মো. রওশান উজ্জামান রনি
আপডেট: ২২:৫৩, ৯ অক্টোবর ২০২৩
ফেসবুক সতর্ক বার্তা দিলেন ফেসবুকের সবেক কর্মকর্তা
ফেসবুক সতর্ক বার্তা | ছবি- সংগৃহীত
ফেসবুক সতর্ক বার্তা নিয়ে পোস্ট সবাই দিচ্ছে। আসলে আপনি কতটুকু সতর্ক। এই মুহূর্তে ঠিক কি করছেন? নিশ্চয়ই মুঠো ফোনটি হাতে নিয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করে সময় কাটাচ্ছেন। আসলে আমরা তো বর্তমানে দিনরাত একটু সময় পেলেই হয়তো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, টিক টক অর্থাৎ সহজ ভাবে বলতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়াতে খুব বোর হয়ে আছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা এমন ভাবে জড়িয়ে গিয়েছি যে দৈনন্দিন জীবন যাপনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। প্রতিদিন অন্ততপক্ষে একবার হলেও আমরা ফেসবুকটা একটু ঘেঁটে দেখছি। তবে এই ফেসবুকে আপনি কিংবা আমি আমরা কেউই একদম নিরাপদ নই। আর একথা কিন্তু আমি বলছি না একথা বলছেন খোদ ফেসবুকের সবেক কর্মকর্তা ফ্রান্সেস হাউগেন।
ফেসবুক সতর্ক বার্তা দেওয়ার জন্যই তাকে বলা হয় ফেসবুক উইসেল গ্লোওয়ার। আর তিনি নিজেও ফেসবুক থেকে চাকরি ছেড়েছেন। কিন্তু কেন? ফেসবুক নিয়ে কি ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করেছেন তিনি? ফেসবুক ব্যবহারে আরো সতর্ক থাকতে কি বলেছেন সংশ্লিষ্টরা তাই জানাবো আজকের আর্টিকেলে।
শুরুতেই ফ্রান্সেস হাউগেন সম্পর্কে জানা যাক। ফেসবুক গ্লোয়ার হিসেবে পরিচিতি পেলেন কিভাবে? আর কেনই বা তিনি চাকরি ছাড়লেন? উইসেল গ্লোওয়ার মানে তথ্য ফাঁসকারী। স্বচ্ছতা এবং জবাবদেহিতার স্বার্থে জনসাধারণ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে মূলত উইসেল গ্লোওয়াররা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন। ঠিক সেই রকমই ফেসবুকের ভেতরকার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁসকারী ফ্রান্সেস হাউগেন। তিনি ফেজবুক এর সাবেক কর্মচারী। ২০২১ সালের অক্টোবরে ফেসবুকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গোপনীয় কিছু নথি ফাঁস করেন হাউগেন।
ফেসবুক সতর্ক বার্তা দিয়ে তখন তোলপাড় শুরু হয়। তিনি তখন দাবী করেন ফেসবুকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জানার পরেও সে বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এ যেমন মিথ্যা ও কোনো একটি গোষ্ঠীর ক্ষতি হতে পারে জেনেও সেসব তথ্য প্রচার বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ফেসবুক। হাউগেন বলেন ব্যবহারকারীদের অভিযোগ আমলেই নেয় না ফেসবুকের। আর এই বিষয়গুলো ফ্রান্সেস হাউগেনকে হতাশ করে। আর তাই সেই জন্যই তিনি ফেসবুকের চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০২১ সালে মার্কিন কংগ্রেসে সাক্ষ্যদেন ফ্রান্সেস হাউগেন। সেখানেও তিনি এই উদ্বেগ তুলে ধরেন এবং ফেসবুকের মত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর আরো স্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রনের পক্ষে কথা বলেন। তার মতে ফেসবুক ব্যবহার যেকোনো ব্যক্তিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। আঠারো বছরের কম বয়সেরা যেন ফেসবুক ব্যবহার থেকে বিরত থাকে সেই পরামর্শও দেন তিনি। হাউগেনএর অভিযোগ ছাড়াও ফেসবুকের বিরুদ্ধে আরো নানা ইস্যুতে সমালোচনা দেখা গেছে। যে কারণে খোদ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মার্জাকারবার্কেও মার্কিন আন্তনায় তাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
