কবির য়াহমদ
অধ্যাপক শামীমা সুলতানার রাষ্ট্রের আইনে অবজ্ঞা
অধ্যাপক শামীমা সুলতানার রাষ্ট্রের আইনে অবজ্ঞা
কোটা আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের হ/ত্যা, হা/মলা, নি/র্যাতন ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে নিজ কার্যালয় থেকে তার ছবি সরিয়ে ফেলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা।
এই সংবাদ ফেসবুকে আসার পর অনেকেই বীরত্বের প্রশংসা করছেন অধ্যাপক শামীমা সুলতানার।
সাহসের প্রশংসা করি আমিও ওই অধ্যাপকের। তবে এই কাজটা তার বাড়াবাড়ি হয়ে গেল কি-না ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করি।
শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবেন শিক্ষক সমাজ- এটাই কাঙ্ক্ষিত। বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ এই কাজটা এবার করছেন অনেকটাই। বহুধাবিভক্ত শিক্ষক সমাজের এই ইতিবাচক পরিবর্তন অভিনন্দনযোগ্য।
তবে কথা থাকে, কোন শিক্ষক কি চাইলেই এভাবে প্রতিবাদ করতে পারেন? বিশেষত যা সরকারি নির্দেশনা। চাইলেই কি এভাবে রাষ্ট্রের নির্বাহীপ্রধানকে এভাবে অপমান করতে পারেন? প্রতিবাদের নামে এমন কাণ্ড কি রীতিনীতি-প্রথাপ্রতিষ্ঠানকে অবজ্ঞা, অগ্রাহ্য করা নয়?
স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার, ২০০২ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীদের কার্যালয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস ও সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
এও স্মরণ করানো দরকার, সরকারি এই নির্দেশনা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছিল বিএনপি ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী দল জামায়াতে ইসলামীর যৌথ শাসনামলে।
এবার দেখি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানার রাজনৈতিক অবস্থান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’র একজন সক্রিয় সদস্য, এবং বিভিন্ন সময়ে এর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, এবং এখনো করছেন।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংগঠনের ২৫ সদস্যবিশিষ্ট যে কমিটি হয়েছিল সেখানে তিনি পেয়েছিলেন নারী বিষয়ক সম্পাদকের পদ। [বাংলানিউজ, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০]
২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের এই সংগঠনের যে কমিটি ঘোষিত হয় তাতে তিনি পেয়েছেন সহসভাপতির দায়িত্ব। [জাগো নিউজ, ২৩ এপ্রিল ২০২৪]
অধ্যাপক শামীমা সুলতানা দেওয়াল থেকে যে ছবি সরিয়েছেন সেটা ব্যক্তি শেখ হাসিনার দেখা গেলেও, বিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এটা প্রধানমন্ত্রীর ছবি। এখানে এখন থাকে শেখ হাসিনার ছবি, আগে থাকত বেগম খালেদা জিয়ার ছবি। অর্থাৎ সরকারপ্রধান যে থাকবে, তার ছবিই থাকবে এখানে। রাষ্ট্র এখানে ব্যক্তি হিসেবে নয়, পদবিধারী এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির ছবিই রাখতে বলেছে। এবং এটা বিএনপি সরকারের আমল থেকেই শুরু হয়েছে।
কিন্তু ডক্টরেট ডিগ্রিধারী এই অধ্যাপক ব্যক্তি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে শেখ হাসিনার ছবি সরিয়ে দিতে অগ্রাহ্য করেছেন সরকারি নির্দেশনা ও নিয়ম। এটা কি আইনবিরুদ্ধ হয় না?
হ্যাঁ, কোটা আন্দোলনের এই পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নানা সিদ্ধান্ত-পদক্ষেপ বিতর্কিত ভাবতে পারেন কেউ, তার প্রতি সংক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকার যে কেউই রাখেন, কিন্তু এর প্রতিবাদ রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতিকে অবজ্ঞা, অশ্রদ্ধা, অগ্রাহ্য ও অমান্য করে নয়; এর কোন যুক্তি থাকতে পারে না।
শিক্ষার্থীদের প্রতি আবেগকে পুঁজি করে ড. শামীমা সুলতানার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আড়ালে রাষ্ট্রীয় নিয়মের লঙ্ঘন কি সমর্থনযোগ্য?
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সূত্র:
https://banglanews24.com/education/news/bd/771222.details
https://www.jagonews24.com/campus/news/937517
লেখক- কবির য়াহমদ, সম্পাদক, সিলেটটুডে২৪.কম
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