সাইফুর রহমান তুহিন
হাতুরুসিংহের প্রত্যাবর্তন ও বিদেশি কোচদের আসা-যাওয়া
![](https://www.eyenews.news/media/imgAll/2021April/Hathure-Singha-Cricket-BCB-Eye-News-2302072208.jpg)
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচের চেয়ারে আবার বসতে যাচ্ছেন সাবেক শ্রীলংকান ক্রিকেটার চান্দিকা হাথুরুসিংহে। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালনকালে রেকর্ডটা খারাপ ছিলো না হাথুরুর। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দলকে তুলেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে, টেস্টে জয় এনে দিয়েছেন ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাক্রমশালী দলের বিপক্ষে।
টেস্টের রেকর্ডটা হয়তো খুব একটা উজ্জ্বল ছিলো না। তবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে সমীহজাগানো এক দলেরই পরিণত করেছিলেন হাথুরু। অবশ্য সব কৃতিত্ব যে তার একার ছিলো তা কিন্তু নয়। দলের সবচেয়ে বড় পাঁচ তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিম ও মাহমুদউল্লাহ সেসময় ছিলেন দারুণ ফর্মে। তবে
কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে হাথুরেসিংহের সামনে!
এবার যখন হাথুরুসিংহে তার দল নিয়ে কাজ শুরু করবেন তখন সেই সুপরিচিত পঞ্চপান্ডবের একজন মাশরাফি জাতীয় দলের বাইরে, মাহমুদউল্লাহ ক্যারিয়ারে গোধূলি লগ্নে আর মুশফিক, সাকিব ও তামিমও পড়ন্ত বেলায়। তাই এবার অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে হাথুরুর জন্য।
তাকে নিয়ে বেশকিছু সমালোচনাও প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটি হলো শর্টকার্ট রাস্তায় সাফল্য আনতে গিয়ে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে তিনি ফরমায়েশ দিয়ে মারাত্মক টার্নিং পিচ বানিয়েছিলেন যার ফলে এতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয়ও পরবর্তীতে টেস্টে ভালো ফলাফল করার ক্ষেত্রে কোনো কাজেই লাগেনি। আর এর পাশাপাশি কোনো কোনো খেলোয়াড়ের সাথে দারুণ সুসম্পর্ক আর কারো সাথে দূরত্ব তৈরির বিষয়ও আছে। কড়া হেডমাস্টারের মতো দল পরিচালনাও ভালো লাগেনি কারো কারো কাছে। আগামী দিনগুলোতে কী হবে কে জানে।
পেছনের কথা
এবার একটু পেছন ফিরে তাকানো যাক। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ফুলটাইম বিদেশি কোচের সহায়তা নেওয়ার ব্যাপারটি প্রথম চালু হয় ১৯৯৩ সালে। পরের বছরের শুরুতে কেনিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি ট্রফিতে (নন-টেস্ট প্লেয়িং দেশগুলোর জন্য বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাই টুর্নামেন্ট) সাফল্য পাবার লক্ষ্যে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার মহিন্দর অমরনাথকে জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব দেয় বিসিসিবি (তৎকালীন নাম)। কিন্তু ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক অমরনাথ ব্যর্থ হন চরমভাবে, দল বিদায় নেয় সেমিফাইনালের আগেই। বাজে পারফরম্যান্সের পর দলের সাথে ঢাকায় না এসে অমরনাথ সোজা ভারতে চলে যান।
দল নির্বাচনে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও আছে তার বিপক্ষে। আড়াই বছরেরও বেশি সময় পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান গর্ডন গ্রিনিজকে এবং তার সুযোগ্য দিকনির্দেশনায় মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফি জিতে দারুণভাবে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে কোয়ালিফাই করে বাংলাদেশ দল। গ্রিনিজের সাফল্যের গল্পের এখানেই শেষ নয়। বিশ্বকাপ অভিষেকেই গ্রæপ পর্বে নান্নু-বুলবুল-আকরামরা জয় পান স্কটল্যান্ড এবং পরাক্রমশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টি বহু প্রতীক্ষার টেস্ট স্ট্যাটাসের খুব কাছে নিয়ে যায় বাংলাদেশকে।
