আইনিউজ ডেস্ক
আপডেট: ২২:৪৯, ১৪ জুলাই ২০২১
জনগণের অনুদানে গড়ে ওঠা দেশের একমাত্র কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউর গল্প
এগারো মাস ধরে মৌলভীবাজারে চলছে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউর কার্যক্রম। বাংলাদেশে এটিই জনগণের অনুদানে তৈরি একমাত্র আইসিইউ, বিএমএর নেতৃত্বে এটি প্রায় এক বছর ধরে কাজ করে আসছে।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে HFNC প্রদান ও স্থাপন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাব্বির হোসেন খান গতকাল মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) রাতে তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের আইডিতে সবাইকে জানান এটি গড়ে ওঠার গল্প। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন কিভাবে বিএমএ, জনগণ, মৌলভীবাজারবাসীর উদ্যোগে গড়ে ওঠে এই আইসিইউ।
ডা. শাব্বির হোসেন খানের এই ফেসবুক পোস্টটি আইনিউজের পাঠকদের জন্য এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো-
আজ ১১ মাস চলছে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে বিএমএ'র উদ্যোগে তৈরী করে দেয়া কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ'র। উল্লেখ্য, এটাই বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতালগুলোর একমাত্র কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ, যা সম্পূর্ণরূপে জনসাধারনের অনুদানে স্থাপিত হয়েছে এবং মৌলভীবাজার বিএমএ'র নেতৃত্ত্বে গঠিত একটি 'প্রাইভেট-পাবলিক কমিটি'র মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে গত প্রায় ১ বছর ধরে।
মৌলভীবাজার বিএমএ'র উদ্যোগে আমাদের জেলার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে গত ২০ আগষ্ট ২০২০ ইং তারিখে আমরা একটি "কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ" স্থাপন করি, স্থানীয় সংসদ সদস্য জনাব নেছার আহমদ যার উদ্বোধন করেন। মৌলভীবাজার বিএমএ'র উদ্যোগে স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিবর্গ, মৌলভীবাজারের চিকিৎসকবৃন্দ, মৌলভীবাজার জেলার প্রবাসী দানশীল ব্যক্তিবর্গ ও প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে মোট ১২ টি মেগা-সিলিন্ডার নিয়ে তৈরী মেনিফোল্ড অক্সিজেন প্ল্যান্ট, ৩ টি সেমি-অটো HFNC মেশিন এবং কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ'র প্রয়োজনীয় সব সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে ২০ আগষ্ট ২০২০ তারিখে চালু হয় আমাদের জেলার এই ৬ শয্যা বিশিষ্ট কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ। পরবর্তীতে নাভানা গ্রুপের কাছ থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনুদান হিসেবে আমি সংগ্রহ করি ২ টি সি-প্যাপ মেশিন।
আমরা গর্ব করে বলতে পারি, জনসাধারনের অংশগ্রহণ এবং অনুদানের মাধ্যমে সরকারী হাসপাতালে কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ স্থাপনের আর কোন নজীর বাংলাদেশের অন্য কোথাও তখন ছিল না, এখনো আছে বলে আমাদের জানা নেই!
