শ্যামলাল গোসাঁই
নয়া বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বার্তা
নয়া বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য বার্তা
মুসলিম ছেলেমেয়েরা মন্দির পাহারা দিচ্ছে, যেন কেউ মন্দির ভা*ঙতে না পারে; এটা ভালো এবং দেখতেও সুন্দর। কিন্তু, স্বস্তিদায়ক না। এটা হিন্দুদের জন্য যতোখানি অস্বস্তির তারচাইতে বেশি দুশ্চিন্তার মুসলমানদের জন্য। কেননা, একদল 'মুসলিম' কতৃক হা*মলা হতে পারে এই আশঙ্কায় গোটা মুসলমান সমাজকে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হচ্ছে। ইসলাম বহিশত্রুর হাত থেকে মুসলমান সমাজে সংখ্যায় যারা কম তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়।
কিন্তু, বাংলার চিত্র হয়ে ওঠেছে এমন— এখানে একদল মুসলমান নামধারী লোকজনই বৃহত্তর মুসলমান সমাজ ও অন্যান্যদের জন্য হু*মকিস্বরূপ। অর্থাৎ, বাংলাদেশে ইসলামের শত্রু কিছু সংখ্যক মুসলমানরাই! যাদের ভয়ে আজকে মুসলিম ছেলেমেয়েদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় স্থাপনা পাহারা দিতে হচ্ছে। আর একারণেই এটি হিন্দুদের মতো এদেশের মুসলমানদের জন্যও অস্বস্তিকর ও আতঙ্কের। কেননা, ইসলামে হিংস্রতা এবং ঈর্ষাপরায়ণতার ঠাঁই নেই।
হালাকু খান যখন বাগদাদ আক্রমণ করেন তখনো তিনি একজন অমুসলিম। পরে তিনি ইসলামের ছায়াতলে আসেন। যাহোক, খলিফাকে বন্দী করে হালাকু বাগদাদেব সব উলামাদের ডেকে তার একটি প্রশ্নের উপর ফতোয়া দিতে বলেন। প্রশ্নটি ছিল এরকম— শরিয়ামতে একজন ন্যায়নিষ্ঠ অমুসলিম শাসক অযোগ্য দুর্নীতিপরায়ণ মুসলিম শাসকের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য কি না?
আরেকদল দেশের ভাস্কর্যসহ নানা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাঙচুরের লীলায় মেতেছে। তারাও ইসলামের নাম ব্যবহার করছে। ইসলামি চেতনার কথা বলে এরা রবীন্দ্রনাথ, জয়নুল, নজরুলসহ বাঙালীর শ্রেষ্ঠ মনীষাদের প্রতিমূর্তি ভাঙচুর করেছে। অনেক জায়গায় হিন্দুদের মন্দির, প্রতিমা ভাঙচুর করা হচ্ছে। এহেন কাজে অনেক অধম মুসলমান না জেনে না বোঝে সমর্থন যোগাচ্ছে। তাদেরকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী। অথচ, ইসলামের ইতিহাস পড়লে এমন কোনো নির্দেশনার ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। উপরন্তু, যা জানা যায় তা বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মুসলমানদের সঙ্গে চর্চিত ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এক্ষেত্রে নবী মুহাম্মদ (স.) এর মক্কা বিজয়ের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে।
অনেক পণ্ডিতগণ বলেন— মুহাম্মদ যখন মক্কা বিজয় করেন তখন তিনি কাবাঘরে এসে কাবা ভর্তি বিভিন্ন মূর্তি দেখে উঠের পিঠে চরে তা ভাঙার নির্দেশ দেন বটে। কিন্তু, কাবা ঘরে রাখা তিনটি প্রতিমূর্তি তিনি না ভাঙার জন্য বলেন। যে মূর্তিগুলো তিনি ভাঙার নির্দেশ দেন সেগুলো ছিল বিভিন্ন কুসংস্কার থেকে তৈরি নানা আকারের মূর্তি। কোনোটি ছিল সূর্যদেবতার মূর্তি, কোনোটি জল দেবতার, কোনোটি বায়ুদেবতার ইত্যাদি। যা ছিল অমূলক ভাবনা থেকে তৈরি অযৌক্তিক নিদর্শনের দৃশ্যমান আকার। তাই মুহাম্মদ এগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু, যে তিনটা প্রতিমূর্তি না ভাঙতে বলেন সেগুলো ছিল ইব্রাহিম, ঈসা এবং মরিয়মের। এরা তিনজনই প্রাক ইসলাম যুগের ছিলেন। এ কালের ভাষায় বললে অমুসলিম ছিলেন। কিন্তু, তবু মুহাম্মদ (স.) এর মনে এদের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল। তিনি এদের ভাস্কর্য ভাঙেননি, ভাঙার নির্দেশ দেননি। কেননা, তাঁরা তাদের সময়ের দিশাহীন মানুষদেরকে দিশা দেখিয়েছিলেন। তাঁরা তাদের যুগে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে লড়াই, সংগ্রাম করেছেন। মুহাম্মদ কুসংস্কারাচ্ছন্নতাকে ভাঙতে চেয়েছেন, ভেঙেছেন। কিন্তু, জ্ঞান আর সত্যকে কাছে রাখার কথা বলেছেন। বাংলার মুসলমান যেন বারবার এ কথাটি ভুলে যায়!
