সানজিদ কাজী
আপডেট: ১৯:২২, ৬ ডিসেম্বর ২০২০
ম্যারাডোনাকে দেখেই আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়েছিলাম
ডিয়াগো ম্যারাডোনা (১৯৬০-২০২০)
ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতে তিনি একাই দলকে জিতিয়ে দেন। টুর্নামেন্টে তাঁকে দুর্দান্ত সহযোগিতা করেছিলেন এন্টোনিয় কাব্রিনি, ব্রুনো কন্টি এবং এলেযান্দ্রো আলতোবেলি। এককথায় দলটি ছিলো চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ এবং যোগ্যতম দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা, একটি প্রতিষ্ঠানের নাম, শত কোটি হৃদয়ের ভালোবাসার নাম। মাত্র ৬০ বছর বয়সে প্রস্থান। অথচ আরেক কিংবদন্তী পেলে তাঁর থেকে ২০ বছরের বড় হয়েও বেঁচে আছেন। কি হতো ম্যারাডোনা আর একটি যুগ বেঁচে থাকলে! খবরটি শুনে পেলেও বলেছেন, এক মহান বন্ধু হারালাম। নিশ্চয় আকাশে একদিন আমরা একসাথে খেলবো।
১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনা ফুটবলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। তখন ম্যারাডোনার বয়স ১৮ এবং প্রতিভার স্ফূরণ তখনই দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কোচ সিজার লুই মেনোত্তি বাঁধ সাধলেন, চোখা যুক্তি – এ সম্পদকে আগামীর জন্য রক্ষা করতে হবে, আহত হয়ে ফুলটি ফোটার আগে ঝরে যেতে দেয়া যাবে না। শতভাগ সত্যি কথা। তাঁকে ছাড়াই আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন হয়। চোখ ধাঁধানো খেলা খেলেন মারিও কেম্পেস, প্যাসারেলা প্রমুখ।
১৯৮২ বিশ্বকাপ ফুটবল। এবার আর্জেন্টিনা দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে এলেন ঝাঁকড়া চুলের ছোটখাটো গড়নের এক ফুটবালার, নাম তাঁর ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তাঁর দু’চারটি মুভ দেখেই বোঝা গেলো এটি ভিন্ন জগতের প্রাণী। কিন্তু আর্জেন্টিনা সেবার সুবিধা করতে পারলো না। ঐ টুর্নামেন্টের সব আলো কেড়ে নিল সক্রেটিসের ব্রাজিল ও দিনো জফের ইতালী।
চ্যাম্পিয়ন হলো ইতালী পাওলো রসি নামের এক যাদুকরের পায়ের ছোঁয়ায়। প্রতিপক্ষের গোলপোস্টের সামনে যতগুলো বল তিনি পেয়েছিলেন, সবগুলো জালে ঢুকিয়েছিলেন চোখ ধাঁধানো দক্ষতায়। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতে তিনি একাই দলকে জিতিয়ে দেন। টুর্নামেন্টে তাঁকে দুর্দান্ত সহযোগীতা করেছিলেন এন্টোনিয় কাব্রিনি, ব্রুনো কন্টি এবং এলেযান্দ্রো আলতোবেলি। এককথায় দলটি ছিলো চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ এবং যোগ্যতম দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এই টুর্নামেন্টে আরো দুটি চমৎকার দল খেলেছিল – কার্লহাইঞ্জ রুমানিগার জার্মানি এবং মিশেল প্লাতিনির ফ্রান্স। জার্মানি সেবার রানার্স আপ হয়েছিল।
পরবর্তী বিশ্বকাপ ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত হলো মেক্সিকোতে। এবার সেই আর্জেন্টাইন ফুলটি পরিপূর্ণ বিকোশিত এবং সুবাস ছড়াচ্ছে। সঙ্গে রয়েছেন ভালডানো, বুরুশাগা এবং জো লুই ব্রাউনের মতো তুখোড় খেলোয়াড়রা। সারা টুর্নামেন্ট নিজেদের উজাড় করে খেললেন ম্যারাডোনা ও তাঁর সাথীরা। ফলাফল – আর্জেন্টিনা চ্যাম্পিয়ন। সেটি না হলে ভাগ্য ও পুরস্কার দেবতার সন্মান রক্ষা হতো না।
