সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক
আপডেট: ১৫:১৭, ৪ অক্টোবর ২০২১
বিলুপ্তপ্রায় ডাহুক পাখি ক্রয় করে জলাশয়ে অবমুক্ত (ভিডিও)
‘পাখিটি কেনার মতো তার কাছে কোনো টাকা ছিলো না। কিন্তু পাখিটিকে যে বাঁচাতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন আটশত টাকা।’
বিপন্ন পাখি ডাহুক। দ্রুত অবলুপ্তির তালিকায় এই পাখি। শিকারীর হাত থেকে ডাহুককে মুক্ত জীবনে ফিরিয়ে দেয়ার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়তেনিয়া পিয়া। পাখির জন্য তাঁর এই ভালোবাসায় অভিভূত পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য অধিকার রক্ষায় কাজ করা কর্মীরা।
আইনিউজের পাঠকের জন্য প্রিয়তেনিয়া পিয়া-এর সেই রুদ্ধশ্বাস অভিযানের কথা তুলে ধরা হলো।
গতকাল রাতে বাসায় ফেরার পথে এই বিলুপ্ত প্রজাতির ডাহুক পাখিটি আটকা অবস্থায় চোখে পড়ে। ছেড়ে দিতে বলায় তারা বলে না। কেন জিজ্ঞেস করায় বলে, এটা তারা ৮০০/- টাকায় বিক্রি করবে। আমি এই পাখির জন্য আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু সমস্যা হলো সেই ধরনের মানসিক অবস্থা আমার এখন নেই, মানসিক ভাবে মারাত্মক বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। আর যেখানে পাখিটি আটকা আছে সেটা আমার আবাসস্থলের কাছেই। এই এলাকা মারাত্মক রকম ভয়ংকর একটা জায়গায়। এখানে সবাই আমার বাবাকে চেনে। আইনগত ঝামেলায় এখন যেতে গেলে বেশ ভালো সমস্যা হবে আমার জন্য। আমি মানসিকভাবে নতুন কোন ঝামেলা আপাতত আর পোহাতে চাচ্ছি না।
সারারাত ছটফট করছি একে মুক্ত করার জন্য। সকালে আবার গিয়েছি এখন দরাদরি করে আপাতত এর দাম এনেছি ৬০০/- টাকায়। আমার কাছে মাত্র ২১৬/- টাকা আছে। কেউ যদি বাকি টাকাটা অনুদান হিসেবে দিতেন বা এমন ভাবে দিতেন পারেন যে আবার ফেরত দিতে হবে তাহলে আমি তাকে কিছুদিন পরে টাকাটা দিয়ে দিব।
সারারাত ছটফট করছি একে মুক্ত করার জন্য। সকালে আবার গিয়েছি এখন দরাদরি করে আপাতত এর দাম এনেছি ৬০০/- টাকায়। আমার কাছে মাত্র ২১৬/- টাকা আছে। কেউ যদি বাকি টাকাটা অনুদান হিসেবে দিতেন বা এমন ভাবে দিতেন পারেন যে আবার ফেরত দিতে হবে তাহলে আমি তাকে কিছুদিন পরে টাকাটা দিয়ে দিব। Promise by my heart. আমি কোনদিন এখন পর্যন্ত কারো সাথে কোন মিথ্যা ওয়াদা আর ছলচাতুরী করি নি। নির্দ্বিধায় আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আমি এই বিলুপ্ত পাখিটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছি। আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে, সে নিজের ঠোঁট দিয়ে তার পায়ে বাধা দঁড়ি টেনে খুলে চেষ্টা করছে দেখে। দয়া করে কেউ একটু সাহায্য করুন।
দ্রুত অবলুপ্তির তালিকায় এই ডাহুক। শিকারিদের ফাঁদ, এই পাখির মাংস খাওয়ার প্রবণতা, জলাভূমি নষ্ট করে ফেলা ও তাদের খাদ্যভান্ডরে টান পড়ায় এদের সংখ্যা কমে আসছে।
ডাহুক জলের পাখি। খুব ভীরু। জলাভূমির আশপাশের ঝোপঝাড়ে আবাস করে থাকা এ পাখিটি মাঝারি আকারের। পায়ের আঙুল বেশ লম্বা। পিঠের রং ধূসর থেকে খয়েরি কালো। মাথা ও বুক সাদা। লেজের নিচের অংশে লালচে আভা। ঠোঁট হলুদ রঙের, ঠোঁটের ওপরে লাল রঙের ছোট দাগ আছে।
পানিই এদের প্রধান আশ্রয়। পুকুর, খাল-বিল, জলাভূমি ও নদীর গোপন লুকোনো জায়গা এদের খুব প্রিয়। মাটিতে, ঝোপের তলায় এরা বাসা তৈরি করে। ৬ থেকে ৭টি ডিম পাড়ে। ডিমের রং ফিকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা।
রোববার (৩ অক্টোবর) বেলা ২টা ১০ মিনিটে ফেসবুকে এই পোস্টটি দেন সিলেটের ক্রাফট ডিজাইনার ও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রিয়তেনিয়া পিয়া। তখন তিনি খাচায় বন্দি পাখিটির ছবিও পোস্ট করেন।
শিকারির কাছ থেকে টাকা দিয়ে পাখি কিনে জলাশয়ে অবমুক্ত (ভিডিও)
