হেলাল আহমেদ, আইনিউজ
ডিপ্রেসন এবং সহানুভুতিশীলতা
লিখেছেন অ্যান্ড্রোস লিহন
আপনি চাইলে পৃথিবীতে শত শত দার্শনিক ও বিজ্ঞানী তৈরি করতে পারেন। আবার আপনি চাইলে পৃথিবীর অনেক সম্ভাবনাময় মস্তিষ্ককেও নিজের অজান্তে হত্যা করতে পারেন। মানুষকে হত্যা করার জন্য পারমাণবিক বোমা প্রয়োজন নেই। একটি উপেক্ষাই যথেষ্ট।
আলবার্ট আইনস্টাইনও বেঁচে থাকতে চাননি। জীবনের এক পর্যায়ে তিনি উপেক্ষা, একাকীত্ব আর দারিদ্রতায় অতিষ্ট হয়ে সুইসাইড করতে চেয়েছিলেন। তিনি অনুতাপ করে বলেছিলেন, আমার পিতামাতার দূর্ভাগ্যজনক দারিদ্রতা, তারা বহু বছর একটি সুখের মুহূর্ত পায়নি, আমার ভেতর ভারী হয়ে ওঠে, আমি কিছুই না পরিবারের একটি বোঝা ছাড়া; এটাই ভালো হতো যদি আমি জীবিত না থাকতাম!
সেদিন তার একাকীত্বে তার এক বন্ধু তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন! যদি সেদিন আইনস্টাইনের মৃত্যু হতো তবে তার বন্ধুকে লেখা এ চিঠিই হতো তার সুইসাইড নোট! কবি জীবনানন্দ দাস? তিনিও সুইসাইড করেছিলেন একাকীত্ব ও ডিপ্রেসন থেকে!
“পাশে আছি’’ বলা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
সোশ্যাল নিউরসায়েন্স আমাদের বলছে, মানুষের মস্তিষ্কের সঠিক ফাংশনিং-এর জন্য শুধু খাদ্য, পানীয় ও অক্সিজেন যথেষ্ট নয়। তার মস্তিষ্ককে সুস্থ্য রাখার জন্য আপনার নিউরনও প্রয়োজন। কেবল আপনি যদি কারও একাকীত্ব ও অসহায়ত্বে এগিয়ে গিয়ে সহানুভূতির সুরে বলেন “পাশে আছি’’ তাহলেও সে মানুষটি বেঁচে যেতে পারে।
অনেক সময় শুধু একটি শব্দ জীবন আর মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে দিতে পারে! নিউরন যদি নিউরনকে না পায় তবে সমস্ত ইউনিভার্স তার কাছে থাকার পরও সে সার্ভাইভ করতে পারে না!
এ পৃথিবীতে যত কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক অথবা বিজ্ঞানী সফল হয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকের পাশে কিছু না কিছু সহানুভূতিশীল নিউরন ছিল , যারা বলত, ভয় পেওনা, তোমার পাশে আছি।
কিন্তু সমস্যা হলো, আমরা অদ্ভুত কোনো এক কারণে মানুষের মনকে স্বীকার করতে চাই না। আমাদের মুখে যদি ছোট একটা ব্রণ ওঠে, তার জন্য আমরা অস্থির হয়ে যাই কিন্তু কারও মস্তিষ্কের নিউরাল সার্কিট যদি সোশ্যাল ডেপ্রিভেশনের কারণে অল্টার হয়েও যায়, সে যদি সুইসাইড করার সিদ্ধান্তও গ্রহণ করে আমরা তাকে একবারের জন্য বলতে পারি না, কষ্ট পেওনা, তোমার পাশে আছি।
কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার এবং অজানা নৃশংস কাহিনী
ইঁদুরের উপর পরীক্ষা, আশ্চর্য ফলাফল!
১৯৯০ সালে বিজ্ঞানীরা এক্সপেরিমেন্ট করে দেখেছিলেন, অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কের মধ্যে সরাসরি পরিমাপযোগ্য কোনো পরিবর্তন তৈরি করে কিনা। তারা ইঁদুরদের উপর এ পরীক্ষা চালিয়েছিলেন। কিছু ইঁদুরকে খেলনা ও চলমান চাকা দিয়ে পূর্ণ সমৃদ্ধ পরিবেশে রাখা হয়। আর কিছু ইঁদুরকে শূন্য ও একা একটি খাঁচায় বন্ধী করে রাখা হয়। এর ফলাফল ছিল খুবই মারাত্মক।
এ এক্সপেরিমেন্ট ইঁদুরদের মস্তিষ্কের স্ট্র্যাকচারকে সরাসরি অল্টার করে দিয়েছিল যা তাদের শিক্ষা ও মেমরির সাথে সম্পর্কযুক্ত। যে সকল ইঁদুর সমৃদ্ধ পরিবেশে ছিল তাদের মস্তিষ্কের ডেনড্রাইড বিস্তারিত ও সতেজ। অনেকটা গাছের সমৃদ্ধ শাখা-প্রশাখার মতো।
অন্যদিকে পরিবেশগত বঞ্চনার শিকার ইঁদুরদের নিউরন অস্বাভাবিকভাবে সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল, তাদের কোনোকিছু শিখতে ও মনে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল।
একই ফলাফল পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয়েছিল পাখি, বানর ও অন্যান্য ম্যামালদের ক্ষেত্রে। যদি একাকীত্ব ও বঞ্চনার কারণে আইনস্টাইন ও নিউটনের ডেনড্রাইডও শুকিয়ে যায়, তাদের মেমরি ও শিক্ষা কী তাদের বাঁচাতে পারবে?