তবে নিখাদ ক্রিকেটপ্রেমীরা মস্তবড় একটি আঘাত পান পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ গ্রুপ ম্যাচের আগে বিসিবি আচমকা গ্রিনিজকে বরখাস্ত করলে। একটি ব্রিটিশ পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাতকারে স্পষ্টভাষী গ্রিনিজ অকপটে বলে ফেলেন যে, টেস্ট ক্রিকেটের উপযোগী কোনো অবকাঠামোই বাংলাদেশে নেই। এখন টেস্ট খেললে ক্রিকেট বিশ্বের কাছে হাসির পাত্র হবে বাংলাদেশ। তখনকার প্রেক্ষাপটে গ্রিনিজের এই মন্তব্য পুরোপুরি সঠিক ছিলো। আর তাকে বরখাস্ত করার পেছনে এটিই ছিলো মুখ্য কারণ।
গ্রিনিজের উত্তরসূরি হিসেবে বাংলাদেশে আসা দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ এডি বারলোর শুরুটা ছিলো চমৎকার। কিন্তু ২০০০ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অভিষেক টেস্টের ঠিক আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজণিত অসুস্থতায় বারলোকে নিজ দেশে চলে যেতে হয়। পরে একসময় মারা যান তিনি। পরবর্তীতে বাংলাদেশ দলের কোচের পদে আমরা দেখেছি অস্ট্রেলিয়ার ট্রেভর চ্যাপেল, পাকিস্তানের মহসিন কামাল, অস্ট্রেলিয়ার ডেভ হোয়াটমোর, জেমি সিডন্স ও স্টুয়ার্ট ল’, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড পাইবাস, অস্ট্রেলিয়ার শেন জুর্গেনসেন, শ্রীলংকার চান্দিকা হাথুরুসিংহে, ইংল্যান্ডের স্টিভ রোডস ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল ডমিঙ্গোকে।
তবে দু:খের বিষয় হলো এসব কোচের কেউই বিদায়বেলায় ভালো একটি সংবর্ধনাও পাননি। বেশির ভাগই নিজেদের বিদায়ের পেছনে কাজের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্বল অবকাঠামো এবং বিসিবিতে অতিমাত্রায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জাদুর কাঠি নয়, প্রয়োজন মানসম্পন্ন ঘরোয়া ক্রিকেট
উপরোক্ত বিষয়াদি পর্যালোচনা করে একজন সত্যিকারের ক্রিকেটপ্রেমীর মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, বছরের পর বছর ধরে বিদেশি কোচদের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার খরচ করে আমরা আসলে কতোটা লাভবান হচ্ছি ? বাস্তবতা হলো কোনো কোচের হাতেই এমন কোনো জাদুর কাঠি নেই যা দিয়ে তিনি বাংলাদেশকে র্যাংকিংয়ের ওপরের দিকে তুলে ফেলবেন। ক্রিকেট প্রশাসন যদি মানসম্মত ও প্রতিদ্বন্বিতাপূর্ণ ঘরোয়া ক্রিকেট (ফার্স্টক্লাস, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি) আয়োজন করতে পারে তাহলে খেলার মান অবশ্যই বাড়বে।
পাশাপাশি স্থানীয় কোচদেরকে আরও বেশি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করারও কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বাছাই করা কোচদেরকে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো যায় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডে। আমাদের হাতে যদি পর্যাপ্তসংখ্যক লেভেল-থ্রি ও লেভেল-ফোর ডিগ্রিধারী কোচ থাকে তাহলে তাহলে বিদেশিদের পেছনে ব্যাগভর্তি ডলার ব্যয় করার প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়। এসব বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং সুফল আদায় করার এখনই সেরা সময়।
সাইফুর রহমান তুহিন, সাংবাদিক ও ক্রীড়া লেখক
আই নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও দেখুৃন
৭১ বছরের এক তরুণ, যার কাছে দৌড়ে যুবকেরাও হার মানে
হাফ ম্যারাথন
- চেন্নাই সুপার কিংস বনাম গুজরাট টাইটান্স লাইভ স্কোর
- ভারত বনাম নেপাল লাইভ স্কোর | India Vs Nepal Live
- অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড লাইভ | Aus বনাম New
- অস্ট্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তান লাইভ | Aus Banam Afg
- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান লাইভ স্কোর এশিয়া কাপ
- বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া লাইভ খেলা
- বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান লাইভ স্কোর | Ban Vs Afg Live Score
- আফগানিস্তান বনাম পাকিস্তান লাইভ স্কোর | Pak vs afg Live
- পাকিস্তান বনাম শ্রীলংকা লাইভ টিভি | Pakistan Vs Srilanka Live
- ইংল্যান্ড বনাম আফগানিস্তান লাইভ খেলা