প্রায় এক ঘন্টা পর ৩ টা ২৬ মিনিটে তিনি পাখির ছবিসহ আবার পোস্ট দেন। তিনি লিখেন-
পাখিটা এখন আমার কাছে।
পোস্ট দেয়ার সাথে সাথে Gk Zilany ভাইয়া কল দিয়ে বলে টাকা দিচ্ছি তুই তোর পাখি উদ্ধার কর তাড়াতাড়ি। আমি টাকা পেয়েই দৌড়... বাসায় এসে দেখি রাতিন রহমান আর Black Sail ভাইয়া পাখির উদ্ধারের জন্য নক দিয়েছি। Ripon Dey দাদাও কে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারা পাশে থাকেন বলেই এইসব ঝামেলা করতে সাহস পাই। আমার এইসব যন্ত্রণা দেয়ার কাজ মাঝেমধ্যে সহ্য করে নিয়েন।
আমি আসলে এখন মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত, ক্লান্ত।এই বিপর্যস্ত অবস্থায় এটা উদ্ধার করতে কোন ঝামেলা করতে চাই নি। আবার তার কষ্টও সহ্য করতে পারছিলাম না। এই জন্যই পোস্ট দিয়েছি। বাসার কাছেই দোকানটা। ওখান থেকে মাঝেমধ্যে মুরগী কিনি। মাস্ক পরে থাকায় উনি আর দীর্ঘ ৯ মাস না দেখায় আমাকে ঠিক ভাবে ধরতে পারে নাই। তারপরও প্রায় চিনে ফেলেছিল।
আমি এখন পাখিটা একটা বিলের কাছে নিয়ে ছেড়ে দিতে চাচ্ছি। সিলেটে জন্ম হলেও এখানকার জায়গা সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। কেউ যদি ১/২ ঘন্টা কোন একটা বিলের কাছে নিয়ে যেতেন তাহলে আমারে পাখিটাকে ওখানে ছেড়ে দিতাম। ছেড়ে দেয়ার পর একটু সময় ওখানে বসতাম। আমার ভীষণ মন খারাপ, একটু নিশ্বাস ফেলতে চাচ্ছি। কমেন্ট বক্সে পাখি ধরার লোকের সাথে একটু কথার অংশ দিয়ে দিলাম।
এবার সন্ধ্যা ৭টা ১১টা মিনিটে তাঁর ভিডিওসহ পোস্ট
বিলুপ্ত প্রায় ডাহুক পাখিটাকে অবমুক্ত করা হলো। সাথে ছিলেন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারী Samir Mahmud এবং বাপার সাধারণ সম্পাদক Abdul Karim Kim আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃজ্ঞতা জানাই Gk Zilany ভাইয়াকে যে দেখার সাথে সাথেই ফোন করে পাখিটি আনতে বলল, এরপর রাতিন রহমান Black Sail Ripon Dey যারা হাত বাড়িয়ে দিল। আমি আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি ইনট্রোভার্ট মানুষ। মানুষের সাথে মিশতে কথা বলতে থতমত খেয়ে যাই। সিনিয়র সাংবাদিক সামির এবং কিম ভাইয়া যে হুট করে আমাকে এইভাবে লাইভে নিয়ে আসবে বুঝতে পারি নাই। আপনারা যখন বলেছেন এই রকম পাখি আটকা চোখে পড়লে আপনাদের সাথে সাথে জানাতে তাহলে আপনাদের সাথে বন বিভাগের সদস্যরা আসবে তখন আমি আরো সাহস পেলাম প্রাণী এবং প্রকৃতির জন্য আরো কিছু করার। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
সবাই গাছপালা, প্রাণী এবং প্রকৃতি ভালোবাসুক। আমরা সবাই শুদ্ধ, শুভ্র এবং নির্মল হই। মানবিক হই।
আইনিউজ ভিডিও
জলময়ূরের সাথে একদিন | বাইক্কা বিল | ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি
হাইল হাওরের বাইক্কাবিলে পর্যটক আর পদ্মটুনার ভিডিও ভাইরাল
- ঢাকার হানিফ, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন, সিলেটের ছিলেন কামরান
- নৌযান দুর্ঘটনায় পরিবারকে হারানো সেই মিমের দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবীব
- পুলিশের চোখের জলে উন্মোচন হল জোড়া খুনের রহস্য
- ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত বানাতে চা শ্রমিক মায়ের অদম্য যুদ্ধের গল্প
- পুলিশ কর্মকর্তার ডায়েরি-২
জাদরেল বাবার দুই মেয়ে অপহরণের নাটকীয় কাহিনী - গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে এক করোনাযোদ্ধার আর্তি
- রোজাদার রিকশাওয়ালাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করলেন প্রভাবশালী পথচারী
- হাসি ভরা মুখ নিয়ে ভাইরাল কানাডার যুবক
- কষ্ট লাঘবকারি চিকিৎসার আকুতি চিকিৎসকের
- সেই রিকশাচালকের চোখের পানি আনন্দাশ্রুতে পরিণত করলেন এক তরুণ ব্যারিস্টার