Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ এপ্রিল ২০২৫,   চৈত্র ২৭ ১৪৩১

ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ২ আগস্ট ২০২০
আপডেট: ১৮:১০, ২ আগস্ট ২০২০

এরা কারা?

এরা আমার বীর বাহাদূর ছেলে মেয়ে। এরা কেউ চলে যায়নি। সবাই পল্টন ধরে আছে। স্যরি, ছবিটা বিষন্ন, কারো মুখেই হাসি নেই। ওরা কিন্তু আমার সাথে অনেক হেসেছিল। ছবি তোলার সময় কেন এমন হয়েছিল জানিনা।

এরা কারা?

ছবিটা গতকাল দুপুরের। সেই প্রিয় করিডোরে তোলা ছবি। আইসিইউতে যাদের ডিউটি ছিল তাদের একাংশ। সবাই এখানে নেই। একজন নার্স আছেন, দুইজন মেডিকেল অফিসার, আর সাপোর্ট স্টাফ।

ডাক্তার আর নার্সদের নিয়ে আজকে কিছু বলবো না। এই যে আয়া ওয়ার্ডবয়রা এরা সব আউটসোর্সিংএ চাকরি পাওয়া ছেলে মেয়ে। এদের কয়েকজনই ইনফেক্টেড হবার পর নেগেটিভ হয়ে আবার কাজে ফিরেছে। বন্যা এখনো ভারি কাজ করতে পারছে না। ওকে হালকা কাজ দেওয়া হচ্ছে। এখানে সবাই সবাইকে সাহায্য করে। কেউ কাউকে ফেলে যায়না। ঠিক যুদ্ধের মতো। এরা বিনা বাক্যে ঈদের দিনে ঠিক অন্য দিনের মতো করেই কাজ করে গেছে, কোন অভিযোগ নেই। মীযানের শরীর এখন ভালো। ও পজিটিভ ছিল। এদের অনেকেই কোভিডের ঠিক মাঝখানেই চাকরী নিয়েছে। কেউ কেউ আগে থেকেই ছিল।

প্রিন্স ছিল আগে থেকেই, ওটিতে কাজ করতো। কোভিডের শুরুতে সে এক রাতে আমাকে ফোন করে জানতে চায়, তার বাড়িতে সে একমাত্র রোজগার করা মানুষ। সে যদি না থাকে তবে তার বাবা মা আর বউ বাচ্চাকে পথে বসতে হবে। তাদের আর কেউ নেই। পরদিন সকাল থেকে তার ডিউটি শুরু। রাতে সে ঘুমাতে পারছে না। চাকরীটা সে করবে নাকি ছেড়ে দিয়ে অন্য কিছু চেষ্টা করবে, এই সিদ্ধান্ত সে নিতে পারছে না। শেষ সিদ্ধান্ত আমার, আমি যা বলবো তাই করবে। আমি বলেছিলাম অন্যখানে কাজ করলেও তোর কোভিড হতে পারে। কোভিড ছাড়াও মরে যেতে পারিস, যে কোন সময়। এখানে আমি তোকে বাঁচানোর চেষ্টা করবো জান দিয়ে। বাকিটা আল্লাহ সহায়। এখন ঘুমা। সকালে উঠে তোর মন যা বলবে তাই করিস। পরদিন সকালে দেখি সে বিপুল উদ্যমে তার টীমের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তার বাড়ি চাপাই নবাবগন্জ। গতকালও সে আমাকে 'ষাঢ়' ডেকে ঝাড়ি খেয়েছে। সে স্যার বলতেই পারে না। ধমক দিলে মিটিমিটি হাসে আর ষাঢ় ষাঢ় বলতে বলতে পিছায়। বিরাট যন্ত্রণা।

শুরুতে বলেছিলাম এরা কারা?

এরা আমার বীর বাহাদূর ছেলে মেয়ে। এরা কেউ চলে যায়নি। সবাই পল্টন ধরে আছে। স্যরি, ছবিটা বিষন্ন, কারো মুখেই হাসি নেই। ওরা কিন্তু আমার সাথে অনেক হেসেছিল। ছবি তোলার সময় কেন এমন হয়েছিল জানিনা।

প্রত্যেক গ্রুপের ডিউটির আগে আমি ওদের ডেকে বলি, একজনও যদি পজিটিভ হইস তাহলে কোভিডে মরতে হবে না, আমি আছাড় দিয়ে মেরে ফেলবো। ওরা হাসে। ওদের আমি তুই তুই করে কেন বলি? আমি জানিনা। আমি আসলে তেমন কিছুই জানিনা। জেনে কি লাভ?

ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, অ্যানেসথেশিওলজি ও আইসিইউ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা

Green Tea
সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়