মোয়াজ্জেম রিয়াদ
আপডেট: ১০:৩৯, ৩১ জানুয়ারি ২০২২
পর্যটকদের ক্ষণিকের আনন্দে ধ্বংস হল গঙ্গালতা
গঙ্গালতা দিয়ে তৈরী করা মালা
শিক্ষিত পর্যটকদের মাথায় ফুলের মালা হিসেবে নির্বিচারে সাগরলতার ব্যবহার করতে গিয়ে কক্সবাজারের ইনানী ও পাটুয়ারটেক সমুদ্র সৈকতের সমস্ত সাগরলতা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, কোথাও তার লতা কেন শেকড়ের অস্তিত্বও রাখেনি। তারা শেখড় সহ তুলে মালা বানিয়ে মাথায় দিয়ে ছবি তোলার পর তা আবার সমুদ্র সৈকতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে যাওয়া অমানুষগুলোর নাম কখনো পর্যটক হতে পারেনা !! কেউ প্রতিবাদ করেনি, কেউ বাধাও দেয়নি, কেউ বলেওনি বরং যারা জানে কতবড় অন্যায় করছে তারা নিরব খুনীর মত চুপচাপ নিরবতার মাধ্যমে অন্যায়কে মৌনসম্মতি জানিয়েছে, কারন সে শিক্ষিত ছিল !!
তবে এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহ তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। ইনানী ও পাটুয়ারটেক সমুদ্র সৈকতে নেই কোন সৌন্দর্য নজরদারী ও পরিচ্ছন্নতা এবং সুষ্ট ব্যবস্থাপনা। বরং পর্যটকদের জিম্মি করে দুই থেকে তিনগুণ ভাড়া নেওয়া ও ইজি বাইকগুলোর চালকদের ব্যবহার দেখলে কোন পর্যটক দ্বীতিয়বার ইনানী বা পাটুয়ারটেক যাবার কথা মুখে আনবেনা!!
- আরও পড়ুন - লুঙ্গি নিয়ে লিখতেই পুরুষজাতি ক্ষেপে আগুন
কে হচ্ছেন তালিকাভুক্ত নিকৃষ্ট পর্যটক
কয়েকশত অভিজাত নারীর ছবি আছে এসব মালা মাথায় দিয়ে ছবি তোলার, চাইলে তাদের মান ইজ্জত ফালুদা করতে পারতাম, তবে আগামীকাল থেকে যে সব পর্যটক এসব মাথায় দিয়ে ছবি তুলবে তাদের প্রতিটি ছবি ১০০ টাকা করে স্থানীয় ক্যামেরাম্যান থেকে কিনে পোষ্ট করব বলে ঘোষনা দিলাম নিকৃষ্ট পর্যটক হিসেবে। ছবি যুক্ত তালিকা প্রকাশ করব নিকৃষ্ট পর্যটকদের, সে যত গুনধর শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত হোক তার মাথায় নিকৃষ্ট মালা সহ পোষ্ট করব।
কদিন আগেও সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে ব্লক দিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক রক্ষা করতে ও সমুদ্রের ভাঙ্গন ঠেকাতে, সেনাবাহিনীর ১৬ ইসিবি সাগরলতা রোপন করল, সকাল বিকাল পানি দিয়ে যত্ন করে বড় করল, লকডাউনে তা সজীব হয়ে উঠেছিল, আজ তোমরা তা নিশ্চিহ্ন করে দিলে ?
এক সময় এই স্থান গঙ্গালতায় পরিপূর্ণ ছিল
কে এই সাগরলতা ওরফে গঙ্গালতা ?
