আবদুল হামিদ মাহবুব
শিশু তারতিলের ক্ষোভের কাছে আমি অসহায়
ছড়াকার ও সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল হামিদ মাহবুব
কৈফিয়ত: প্রশ্ন আসবে শুরুতেই কৈফিয়ত কেনো? একারণে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে যে, নিচের লেখাটা সাপ্তাহখানেকের পুরোনো। এই লেখাটি ১৯ জুলাই’২০২৪ (শুক্রবার) কারফিউ জারির ঘোষণা আসার কয়েক ঘণ্টা আগে লেখা। ইন্টারনেট না থাকায় তখন কোথাও ই-মেইলে পাঠানো সম্ভব হয়নি। কৈফিয়ত না দিলে লেখাটি প্রকাশ যোগ্য নাও হতে পারে, তাই এই কৈফিয়ত। লেখায় যে ম্যাসেজ রয়েছে, সেটা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি।
বাসায় দাওয়াতের অনুষ্ঠান ছিলো, ভালো-মন্দ, সুখ-দুখের বিষয় আলোচিত না হয়ে ছাত্রদের আন্দোলন, কোটা, পুলিশ-বিজেপির দমানোর বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আর প্রাধ্যান্য পেয়েছে শিশু তারতিলের ক্ষুব্ধ হওয়ার চিত্র।
আমার বাস রাজধানী থেকে প্রায় দুইশ’ কিলোমিটার দূরে মৌলভীবাজার জেলা শহরতলিতে। আমি ওখানকার কথা লিখছি। আমেরিকা থেকে মনির ভাই দেশে এসেছেন। আমার স্ত্রী তাঁকেসহ আমাদের সাথে ঘনিষ্ঠ আরো কয়েজনকে দাওয়াত করেছেন। মনির ভাই আমার নতুন বাসা চেনেন না। তাকে বাসায় নিয়ে আসার জন্য একটু এগিয়ে মিশন রোডে (সরকারি কলেজের পাশে) রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি।
এসময় আমার অচেনা একটি ছেলে সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে সালাম করলো। হয়ত সে আমাকে সাংবাদিক হিসাবে চেনে। চেয়ে দেখি তার হাতে লম্বা গাছের ডাল (খারি) লাঠির মতো। সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার হাতে এটা কেনো?’ ছেলেটি বলে, ‘তারা জমায়েত হয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, শুরু আগেই কয়েকটাকে মেরে তাড়িয়ে দিয়ে এলাম।’ আমি আবার জিজ্ঞেস করি, ‘তারা কারা?’ ছেলেটি বলে, ‘ওই কোটা সংস্কার চায়, যারা।’ তাদের মেরে তোমার কি লাভ?’ সে বলে, ‘আগামী কমিটিতে ভালো একটি পদ পাবো।’ (সাবেক ও বর্তমান এমপির কর্তৃত্বের দ্বন্দ্বে ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত হয়ে আছে কয়েক মাস ধরে) বুঝতে পারি সে ওই কমিটির কথা বলছে। এরই মধ্যে আমার মনির ভাই গাড়ি চলে আসায়, ছেলেটিকে বললাম, ‘আচ্ছা যাও বাবা, তবে মারামারি ভালো নয়।’ মনির ভাইর গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে পথ চিনিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