কেন সমালোচিত ফেজবুক? গোপনীয়তা ভঙ্গ, মিথ্যা খবর প্রচার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব সহ নানা কারণে সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে Fফেজবুক। আজকাল ফেজবুক ব্যবহারে যে যত বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সে তত বেশি খ্যাতির বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। আর আমরা প্রায় দেখছি যে ফেজবুক এর ID hack হচ্ছে জনপ্রিয় কোনো ব্যক্তির নামে ফেক আইডি কিংবা ভুয়া আইডি দিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম করা হচ্ছে। এছাড়া আমাদের গোপনীয়তা রক্ষার কথা থাকলেও এটি মেনে চলতে পারেনি ফেজবুক। ফেসবুক সতর্ক বার্তা দিয়ে এই বিষয়টিও সামনে এনেছেন ফ্রান্সেস হাউগেন। কিভাবে গোপনীয়তা নষ্ট হচ্ছে অনুমতি ছাড়াই গোপনীয় তথ্য সংরক্ষণ করছে ফেজবুক। অর্থাৎ আপনার কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই যে কোন সময় অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে অডিও রেকর্ড করতে পারবেন। আপনার অগোচরে মোবাইলের ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি এবং ভিডিও ধারণ করার ক্ষমতাও রাখে।
ফেসবুক সতর্ক বার্তা -ফেসবুক কি আমাদের কথা শোনে? ফেজবুকে আমরা আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে যেসব কথা বলি তা কি ফেজবুক কর্তৃপক্ষ শোনে? হ্যাঁ এটা নিয়েও বিতর্ক আছে। ২০১৯ সালে bloomberg এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেজবুক তার মেসেঞ্জার অ্যাপ ব্যবহারকারীদের কথা শোনার জন্য জনবল নিয়োগ করেছে। অনেকের বিশ্বাস স্মার্ট ফোনের মাইক্রোফোন ব্যবহার করে ফেসবুক কথা শোনে এবং সেই অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখায়। আর এটির সূত্রপাত ঘটে ২০১৪ সাল থেকে। এই বছর ফেসবুকে একটি ফিউচার চালু করে যেখানে ব্যবহারকারীকে তার ফোনের মাইক্রোফোন ব্যবহারের অনুমতি ফেজবুক কে দিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে ফেজবুক সতর্কও করে। এরপর থেকেই মাইক্রোফোন ব্যবহারের অভিযোগ আসতে থাকে।
মার্কিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শ প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ আমলেটিকা প্রায় পাঁচ কোটি Facebook ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে বলে অভিযোগও আছে। এই নিয়ে ২০১৮ সালে ফেজবুক এর প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকেও মার্কিন সিনেটরদের মুখোমুখি হতে হয়। তাছাড়া আরো কিছু বিষয় আছে যার কারণে ফেজবুকk ব্যবহারের ঝুঁকি আছে। যেমন ব্যক্তিগত তথ্যের উপর ফেজবুক এর হস্তক্ষেপ। একান্তই ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ব্যবসা করছে ফেজবুক। তার চেয়েও মজার ব্যাপার হলো আপনি আপনার নিজের অজান্তেই তাদেরকে অনুমতি দিচ্ছেন আপনার তথ্য নিয়ে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনের সময় ট্রান্স এন্ড কন্ডিশন এবং প্রাইভেসি পলিসির সঙ্গে একমত পোষণ করা মানেই আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের উপর ফেসবুকের হস্তক্ষেপের অধিকার সমর্থন করা। ছবি নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। ফেসবুক শুধু সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট নয় বরং একটি ফোটো শেয়ারিং ওয়েবসাইটও বটে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ফেসবুকের প্রাইভেসি পলিসি মতে. ব্যবহারকারীর ছবি আপলোডের মাধ্যমে ছবি সব অধিকার কিন্তু ফেজবুক কে দিয়ে দিচ্ছেন। অর্থাৎ Facebook আপনার ছবি নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে।
গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্যের আজীবন সংরক্ষণ। ফেজবুক আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং ফেজবুক এ আপনার কর্মকাণ্ড সব সংরক্ষণ করে। এমনকি অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে ফেললেও ফেসবুকের কাছে. সব তথ্য সংরক্ষিত থাকেন। ফেজবুককে দেওয়া প্রত্যেকটি গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুক আজীবন সংরক্ষণ করে এবং প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির অধিকারও সংরক্ষণ করে।
ফেসবুক সতর্ক বার্তা -ফেজবুক ব্যবহার কারীর সতর্কতা অবলম্বনে কি কি করা উচিত? ফেসবুক ব্যবহার করার সময় আপনার নিরাপত্তা বাড়াতে কিছু বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। এ যেমন স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করান। ফেজবুক অ্যাকাউন্ট এর জন্য একটি ইউনিক আর স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। অক্ষর সংখ্যা এবং প্রতীক ব্যবহার করা ভালো এবং জন্মদিনের মতো সহজে এক্সেস যোগ্য তথ্য এড়িয়ে চলুন। ফেজবুকে two factor authentication ব্যবহার করা উচিত। নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। Privacy settings থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যক্তিগত তথ্যগুলো গোপন রাখতে only me করে রাখতে পারেন। তাছাড়া ফেজবুক থেকে ব্যাক্তিগত তথ্যাদি মুছে ফেলাই শ্রেয়। কারণ ফেসবুক থেকে ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার খুব সহজেই করা সম্ভব এবং এমনটা হয়ে থাকে। একাধিক ডিভাইসে লগইন করা বা অজানা কোন সাইটে ফেসবুক লগইন করা থেকে বিরত থাকুন। সন্দেহজনক ফিলিংস ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। অনেক সময় ফেসবুকের স্প্যাম ম্যাসেজে এই ধরনের লিংক অনেকেই পাঠিয়ে থাকে। যার সাহায্যে আপনার ফেসবুক আইডিটি খুব সহজেই হ্যাকাররা দখলে নিতে পারেন। হয়রানি এবং হুমকি থেকে রক্ষা পেতে অপরিচিত করো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট না করা। ফেসবুক দাবি করে তাদের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রয়েছে। অথচ ফেসবুকের একটি বড় সংখ্যক প্রোফাই পেশাদার জালিয়াদদের দিয়ে তৈরি। এসব প্রোফাইলের মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় এবং এক্সেপ্টের পর প্রোফাইলে প্রবেশ করে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয় এবং নানাভাবে হয়রানি করে।
আমাদের মধ্যে অনেকে শুধুমাত্র বন্ধু এবং পরিবারের সাথে কানেক্টেড বা সংযুক্ত থাকার জন্য ফেজবুক ব্যবহার করে। কেউ কেউ আবার ব্যবহার করছেন ব্যবসার কাজে। আবার কেউ কেউ জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন ফেজবুক পেজের মাধ্যমে। শুধু ফেজবুক না যে কোন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময় সবাইকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
আই নিউজ/আর
আরও পড়ুন
- ঢাকার হানিফ, চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন, সিলেটের ছিলেন কামরান
- নৌযান দুর্ঘটনায় পরিবারকে হারানো সেই মিমের দায়িত্ব নিলেন ব্যারিস্টার আহসান হাবীব
- পুলিশের চোখের জলে উন্মোচন হল জোড়া খুনের রহস্য
- ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত বানাতে চা শ্রমিক মায়ের অদম্য যুদ্ধের গল্প
- পুলিশ কর্মকর্তার ডায়েরি-২
জাদরেল বাবার দুই মেয়ে অপহরণের নাটকীয় কাহিনী - গ্রামের কবরে ঠাঁই দিতে এক করোনাযোদ্ধার আর্তি
- রোজাদার রিকশাওয়ালাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করলেন প্রভাবশালী পথচারী
- হাসি ভরা মুখ নিয়ে ভাইরাল কানাডার যুবক
- কষ্ট লাঘবকারি চিকিৎসার আকুতি চিকিৎসকের
- ছবি আঁকা পাগল লোকটি