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদনক্রমে ভর্তিকৃত রোগীদের কাছ থেকে শুধুমাত্র ব্যবহৃত অক্সিজেনের প্রকৃত মূল্যবাবদ অর্থ আদায়ের মাধ্যমে অক্সিজেন ব্যয়ের সংস্থান করা হচ্ছে আমাদের এই আইসিইউ'তে। কোভিড চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় প্রায় সব ঔষধই সরকারীভাবেই সরবরাহ করা হচ্ছে ( হাসপাতালে সরবরাহ থাকা সাপেক্ষে) এই আইসিইউতে। আইসিইউ'র জন্য সুরক্ষা সামগ্রীর কোন আলাদা সরবরাহ না থাকায় এগুলো কিছুটা অপ্রতুল (পিপিই'র সরবরাহ যথেষ্ট পরিমানে আছে, তবে সার্জিকেল মাস্ক, এন-৯৫ মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি অপ্রতুল ছিল )। এজন্য এসব সুরক্ষা সামগ্রীগুলোর একটা অনিয়মিত সাপোর্ট আমরা কমিটির মাধ্যমে প্রায়শঃই আইসিইউতে দিয়ে থাকি। এছাড়াও আইসিইউ'তে ৩ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যাদের মাসিক বেতনও কমিটির হাতে অবশিষ্ট থাকা ফান্ড থেকে সরবরাহ করতে হয় ।
ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে মাঝে মাঝেই আমরা প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অনুদান পেয়ে থাকি। উল্লেখ্য, চালুর পর থেকে গত ১১ মাসে আমরা আর কোন নগদ অনুদান সংগ্রহ করি নি কারো কাছ থেকে। গত ডিসেম্বরে "বেক্সিমকো ফার্মা" আমাদেরকে ৫০০ টি সার্জিক্যাল মাস্ক অনুদান হিসেবে দিয়েছে। "ফারাজ ফাউন্ডেশন" দু'টি অক্সিজেন সিলিন্ডার (৫ লিটার) এবং কিছু সার্জিক্যাল মাস্ক ও এন-৯৫ মাস্ক দিয়েছে।
আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত আছে। সরকারীভাবে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজও এগিয়েছে অনেকটাই। বিশাল একটা অক্সিজেন রিজার্ভার বসানো হয়েছে হাসপাতালে। হয়তো আগামী ১ থেকে দেড় মাসের ভেতরেই আমাদের আইসিইউ সহ পুরো হাসপাতালের জন্য এই লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্টটির কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।
চালু হওয়ার পর বিগত ১১ মাসে আমরা আরো ১ টি সেমি-অটো (আগের ৩ টির মত) এবং ২টি ম্যানুয়েল (এগুলোতে অক্সিজেন ছাড়াও আলাদাভাবে এয়ার সিলিন্ডার সংযুক্ত করে রোগীকে হাই ফ্লো অক্সিজেন দিতে হয়) HFNC মেশিন অনুদান হিসেবে পেয়েছি এই আইসিইউর জন্য। ফলে এখন আমাদের আইসিইউতে HFNC র মোট সংখ্যা ৬ টি, এবং আজ, ১৩ জুলাই ২০২১ তারিখে এই ৬ টি মেশিনই সম্পূর্ণ কার্যকরভাবে রোগীদের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। উল্লেখ্য, আইসিইউতে গত ৫/৬ দিন ধরেই ৬ জন করে রোগী ভর্তি থাকছেন।
অব্যাহতভাবে সার্ভিস দেয়ার কারনে এরমধ্যে স্বাভাবিক কিছু wear & tear হয়েছে মেশিনগুলোতে, যা তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করে দেয়ার ব্যবস্থা করে আমাদের কমিটি। ফলস্রুতিতে সম্প্রতি আমাদের ফান্ডে ঘাটতি পরে যাওয়ায় আমি পৌরসভার মেয়র জনাব ফজলুর রহমানের কাছে ক'দিন আগে কিছু ফান্ডের অনুরোধ জানাই। উল্লেখ্য, ম্যানুয়েল HFNC দুটোকে আইসিইউ'র রোগীদের জন্য কার্যকর করতে আমাদেরকে আলাদাভাবে কিছু যন্ত্র ক্রয় করে সংযোজন করতে হয়েছে এগুলোতে। সেই সাথে এয়ার ফ্লো দেয়ার জন্য এয়ার সিলিন্ডারও সংগ্রহ করতে হয়েছে ৪ টি।
মেয়র মহোদয়কে ফান্ডের কথা বলার ৩/৪ দিনের মধ্যেই উনি তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে আইসিইউ'র ফাউন্ডার ডোনার এবং আমাদের কমিটির সদস্য জনাব হাসিব হোসেন খান এর কাছ থেকে আরও ২৫০০০/- টাকা অনুদান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও মেয়র মহোদয়ের পরামর্শে আমি মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে একটি আবেদনে আইসিইউ'র জন্য জেলা পরিষদ থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতার অনুরোধ জানাই চেয়ারম্যান জনাব মিছবাহুর রহমানকে। এতে সাড়া দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে চেয়ারম্যান মহোদয় আমাদের আইসিইউ'র জন্য ৩০,০০০/- টাকা বরাদ্দ দিয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। এই দুটো অনুদানের টাকাই (২৫০০০/- + ৩০০০০/- = ৫৫,০০০/-) আজ ১৩ জুলাই ২০২১ তারিখে আমার হাতে এসে পৌঁছেছে।