গাড়িতেই মনির ভাই জানালেন, ‘প্রেসক্লাবের সামনে এসে তো বেশ বিপদের মধ্যেই পড়ে গিয়েছিলাম। ভ্যাগিস পুলিশ থাকায় গাড়ির কোনো ক্ষতি হয়নি।’ তাঁকে এনে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে পুরো ঘটনা জানতে চাইলাম। তিনি জানালেন ‘প্রেসক্লাবের সামনে “মিঠাই” মিষ্টি দোকান থেকে মাত্র বের হয়েছি। দেখলাম সামনের দিক থেকে দল বেধে বেশ কয়েকজন ছেলে আসছে। আমার গাড়ির কাছে আসতেই অপর দিক থেকে কয়েকজন লাঠি হাতে তেড়ে এলো। প্রেসক্লাবের সামনে থেকে ছুটে এলো পুলিশ। ছেলেদের তাড়িয়ে নিয়ে গেলো প্রেসক্লাবের দিকে। পুলিশি ঘেরাওয়ের ভেতরে ঢুকে লাঠিওয়ালারা ওই ছেলেদের বেদম পেটালো। তারপর দেখলাম মার খাওয়া ছেলেদের পুলিশ দুই দিকে তাড়িয়ে দিলো।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিদেশে আছি, এমন দেখে অভ্যস্থ নই। তাই কেনো এমন হলো? সেটা জানার জন্য পুলিশের সাথে কথা বলতে প্রেসক্লাবের দিকে যেই এগোবো; এক পুলিশ সদস্য বললো, ‘কই যান?’ আমি বললাম যারা মারলো আপনারা তাদের না ধরে যারা মার খেলো তাদের তাড়িয়ে দিলেন কেনো? ওই পুলিশ সদস্য আমার পরিচয় চাইলো। আমি পরিচয় দিলাম। বিদেশ থাকি এবং আপনার বাসায় যাবার জন্য এসেছি, সব বললাম।’ তখন সে বললো ‘যারা মেরেছে তাদের কিছু করা যাবে না, নির্দেশ আছে। আর যাদের তাড়িয়ে দেওয়া হলো, তাদেরও ঝামেলা থেকে বাঁচানো হলো। না হলে এদেরেকে ধরে থানায় নিয়ে যেতে হতো। তাদের বিরুদ্ধে ‘পুলিশকে আক্রমণ’ করেছে, এমন মামলা দিতে হতো। এই ছেলেদের বাবা-মার কতো টাকা পয়সা পুলিশের পেছনে, আদালতে খরচ হতো চিন্তা করুন।’ এই বলে বিদেশী অতিথি মনির ভাই আমার কাছে প্রশ্ন রাখলেন, ‘বাংলাদেশ এমন কেনো হলো?’ এই প্রশ্নের কোনো জবাব কি আমার কাছে আছে? আছে দেশের কোনো নাগরিকের কাছে?
মনির ভাই বেশি সময় বসলেন না। রাতেই তার ফ্লাইট। যাবার পথে দাওয়াত রক্ষা করতে এসেছেন কেবল। তাকে আপ্যায়ন করে বিদায় দেওয়ার একটু পরে বিজিত তার স্ত্রী চৈতি ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া তাদের ছোট ছেলে অতনুকে নিয়ে ঢুকলো। বিজিতের একটা মুদ্রা দোষ আছে ‘জঘন্য জঘন্য’ বলা। আজো সে ঢুকেই বললো, ‘জঘন্য ভাই, জঘন্য।’ আমি বলি, ‘কি জঘন্যরে?’ সে বলে, ‘এভাবে কথা না বললে কি হতো? আমাদের সকল অর্জন ধুলোতে মিশে গেলো।’ বিজিতকে বলি, ‘খোলাখুলি সব বল।’ সে বলতে শুরু করলো; ‘আমি ছাত্র জীবনে ছাত্রদলের রাজনীতি করতাম। রাজাকার কাদের মোল্লার ফাঁসি না হয়ে যাবজ্জীবন সাজার রায় হলো, ফাঁসির দাবীতে যখন শাহবাগ জেগে উঠলো, গণজাগরণ মঞ্চ হলো, আমি ওখানে ছুটে গেলাম। ছাত্রদলের রাজনীতি আর আমার রইলো না। সারাদেশে গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত হলো। আমাদের এখানেও গঠন করলাম। গণজাগরণ মঞ্চ হলো। জামাত শিবির আমাদের উপর হামলা করলো। তারপরও আমরা আন্দোলন করলাম। আমাদের আন্দোলনে নতুন প্রজন্ম জানলো কারা রাজাকার ছিলো। একাত্তরে রাজাকাররা কি করেছিলো। আমরা গণজাগরণ মঞ্চ করে এই নতুন প্রজন্মকে রাজাকারদের ঘৃণা করতে শিখালাম। একবার জাহানারা ইমাম ‘গণআদালত’ করে এদেশের মানুষকে একাত্তরের চেতনায় ফিরিয়ে ছিলেন। যারা একাত্তরের চেতনা ধারণ করে রাজাকারদের ঘৃণা করতে শিখলো, সেই প্রজন্মকেই রাজাকারের নাতিপুতি বলে দিলেন!’ আমি হেঁসে হেঁসেই বললাম, ‘তিনি তো কোটা আন্দোলনকারীদের বলেননি, বলেছেন রাজাকারদের ছেলেপুলেদের।’ সে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে বলে, ‘আপনি প্রবীণ সাংবাদিক, আপনিও বেবুঝের মতো বলছেন! তাঁর কথা তিনদিনের শিশুও বুঝেছে, আর আপনি বুঝেননি!’ আমি হেঁসেই বলি, ‘তিনদিনের শিশু?’ বিজিত বলে, ‘ওই হলো, তিনদিন নয়, তিন বছরের।’
বিজিত-চৈতির সাথে নয়। খানিক পরে আরেকটি ছেলে আমার জন্য হাসান আজিজুল হকের ‘আগুন পাখি’ বইখানা নিয়ে আসে। ছেলেটির নাম জানি না, তবে মুখচেনা। অন্য আরেকজনের কাছে বইখানা চেয়েছিলাম। তিনি তাকে দিয়ে পাঠিয়েছেন। সে বিজিতের কথাগুলো শুনেছে। ওই ছেলেটি বিজিতের কথার প্রসঙ্গ ধরে বলে ‘একাত্তর টিভির ফারজানা রূপা প্রশ্ন করেছিলেন কোটা প্রসঙ্গ নিয়েই। সেখানে তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা উনাকে কি বলে দিয়েছেন, সে বিষয়টি জিজ্ঞস করতে ইত্যাদি ইত্যাদি বলে প্রশ্নটি করলেন। জবাব দিতে গিয়ে এতো কথা বলে বলে শেষে বললেন “মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা পাবে নাতো রাজাকারের নাতিপুতি পাবে নাকি?” এটাতে তো কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদেরই বুঝালো। কারণ প্রশ্নটাতো কোটা নিয়ে ছিলো।’ তার সাথে আর কথা বাড়ালাম না। সে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। সম্ভবত ছেলেটি ছাত্র ইউনিয়ন অথবা ছাত্র ফ্রন্টের কর্মী হবে।
এ সময় ঢুকলো এসে মুজাহিদ, তার বউ তাছলিমা ও তাদের মেয়ে তাওফিকা ও ছেলে তারতিল । মেয়েটি দশম শ্রেনির ছাত্রী, ছেলেটি ষষ্ঠ শ্রেণিতে। আসলো উর্মি, সাথে তার মেয়ে প্রাচি। উর্মি আমাদের বাসাতে দিনে একাকিবারও আসে। সে প্রথম আলোর সাংবাদিক নিপুর স্ত্রী। প্রাচিকে বলি, ‘কি খবর?’ প্রাচি বলে, ‘ভাইয়াকে বলেছি বাইরে না যেতে।’ উর্মি বলে সে তার ভাইকে নিয়ে বড় চিন্তায় আছে। এমনিতে ছেলেটি বাইরে যায় না। এখন তার বন্ধুরা ফোন করলেই বাইরে যেতে চায়। ছেলেকে পাহারা দেওয়ার জন্য তার বাবাকে বাসায় রেখে এসেছি। উর্মির ছেলে পলাশ এবছর এইচএসসি দিচ্ছে।
মুজাহিদ ড্রয়িং রুমে ঢোকার আগেই আমাকে ইশারা করে বাইরে নিয়ে জানালো তার ছেলেটি রাগে ফোঁসফোঁস করছে। আপনার এখানে আসতে চাইছিলো না। ‘কেনো’ জিজ্ঞেস করায় বলো, আপনি একাকি তার সাথে কথা বলে বুঝুন, তাকে একটু বুঝিয়ে দেন। আমি অনেক বুঝিয়েছি, ছেলের কাছে আমার বিদ্যা শেষ। আমি তাকে ঠিক করতে পারছি না। এখন আপনি চেষ্টা করে দেখুন।
আমার স্ত্রী সবাইকে খেতে ডাকলেন। আমি তারতিলকে বললাম, ‘তুমি পরে আমার সাথে খাবে। আসো আমরা গল্প করি।’ সে বলে, ‘এখন গল্পের সময় নয়। এখন যুদ্ধের সময়।’ আমি টাট্টার ছলেই বলি, ‘তুমি কার সাথে যুদ্ধ করছো?’ সে বলে, -আপনি যেনো কিছু জানেন না!’
