ইপা বড়ুয়া
একজন নারীর ক্ষমতায়ন | নারীর গল্প
আমি ইপা বড়ুয়া, আজ আমার নিজের গল্প বলছি। আমি যদিও এখন শ্রীমঙ্গলে বসবাস করি তথাপি আমার পিতৃভূমি পার্বত্যের সৌন্দর্য বিধৌত চট্টগ্রাম জেলা। হাজারো স্মৃতির ভাজে কিছু স্মৃতি আজও তাজা হয়ে আছে আমার জীবন জুড়ে। প্রত্যহ ভোরে পদতল স্পর্শ করা শিশিরের মতো আমার সেসব স্মৃতি সতেজ, সজীব।
আমার এখনো মনে পড়ে আমার প্রথম মেয়েকে নিয়ে যেদিন ঢাকায় গিয়েছিলাম। ওর ভর্তি পরীক্ষা ছিলো। রাজধানীর বিশালতা আর ব্যস্ততায় সেদিন আমরা মা-মেয়ে কাঁধে, হাতে, ব্যাগ নিয়ে ক্লান্তিকর শরীরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম যেন। কিন্তু ক্লান্তি সেদিন আমাদেরকে ঘায়েল করতে পারেনি। সেদিন ব্যস্ততম সড়কে দুটো বাচ্চাকে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে রেখে অচেনা ঢাকায় পথ চিনে চিনে তবু এগিয়ে যাচ্ছিলাম। মেয়ে দুটিকে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দিচ্ছিলাম না তাদের দুশ্চনিতায় মায়ের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছিলো। আমার সন্তানদের স্বপ্নের প্রতি আর তাদের প্রতি বিশ্বাস সেদিন আমাকে হাল না ছাড়তে সহযোগিতা করেছে। আমি হাল ছাড়িনি। আমি মেয়েদের চোখের আড়ালে নিজের চোখের পানি মুছেছি, ওদেরকে তা দেখাই নি। ওদেরকে দেখিয়েছি সাহস, ওদেরকে শিখিয়েছি বিরূপ এই সমাজে টিকে থাকতে সাহস আর সৎ উদ্দমটা প্রয়োজন।
আমার মেয়ে দুইটি কাল যতোখানি ছোট ছিল আজ আর তা নয়। তারাও বড় হয়েছে। মঞ্চ নাটক, আবৃত্তি, সঙ্গীত, চিত্রকলা নানা বিষয়ে তাদেরকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। যার অনেকটা পূরণ হয়েছে আবার অনেকটা অপূর্ণই রয়ে গেছে। আশা করি আমার সাহসী মেয়েরা সেই অপূর্ণতাটুকুও আসন্ন ভবিষ্যতে পূর্ণ করবে। এ দেশের একজন স্বাধীনচেতা নারী হিসেবে আমি চাই আমি যেভাবে আমার পুরোনো সমাজ কাঠামো থেকে নিজেকে নিজেকে আলাদা স্বতন্ত্র্য হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি, আমি যেমন কারো সম্মুখে মাথা নত করিনি আমার মেয়েরাও তেমনি হবে। তারাও তেমনি শির উঁচু রেখে এ পৃথিবীতে বিচরণ করবে।
আমি কখনো এটা চাই না আমার মেয়েদের অনেক ধনসম্পদ হোক; কিন্তু এটা অবশ্যই চাই যেন অনেক আত্মসম্মানবোধ সম্পন ভালো মানুষ হতে পারে তারা। তারা দেশের কল্যানে অংশ নেবে এই স্বপ্নই মা হিসেবে সন্তানদের নিয়ে দেখে যাই।
আমার শান্তির আশ্রয় আমার আশ্রয়স্থল, আমার শহর। আমি পরোয়া করি আমার শহরের জন্য। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে চলতে গেলে আমাদের জানতে হবে কীভাবে একটি দলে দক্ষতার সাথে নিজেদের গুছিয়ে নিতে হয়। আমাদের শহর আগামীকালের জন্য, আমাদের সন্তানদের জন্য আরো ভালো করে গড়ে তোলাটা আমাদের দায়িত্ব।
আমার কাছে বাড়ি মানে সেই জায়গা যে জায়গা শুধুই ভালোবাসা কেন্দ্রীক। দিন শেষে সব কাজ শেষে যেখানে ছুটে যাই। আমার এটা ভাবতে ভালো লাগে যে, হ্যাঁ আমি পেরেছি। অনেক কুটিল পথপরিক্রমা করে নাগরিক সমাজে আমি একটা বাড়ি বানিয়েছি। যা আমাকে পরম শ্রান্তি এনে দেয়। আমি মনে করি পৃথিবীর মঙ্গল কামনায় যেকোনও কাজ শুরুর সূচনাটা হওয়া উচিত বাড়ি থেকে, নিজেদের ঘর থেকে।
আমি চাই প্রতিটি নারী তাদের বাক স্বাধীনতা ফিরে পাক। এদেশে নারীদের বাক স্বাধীনতা নিয়ে বহুকিছু বলা যায়, লেখা যায়। সে যাই হোক না কেন, প্রত্যেক পুরুষ এবং নারী উভয়কে রক্ষা করতে শেখা প্রয়োজন মানুষ হিসেবে তাদের অধিকার।
এ কথা অনস্বীকার্য একটি দেশের বা সমাজের সংস্কৃতিতে সেই সমাজের নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ থাকে। আবার এই সংস্কৃতি সমাজ বিনির্মাণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি সুন্দর সমাজের পেছনে সুন্দর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গুরুত্ববহ। সংস্কৃতি ছাড়া সমাজ টিকে থাকতে পারে না। আর সুন্দর সাংস্কৃতিক পরিবেশের জন্য দরকার নারী-পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ, পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ এবং দক্ষতা প্রকাশের সমান সুযোগ। আমরা একে অপরকে প্রতিপক্ষ না বরং আমরা একে অপরের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শিখে যাচ্ছি।
আমাদের জীবন, আমাদের সাফল্য, আমাদের ব্যর্থতা সবকিছু আমাদের স্বানন্দে উদযাপন করা উচিত। জীবনের প্রতিদিন এবং প্রতিটি মুহূর্ত উদযাপন করুন।
লেখক পরিচিতি- ইপা বড়ুয়া, সঙ্গীতশিল্পী, নারী অধিকারকর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মী
- ঢাকার হানিফ, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন, সিলেটের ছিলেন কামরান
- নৌযান দুর্ঘটনায় পরিবারকে হারানো সেই মিমের দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবীব
- পুলিশের চোখের জলে উন্মোচন হল জোড়া খুনের রহস্য
- ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত বানাতে চা শ্রমিক মায়ের অদম্য যুদ্ধের গল্প
- পুলিশ কর্মকর্তার ডায়েরি-২
জাদরেল বাবার দুই মেয়ে অপহরণের নাটকীয় কাহিনী - গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে এক করোনাযোদ্ধার আর্তি
- রোজাদার রিকশাওয়ালাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করলেন প্রভাবশালী পথচারী
- হাসি ভরা মুখ নিয়ে ভাইরাল কানাডার যুবক
- কষ্ট লাঘবকারি চিকিৎসার আকুতি চিকিৎসকের
- সেই রিকশাচালকের চোখের পানি আনন্দাশ্রুতে পরিণত করলেন এক তরুণ ব্যারিস্টার