আমাদের আউসিইউতে চিকিৎসা-সেবা দেয়া হচ্ছে একদল এ্যানাস্থেশিওলজি বিশেষজ্ঞ সহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এ্যানাস্থেশিওলজিস্ট, এবং আইসিইউতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স এবং সাপোর্টিং স্টাফদের মাধ্যমে, যাদেরকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এ'জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনানো হয়েছে। প্রয়োজনে হাসপাতালের মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী, হৃদরোগ এবং শিশু বিশেষজ্ঞ (কনস্যালটেন্ট) রাও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আমি সহ আমাদের চিকিৎসকদের পুরো টীম সার্বক্ষণিকভাবে একটি হোয়াটস এ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে অনলাইনে যুক্ত থেকে আইসিইউতে ভর্তি প্রতিটি রোগীর প্রতি মূহুর্তের অবস্থা পর্যলোচনা করি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ/ প্রদান সহ রোগীদের জন্য সর্বোত্তম পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ফলস্রুতিতে একটি চমৎকার টীম ওয়ার্কের মাধ্যমে প্রতিটি রোগী এখানে চিকিৎসা পায়।
সবার জ্ঞাতার্থে আমাদের এই আইসিইউ'র ব্যবস্থাপণা ও সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা কমিটির পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরছি এখানে-
- আহ্বায়ক- ডা. শাব্বির হোসেন খান, সভাপতি, মৌলভীবাজার বিএমএ।
- সদস্য সচিব- সুমন আহমদ, বিলাস ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর।
- কোষাধ্যক্ষ- মনোয়ার আহমেদ রহমান, এমডি, রহমান গ্রুপ।
- সদস্য-
- (১) ডা. শাহজাহান কবীর চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজার বিএমএ।
- (২) হাসিব হোসেন খান, এমডি, সাউথ সিলেট কোম্পানী লিমিটেড।
- উপদেষ্টা-
- (১) তত্ত্বাবধায়ক, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল।
- (২) সিভিল সার্জন, মৌলভীবাজার।
- (৩) ডা.এম এ আহাদ, সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার বিএমএ।
- (৪) ডা. আবু রায়হান, কন্স্যালটেন্ট (এ্যানাস্থেশিওলজী),মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল।
- (৫) ডা.আব্দুল্লাহ আল মারূফ, কন্স্যালটেন্ট (মেডিসিন), মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল।
- (৬) ডা.এ বি এম নিজাম উদ্দীন, কন্স্যাল্টেন্ট(কার্ডিওলজী), মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল।
- (৭) ডা.এনামুর রশীদ দীপু, এ্যানাস্থেটিষ্ট, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতাল।
করোনা মোকাবেলায় আমরা আশাবাদী, আপনাদের অনুদান এবং সহযোগিতা বৃথা যাবে না ইন শা' আল্লাহ।
ডা. শাব্বির হোসেন খান, সভাপতি, মৌলভীবাজার বিএমএ ও আহ্বায়ক, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে HFNC প্রদান ও স্থাপন বাস্তবায়ন কমিটি।
- ঢাকার হানিফ, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন, সিলেটের ছিলেন কামরান
- নৌযান দুর্ঘটনায় পরিবারকে হারানো সেই মিমের দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবীব
- পুলিশের চোখের জলে উন্মোচন হল জোড়া খুনের রহস্য
- ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত বানাতে চা শ্রমিক মায়ের অদম্য যুদ্ধের গল্প
- পুলিশ কর্মকর্তার ডায়েরি-২
জাদরেল বাবার দুই মেয়ে অপহরণের নাটকীয় কাহিনী - গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে এক করোনাযোদ্ধার আর্তি
- রোজাদার রিকশাওয়ালাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করলেন প্রভাবশালী পথচারী
- হাসি ভরা মুখ নিয়ে ভাইরাল কানাডার যুবক
- কষ্ট লাঘবকারি চিকিৎসার আকুতি চিকিৎসকের
- সেই রিকশাচালকের চোখের পানি আনন্দাশ্রুতে পরিণত করলেন এক তরুণ ব্যারিস্টার