-না জানি নাতো। তুমি আমাকে বিস্তারিত বলো।
-ঢাকাতে যুদ্ধ হচ্ছে, দেখছেন না?
-হ্যাঁ, দেখছি। সরকার আন্দোলনকারীদের দমাচ্ছে। তাতে তোমার কি?
-আমার কি মানে! ওখানে আমরা না?
-তুমি তো আমার সামনে। ওখানে কি ভাবে।
-হ্যাঁ, আমি আপনার সামনে। কিন্তু আমার মন ওদের সাথে, যারা আন্দোলন করছে।
-কেনো?
-একাত্তরে হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ করে ছিলো। আর স্বাধীর দেশে এখন হচ্ছে অপারেশন ডে লাইট। পাকিস্তানীরা খুঁজে খুঁজে মেরেছিলো। আর এখন দেখে দেখে মারছে।
তাছলিমা ড্রাইনিং টেবিল থেকে আমাদের কথা শুনছিলো। ও উঠে এসে বললো, ‘ভাই, ওর সাথে কথায় পারাবেন না। আমার সাথে তারতিল খেয়ে নিক। না হলে পরে ঠিক মতো খাবে না।’ আমি বললাম, ঠিক আছে তাকে খাইয়ে নাও। পরে ওর সাথে আমি কথা বলবো।
আমি ড্রয়িং রুমে বসে থাকলাম। মুজাহিদ খাবার শেষ করে আসলো। বললো ‘ভাই, এখানে আসার সময় সে তার স্কুলের সামনে পুলিশ দেখেছে। তাদের দিকে চোখ বাঁকা করে থাকিয়ে ব্যাঙ্গ করে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে। সে ঢাকা গিয়ে মিছিলে যোগ দিতে চায়। সে খুব পীড়াপীড়ি করছে তাকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য। তাকে নিয়ে মহাবিপদে আছি।’
মুজাহিদের ছেলে মেয়ে দুটিই খুব ট্যালেন্ট। স্কুলের লেখাপড়ায় যেমন ভালো রেজাল্ট করে, এক্সটাঅডিনারী কারিকুলামেও তারা ভালো করে। মেয়েটি জেলা পর্যায়ের যে প্রতিযোগিতায়ই অংশ নেয়, প্রায় সকলটিতেই প্রথম হয়। জাতীয় পর্যায়ের একাধিক প্রতিযোগিতায়ও প্রথম হয়ে কয়েকবার সে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহন করেছে। ছেলেটি স্কুলের পড়ার পাশাপাশি বাইরের বই প্রচুর পড়ে। তার পড়ার সুবিধা হচ্ছে মুজাহিদের ‘কোরাস’ নামের বই ব্যবসার দোকান। ছোট বড় সবার উপযোগি বই বিক্রির জন্য মুজাহিদ আনে। সেখান থেকে বই নিয়ে ছেলেটি তৃপ্তি মিটিয়ে পড়তে পারে।
মুজাহিদ আমার সাথে কথা বলতে থাকার মধ্যে তারতিল খাওয়া শেষ করে চলে এসে সরাসরি আমাকে প্রশ্ন করলো, ‘জেনোসাইড কি সেটা আপনি জানেন?’ আমি জবাব দেওয়ার আগেই সে নিজে থেকে বললো, ‘এখন যা হচ্ছে সেটা জেনোসাইড।’ আমি বলি, ‘কেনো এটাকে জেনোসাইড বলছো?’ সে বলে, ‘আমাদের জন্য লেখেন শাহরিয়ার কবির, তিনি কথায় কথায় জেনোসাইড, হলোকাস্টের কথা বলেন। কিন্তু এখন যে মারছে এ বিষয়ে কিছু বলছেন না কেনো?’ আমি বলি, ‘তিনি বলবেন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলবেন, বলবেন আনিসুল হকও। সময় তো আছে।’ সে চেঁচিয়ে উঠলো, ‘জাফর ইকবাল! এই নাম বলবেন না। এই মানুষটাকে আদর্শ মানতাম। তিনি আমাদের সবাইকে রাজাকার বলে দিলেন। একাত্তরে তার যুদ্ধের যাবার বয়স ছিলো, তিনি যুদ্ধে যাননি। এই মুহম্মদ জাফর ইকবাল, তিনি বড় রাজাকার। তার যতো বই ছিলো সব ছিঁড়ে ফেলবো।’ বুঝতে পারি ‘রাজাকার’ এই ঘৃণার শব্দটা তার গায়ে লেগেছে। ঘৃনার শব্দকে ঘৃনা করতে হবে, সেটাকে নিজের শব্দ বানানো যাবে না; মুহম্মদ জাফর ইকবাল সেটা চেয়েছেন বলেই ওই ‘চিরকুটে’ এভাবে লিখেছেন।
