০১৭ সালে তিনি সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে আমৃত্যু প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ সৈয়দ আবু জাফর আহমদ সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ছাড়াও প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিলেন সদা সোচ্চার। কৃষক, ক্ষেতমজুর, চা শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, শব্দকার জনগোষ্ঠী তথা মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনসহ স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচার, জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলনে তিনি ছিলেন সামনের কাতারে। তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ২০০২ সালের ঢাকা- বিবিয়ানা লংমার্চে তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক।
পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে সুবক্তা সৈয়দ আবু জাফর আহমদ ভারত, নেপাল, সোভিয়েত ইউনিয়ন(রাশিয়া), চীন, ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া, হংকং, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া ১৯৭৯ সালে তিনি এক বছরের জন্যে মার্ক্সবাদ এবং লেনিনবাদ সর্ম্পকে উচ্চতর জ্ঞান লাভের জন্যে জার্মানীতে গমন করেন।
রাজনৈতিক পাঠে অক্লান্ত এবং লেখালেখিতেও দক্ষ ছিলেন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে অনেক প্রবন্ধ লিখেছেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়েও ছিলেন নিবেদিত। ১৯৯১ সালে তাঁর সম্পাদনায় মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক মনুবার্তা। পত্রিকাটি অল্পদিনেই সুধীজনসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পত্রিকা অফিসটি অনেক লেখক, সাংবাদিকদের যোগাযোগের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। নতুন লেখক সৃষ্টিতেও পত্রিকাটির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
সৈয়দ আবু জাফর আহমদ ২০১৯ সালের ২৯ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সার্বক্ষণিক এই রাজনীতিবিদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর চেতনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছি।
লেখক : জাহাঙ্গীর জয়েস, কবি।
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