ফাইনালে ম্যারাডোনার নিখুঁত পাস থেকে বল পেয়ে বুরুশাগার বিজয়সূচক গোলটি কোনদিন ভুলা যাওয়া সম্ভব নয়। টুর্নামেন্টে বেশ কয়েকটি দল চমৎকার খেলেছিল, তাদের মধ্যে প্লাতিনির ফ্রান্স ও রুমানিগার জার্মানির কথা না বললেই নয়। এবারো জার্মানি রানার্স আপ। এই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরূদ্ধে খেলায় ম্যারাডোনার প্রথম গোলটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। শিল্পী নিজেও হ্যান্ড অফ গড বলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তোলেন।
তবে, আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানভিত্তীক সন্দেহাতীত প্রমাণ মেলেনি যে সেটিতে হাতের ব্যবহার ছিল! ইংরেজরা মনের সংকীর্ণতা থেকে বের হতে পারেনি। আজ সে দেশীয় পত্রিকায় দেখলাম ম্যারাডোনার মৃত্যু সংবাদ পরিবেশনের সঙ্গে তারা গীবত গেয়েছে অনেক বেশী কিন্তু, সেখানে প্রতিভার উল্লেখ নেই বললেই চলে। একই ম্যাচে ম্যারাডোনার করা দ্বিতীয় শৈল্পীক গোলটি বিশ্বকাপের শ্রেষ্ঠতম গোলের মর্যাদার অধিকারী অথচ, সে বিষয়টির কোনো উল্লেখ চোখে পড়লো না।
এরপর ম্যারাডোনা ১৯৯০ বিশ্বকাপে তাঁর দলকে ফাইনালে নিয়ে যান কিন্তু, সেবার ভাগ্যদেবী পক্ষে ছিলেন না। রানার্স আপ হয় তাঁর দল। দেশের পক্ষ হয়ে খেলা ছাড়াও এই শিল্পী ইতালীর এক অখ্যাত দল নেপোলিকে তাঁর যাদুকরী ফুটবল দিয়ে ১৯৮৭ এবং ১৯৯০ সালে দু’বার Serie A টাইটেল জয় করান। সেখানে তিনি ঈশ্বরের মর্যাদায় ভূষিত। স্বাভাবিকভাবেই আজ সেখানেও গভীর শোকের মাতম চলছে।
অস্বীকার করতে পারি না যে ম্যারাডোনাকে দেখেই আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়েছিলাম। তবে, কিছুদিনের মধ্যেই উপলব্ধি করি যে, কোনো নির্দিষ্ট দলের অন্ধ ভক্ত হলে মূল খেলার আনন্দ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তাই পরবর্তীতে ভালো ফুটবলের ভক্ত হই। ফলে, কাফু’র ব্রাজিলকে এবং জিদানের ফ্রান্সকে পছন্দ করতে কোনো বেগ পেতে হয়নি।
২০১০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন স্পেনের টিকিটাকা ফুটবলও মন্দ লাগেনি। ম্যারাডোনার মাধ্যমে ফুটবলকে ভালোবাসতে গিয়ে অসংখ্য বিরল প্রতিভার নয়ন-মনোহর খেলা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। বিশেষ করে, মিশেল প্লাতিনি, কার্লহাইঞ্জ রুমানিগা, গ্যারি লিনেকার, ডেভিড বেকহ্যাম, রোনালদো (ব্রাজিল), রোনালদিনিও, রবার্তো কার্লোস, গিওর্গি হ্যাজি, মার্সেলো সালাস, ইভান জ্যামরানো এবং আরো অনেক ক্ষণজন্মা ফুটবলার।
আজ ম্যারাডোনাকে নিয়ে লিখতে বসে তাঁকে ঘিরে অজশ্র স্মৃতি ভেসে আসছে, কিছুতেই ভুলতে পারছি না তাঁর সেই জাদুকরী ফুটবল। লিখতে গিয়ে চোখ দুটো ভিজে গেলো কি!
সানজিদ কাজী, ন্যাচার ফটোগ্রাফার
- ঢাকার হানিফ, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন, সিলেটের ছিলেন কামরান
- নৌযান দুর্ঘটনায় পরিবারকে হারানো সেই মিমের দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবীব
- পুলিশের চোখের জলে উন্মোচন হল জোড়া খুনের রহস্য
- ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত বানাতে চা শ্রমিক মায়ের অদম্য যুদ্ধের গল্প
- পুলিশ কর্মকর্তার ডায়েরি-২
জাদরেল বাবার দুই মেয়ে অপহরণের নাটকীয় কাহিনী - গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে এক করোনাযোদ্ধার আর্তি
- রোজাদার রিকশাওয়ালাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করলেন প্রভাবশালী পথচারী
- হাসি ভরা মুখ নিয়ে ভাইরাল কানাডার যুবক
- কষ্ট লাঘবকারি চিকিৎসার আকুতি চিকিৎসকের
- সেই রিকশাচালকের চোখের পানি আনন্দাশ্রুতে পরিণত করলেন এক তরুণ ব্যারিস্টার