কাজল হাজরা
আপডেট: ১৩:৫৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
স্বল্প মজুরিতে চা শ্রমিকদের সপ্তাহের বাজার হয়না
শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানে চা গাছ কলম করছেন নারী চা শ্রমিক। ছবি: আই নিউজ
চা শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম। বাংলাদেশে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি মাত্র ১৭৮ দশমিক ৫ পয়সা যা একটি পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। ভারতে অবস্থিত চা বাগানগুলিতেও পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। এই স্বল্প মজুরির কারণে তারা প্রায়ই ঋণের বোঝা বহন করেন এবং দারিদ্র্যের চক্র থেকে বের হতে পারেন না। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের আর্থিক সংকট আরও তীব্র হয়।
চা শ্রমিকদের বসবাসের পরিবেশ অত্যন্ত নিম্নমানের। তারা সাধারণত বাগানের ভিতরে ছোট ছোট কুঁড়েঘরে বসবাস করেন, যেখানে বিদ্যুৎ, পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। ঘরগুলি প্রায়ই বৃষ্টির সময়ে ভিজে যায় এবং শীতকালে ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা থাকে না। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঘনবসতির সমস্যাও প্রকট।
স্বাস্থ্য সেবার অভাবে চা শ্রমিকরা নানা রোগে আক্রান্ত হন। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হারও বেশি। চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তারা প্রায়ই অসুস্থতা নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন। মহিলা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের সময়ে।
শিক্ষার ক্ষেত্রেও চা শ্রমিকরা পিছিয়ে রয়েছেন। স্কুলের সুবিধা না থাকা এবং দারিদ্র্যের কারণে অনেক শিশুই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে শিশুরা প্রায়ই স্কুল ছেড়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়, যা তাদের ভবিষ্যতকে আরও অনিশ্চিত করে তোলে।
চা শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ অত্যন্ত কঠিন। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেন, কিন্তু তার বিনিময়ে তারা খুব কমই পান। কাজের সময়ে তারা প্রায়ই রোদ, বৃষ্টি এবং ঠান্ডার মধ্যে থাকেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
চা শ্রমিকরা প্রায়ই সমাজের মূলধারার বাইরে অবস্থান করেন। তাদের সামাজিক মর্যাদা কম এবং তারা প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হন। তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হয় না এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেই।
চা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। মজুরি বৃদ্ধি, বসবাসের পরিবেশ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে। চা শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি চা শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তাদের কষ্টকর জীবনযাপনের এই চিত্র পরিবর্তনের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে।
চা শ্রমিকদের জীবনমান, দুঃখ-কষ্ট ও আর্থিক সংকট নিয়ে লিখেছেন চা শ্রমিক সন্তান ফটোগ্রাফি কাজল হাজরা।
আই নিউজ/আরএ
- বাংলাদেশে শিশু শ্রম: কারণ ও করণীয়
- ২০২৩ সালে কী সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসছে?
- পনেরো আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক দ্বন্ধ
মোশতাক বললেও মন্ত্রীদের কেউ সেদিন বঙ্গবন্ধুর লাশের সঙ্গে যায়নি! - করোনা যেভাবে চিকিৎসকদের শ্রেণীচ্যুত করলো
- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমস্যা এবং সম্ভাবনা
- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কুকুর স্থানান্তরকরণ ও ভবিষ্যৎ
- শরীফার গল্প পড়তে আমাদের এতো কেন সমস্যা?
- ফিলিস্তিনে প্রাণ হারাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা
- মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী গণমাধ্যমের ভূমিকা
- রেমডেসিভির একটি অপ্রমাণিত ট্রায়াল ড্রাগ