বিজ্ঞানীরা কেন ঈশ্বর বিশ্বাস করে?
মানুষের ক্ষেত্রে এ ফলাফল কতটা প্রযোজ্য?
মানব মস্তিষ্কে পরিবেশের প্রভাব পরীক্ষা করার জন্য ১৯৯০ সালে স্কুল এবং কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের উপর একটি এক্সপেরিমেন্ট পরিচালিত হয়। এ পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, কলেজ শিক্ষার্থীদের ভাষার সাথে সম্পৃক্ত ব্র্যান ডেনড্রাইড স্কুল শিক্ষার্থীদের তুলনায় বিস্তারিত! এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে মস্তিষ্ক যে পরিবেশে বাস করে সে পরিবেশকে রিফ্লেক্ট করে।
আমাদের মস্তিষ্কের সুস্থ্য বিকাশের জন্য সমাজের মানুষের সহানুভূতি ও ভালোবাসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দার্শনিক মার্টিন হেইডেগার বলেছিলেন, The self Doesn’t exist in a Vacuum।
নিউরোসায়েন্টিস্ট নাওমি আইজেনবার্গার পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করেছিলেন, আমরা যখন সমাজ থেকে প্রত্যাখ্যাত হই তখন আমাদের মস্তিষ্কের সে অ্যারিয়া সক্রিয় হয় যা কোথাও কেটে গেলে সক্রিয় হয়। কাউকে গাড় ধাক্কা দিয়ে সমাজ থেকে বের করে দেয়াটাই শুধু প্রত্যাখ্যান নয়। আপনার নিরবতাকেও আপনার সমাজের একজন মানুষের মস্তিষ্ক সামাজিক প্রত্যাখ্যান হিসেবে অনুবাদ করতে পারে। সে একই ব্যাথা পায় যে ব্যাথা অনুভূত হয় কোথাও পুড়ে গেলে!
কাউকে পেটালে মস্তিষ্কের যে অংশ সক্রিয় হয়, কাউকে সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যান করলেও যদি একই অংশ সক্রিয় হয় তবে প্রতিনিয়তই আমরা একে অন্যকে পেটাচ্ছি। আমরা ফিজিক্যালি হিট না করেও নিউরোকেমিক্যালি একে অন্যকে হিট করছি। আমরা যে কতটা আনফিলিং ও সেলফিশ সেটা বুঝতে হলে নিউরোকেমিক্যাল স্টেট থেকে পরিমাপ করতে হবে, এক্সটারনালি নয়।
মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীলতা প্রকাশ করুন
এ পৃথিবীতে যত কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক অথবা বিজ্ঞানী সফল হয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকের পাশে কিছু না কিছু সহানুভূতিশীল নিউরন ছিল , যারা বলত, ভয় পেওনা, তোমার পাশে আছি।
“Taare Zameen Par” (জনপ্রিয় একটি হিন্দি চলচ্চিত্র) দেখে আমরা অনেকেই অশ্রু ঝরাই কিন্তু বাস্তব জীবনে আমরা আমাদের সিম্পেথি অ্যাপ্লাই করি না, আমরা মানুষের দূর্বলতা নিয়ে ট্রল করি, যদিও এ মানুষ প্রকৃতির পনের বিলিয়ন বছর সময়ের অবদান।
বিজ্ঞানমনস্ক বলুন আর সাধারণ মানুষই বলুন আমরা সুযোগ পেলেই অন্যকে আঘাত করে সুখ পাই। আপনি যদি শুধু আপনার সিম্পেথিকে মানুষের বিকাশের জন্য সঠিকভাবে অ্যাপ্লাই করতে পারেন তবে আপনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মস্তিষ্কগুলোর নির্মাতা হতে পারেন বা গড বিল্ডার!
মনে রাখবেন, আইনস্টাইনদের তৈরি করতে হয়, এরা জন্মায় না...
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
- ‘গাছ হেংলানেছে- পয়সা মিলেগা’ : চা শ্রমিক ও চা শিল্প
- পোশাক নয়, নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ জরুরি
বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News
- ঢাকার হানিফ, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন, সিলেটের ছিলেন কামরান
- নৌযান দুর্ঘটনায় পরিবারকে হারানো সেই মিমের দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবীব
- পুলিশের চোখের জলে উন্মোচন হল জোড়া খুনের রহস্য
- ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত বানাতে চা শ্রমিক মায়ের অদম্য যুদ্ধের গল্প
- পুলিশ কর্মকর্তার ডায়েরি-২
জাদরেল বাবার দুই মেয়ে অপহরণের নাটকীয় কাহিনী - গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে এক করোনাযোদ্ধার আর্তি
- রোজাদার রিকশাওয়ালাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করলেন প্রভাবশালী পথচারী
- হাসি ভরা মুখ নিয়ে ভাইরাল কানাডার যুবক
- কষ্ট লাঘবকারি চিকিৎসার আকুতি চিকিৎসকের
- ছবি আঁকা পাগল লোকটি