সাগরলতা বা গঙ্গা লতা বা Rail Road Vain, যার বৈজ্ঞানিক নাম Ipomea Pes Caprae. মূলত সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ীকে সমৃদ্ধ করে প্রাকৃতিক বেষ্টনী গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলকে রক্ষা করে। তাছাড়া সাগরলতার সবুজ পাতা মাটিকে সূর্যের কিরণ ও ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি থেকে এমনভাবে রক্ষা করে, যাতে সূর্যের তাপ মাটি থেকে অতিরিক্ত পানি বাষ্পীভূত করতে না পারে। এতে মাটির নিচের স্তরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াসহ অন্য প্রাণীর জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে।
সাগরলতা যখন বালিয়াড়ি ও প্রাকৃতিক বেষ্টনী
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সৈকত জুড়ে গোলাপি-অতিবেগুনি রঙের ফুলে ভরা সাগরলতা দেখা যেত উচু নিচু বিশাল বালিয়াড়ি জুড়ে। যা পর্যটকদের কাছেও ছিল অন্যরকম আকর্ষণ। অথচ অপরিকল্পিত পর্যটন শিল্প, সমুদ্র ষৈকতের দখল দূষণে মারাত্বকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে আজ সাগর লতা বা গঙ্গা লতা। তাই তো ককসবাজার শহরের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে সুগন্ধা বীচ পর্যন্ত এলাকার ঝাউবন সহ বিশাল অংশ সাগরে তলিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে এই ইকোসিস্টেমে সৃষ্ট পরিবেশের বিভিন্ন পোকা ও কীটপতঙ্গ, শামুক ঝিনুক লাল কাঁকড়া সহ সামুদ্রিক পাখিদের বেঁচে থাকার অন্যতম উৎস।
সমুদ্রের ভাঙ্গন ঠেকাতে সাগরলতা
উন্নত বিশ্বের গবেষণালব্ধ ফলাফলে সাগরলতার মতো দ্রাক্ষালতা সৈকত অঞ্চলে পরিবেশগত পুনরুদ্ধার ও মাটির ক্ষয় রোধের জন্য একটি ভালো প্রজাতি বলে প্রমাণিত। সাগরলতা ন্যূনতম পুষ্টিসমৃদ্ধ বেলে মাটিতে বেড়ে উঠতে পারে। তার পানির প্রয়োজনীয়তাও কম হয়। উচ্চ লবণাক্ত মাটিও তার জন্য সহনশীল। এর শিকড় মাটির তিন ফুটের বেশি গভীরে যেতে পারে। এটি দ্রুতবর্ধনশীল একটি উদ্ভিদ। বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ না হলে লতাটি চারিদিকে বাড়তে থাকে এবং সর্বোচ্চ সামুদ্রিক জোয়ারের উপরের স্তরের বালিয়াড়িতে জাল বিস্তার করে মাটিকে আটকে রাখে। এরপর বায়ু প্রবাহের সঙ্গে আসা বালি ধীরে ধীরে সেখানে জমা হয়ে মাটির উচ্চতা বাড়ায়। এতে সাগরলতার ও সৈকতের মাটির স্থিতিশীলতা তৈরি হয়।
মোয়াজ্জেম রিয়াদ, পরিবেশকর্মী
- ঢাকার হানিফ, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন, সিলেটের ছিলেন কামরান
- নৌযান দুর্ঘটনায় পরিবারকে হারানো সেই মিমের দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবীব
- পুলিশের চোখের জলে উন্মোচন হল জোড়া খুনের রহস্য
- ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত বানাতে চা শ্রমিক মায়ের অদম্য যুদ্ধের গল্প
- পুলিশ কর্মকর্তার ডায়েরি-২
জাদরেল বাবার দুই মেয়ে অপহরণের নাটকীয় কাহিনী - গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে এক করোনাযোদ্ধার আর্তি
- রোজাদার রিকশাওয়ালাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করলেন প্রভাবশালী পথচারী
- হাসি ভরা মুখ নিয়ে ভাইরাল কানাডার যুবক
- কষ্ট লাঘবকারি চিকিৎসার আকুতি চিকিৎসকের
- সেই রিকশাচালকের চোখের পানি আনন্দাশ্রুতে পরিণত করলেন এক তরুণ ব্যারিস্টার