আরেকটি ঘটনার কথা বলি। হালাকু খান যখন বাগদাদ দখল করেন তখনকার কথা। তিনি বাগদাদের খলিফা (শাসক)-কে যুদ্ধে হারিয়ে বন্দী করেন। সেসময় বাগদাদের রাষ্ট্রীয় ব্যাপার ও রাজনীতিতে উলামা শ্রেণীর প্রভাব ছিল ব্যাপক। তারা নানা ব্যাপারে ফতোয়া দিয়ে শাসক ও সাধারণ নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ করতেন। হালাকু খান যখন বাগদাদ আক্রমণ করেন তখনো তিনি একজন অমুসলিম। পরে তিনি ইসলামের ছায়াতলে আসেন। যাহোক, খলিফাকে বন্দী করে হালাকু বাগদাদেব সব উলামাদের ডেকে তার একটি প্রশ্নের উপর ফতোয়া দিতে বলেন। প্রশ্নটি ছিল এরকম— শরিয়ামতে একজন ন্যায়নিষ্ঠ অমুসলিম শাসক অযোগ্য দুর্নীতিপরায়ণ মুসলিম শাসকের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য কি না? প্রশ্ন শুনে তো উপস্থিত প্রায় সব উলামা থ মেরে রইলেন। তারা ফতোয়া দেওয়া দূরকি বাথ মুখে কোনো রা পর্যন্ত করলো না। কিন্তু, একজন হালাকু খানের এ প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি উত্তরে হালাকু খানকে লিখে দেন— অবশ্যই একজন যোগ্য ন্যায়পরায়ণ অমুসলিম শাসকই শ্রেষ্ঠ। উত্তরটি দিয়েছিলেন বাগদাদের একজন জ্ঞানী আলেম রিয়াজউদ্দিন আলী ইবনে তাবাস।
হালাকু খানের কাছে এই উত্তরপত্র আসলে তিনি সেই আলেমের প্রতি খুশি হন। কেননা, উত্তরটি সঠিক ছিল। একজন দুর্নীতিবাজ মুসলিম শাসকের চেয়ে ন্যায়পরায়ণ অমুসলিম শাসকই শ্রেষ্ঠ। ইনসাফ ন্যায়ের পথ ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রকৃত মুসলমান বেইনসাফ থেকে দূরে থাকে। যদিও, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামের নামে কিছু উগ্রবাদী লোকজন যা করে বেড়াচ্ছে তা ইসলামকে মিসাইলে পরিণত করছে। যার লক্ষ্য এবং কার্যবিধি ধ্বং-সাত্মক। অথচ, ইসলাম শান্তির খুশবুতে পরিপূর্ণ। ধর্মের নাম করে অসৎ কাজ করা লোকেরা এই ঘ্রাণ পায় না।
বাংলাদেশে একদল লোক নিজেদের ফায়দার জন্য নবী মুহাম্মদ, শরিয়াহ ইত্যাদির কথা বলে দোহাই দিয়ে ভাওতাবাজি অনেকদিন ধরে করে আসছে। এরা সাধারণ মুসলমানদের ধর্ম সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট রেখে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় খুবই পটু। কিন্তু, সময় বদলেছে। সেইসঙ্গে এদেশের মুসলমানদেরও বদলাতে হবে। ইসলামের নামে হিংস্রতা আর ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে সরে এসে তরুণদের কল্যানকামী হতে হবে।
প্রফেট মুহাম্মদ (স.) বলেছেন— 'খায়রুন্নাসি মান ইয়ানফ ফাউন্নাস'- আরবি এই শব্দটির সুন্দর বাংলা তর্জমা আছে। বেঙ্গলি উলামরা এগুলো সাধারণ মুসলমানদের শোনান বিকৃত করে। এখানে রাসুল বলছেন— 'মানবাজতির মধ্যে তিনিই সবার শ্রেষ্ঠ যিনি সকল মানুষের মঙ্গল কামনা করেন। কারণ, ইসলাম শুধুই একজন মুসলিমের জন্য সাম্য ও শান্তির কথা বলে না, গোটা মানবজাতির কথা বলে। এদেশের মুসলমানদের ইসলামের মূলভাব ধরে হাঁটতে হবে। টুপি, পাঞ্জাবি বা জুব্বা-লেবাসে ইসলামের প্রদর্শন না করে আখলাক এবং হকিকতে ইসলামকে তুলে ধরতে হবে। তখন মুসলিম ভাইয়ের মতো হিন্দুটিকেও ভাই মনে হবে। এটাতো অনস্বীকার্য নয়— আল্লাহ সকল মানুষের রুহেই বিরাজ করেন।
লেখক- শ্যামলাল গোসাঁই, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী, Email- [email protected]
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