মুজাহিদ বললো, ‘বই ছিঁড়ার কি দরকার, বাবা। আমরা তার বইগুলো সব আলাদা করে বেধে দূরে সরিয়ে রাখবো। তোমার চোখের সামনে পড়বে না। উনি তো দয়া করে মাগনা বই আমাদেরে দেননি। আমরা পয়সা দিয়ে কিনেছি।’
দেখলাম তাকে বেশি কথা বলালে সে আমাকেও মান্য করা থেকে সরে যেতে পারে। আমি মনে মনে বলি মফম্বলে এই ছেলে মেয়েদের মাঝে কোটা আন্দোলনের ঢেউ না আসার আরো আগেই ইন্টারনেট বন্ধ করা উচিত ছিলো। এখন তো অনেক দেরী হয়ে গেছে। তারতিলকে স্বাভাবিক করার জন্য বললাম, ‘তোমার চিন্তার সাথে আমারও মিল আছে। তোমার বয়স থাকলে আমি এমনই করতাম। ঠিক আছে তোমার এই চিন্তা, এই অভিব্যক্তি, সব লিখে রাখো। মুজাহিদ তাকে একটি বড় খাতা দিও, সে যেনো সব লিখে রাখে।’
মুজাহিদের স্ত্রী তাছলিমা সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করে। সে বললো, ‘ভাই, আমি তাকে খাতা দিয়েছি। আপনার মতোই বলেছি। তারপরও সামলাতে পারছি না। সারাক্ষণ টেলিভিশন, ইউটিউব দেখছে, সেগুলোতে লাইভ দেখেছে আর রাগে ফোঁসফোঁস করছে। বুক পেতে দেওয়া ওই ছেলেটার দৃশ্যও দেখেছে।’
এসময় তারতিল বিজিতের ছেলে অতনুকে ডেকে নিয়ে আমাদের পাশের রুমে ঢুকলো। একটু পরে দু’জনই ফিরে এলো। আমি অতনুকে জিজ্ঞেস করি, ‘তোমাকে কি বললো?’ সে একটু ঠাণ্ডা স্বভাবের সহজসরল। আমি তারতিলের দিকে তাকাই। সে ওকে ইশারা করছে না বলতে। কিন্তু অতনু বললো, ‘আমি ঢাকাতে গিয়ে মিছিলে যেতে চাই কি না, জিজ্ঞেস করেছে। আমি বলেছি বাবা মা নিয়ে গেলে যাবো।’ আমি তারতিলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম, ‘অতনু তোমার এক ক্লাস উপরে পড়ে, দেখেছো সে মা বাবার কথা ছাড়া কিছু করবে না। তোমারও মা বাবার কথার বাইরে কিছু করার চিন্তা করা ঠিক হবে না।’
তারতিল কি আমার কথায় কোনো বুঝ পেলো? তারতিল কি তার মনকে দমাতে পারবে? একটি শিশুর মন কেনো এমন হয়ে উঠলো? এর জন্য কি আমি-আপনি দায়ী নই? আমি নিজেও কিছু জানি না। কেবল জানি ষষ্ঠ শ্রেণির এই শিশু তারতিলের ক্ষোভের কাছে আমি অসহায়।
দেশে এমন শত শত হাজার হাজার তারতিল ক্ষুব্ধ হয়ে আছে, সেটাও অনুমান করতে পারি। তবে তাদের জোর করে নয়, সোহাগ দিয়ে বুঝালে অবশ্যই বুঝবে। এই বুঝানোর দায়িত্বটা আমাকে-আপনাকে নিতে হবে। আমরা নেবো কি না; সেটাই হচ্ছে এখন বড় প্রশ্ন?
লেখক- আবদুল হামিদ মাহবুব, ছড়াকার ও সিনিয়র সাংবাদিক, Email- [email protected]
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