ইমরান আল মামুন
ডি মারিয়া ফুটবল জীবনী
আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা অ্যাঞ্জেল ফাবিয়ান ডি মারিয়া হর্নান্দেজ, সংক্ষেপে ডি মারিয়া, বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারদের একজন হিসেবে পরিচিত। অসাধারণ দক্ষতা, গতি, এবং সৃজনশীলতার জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এই প্রবন্ধে আমরা ডি মারিয়ার ফুটবল ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো এবং তার অবদান নিয়ে আলোচনা করব।
শৈশব ও প্রাথমিক জীবন
ডি মারিয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮ সালে আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে। তার পরিবার ছিল নিম্নবিত্ত এবং তিনি ছিলেন তিন সন্তানের মধ্যে একজন। ছোটবেলায় ডি মারিয়া ছিলেন অত্যন্ত চঞ্চল এবং তার অতিরিক্ত শক্তি খরচ করার জন্য ডাক্তার তার বাবাকে তাকে খেলাধুলায় যুক্ত করার পরামর্শ দেন। এই পরামর্শের ফলে ডি মারিয়া স্থানীয় একটি ফুটবল ক্লাবে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ছিল এবং রোসারিও সেন্ট্রালে তার ফুটবল যাত্রা শুরু হয়।
রোসারিও সেন্ট্রাল থেকে ইউরোপ যাত্রা
রোসারিও সেন্ট্রাল ক্লাবে খেলার সময় ডি মারিয়া তার অসাধারণ প্রতিভার প্রমাণ দেন। তার গতি, বল নিয়ন্ত্রণ এবং ড্রিবলিং ক্ষমতা দ্রুত তাকে আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীদের নজরে আনে। ২০০৭ সালে, মাত্র ১৯ বছর বয়সে, তিনি ইউরোপের নামী ক্লাব এসএল বেনফিকার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। বেনফিকায় তার সময়টা ছিল শেখার এবং পরিণত হওয়ার সময়।
বেনফিকায় তিনি ধীরে ধীরে একজন প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং ২০০৯-১০ মৌসুমে ক্লাবটির লিগ শিরোপা জয়ের অন্যতম প্রধান স্থপতি হন। তিনি পোর্তুগিজ লিগে তার অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ইউরোপের অন্যান্য বড় ক্লাবের নজরে আসেন। তার প্রতিভা, বলের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুতগতির কারণে তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে আরও বেশি পরিচিত হতে শুরু করেন।
রিয়াল মাদ্রিদে পদার্পণ
ডি মারিয়ার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অধ্যায়টি শুরু হয় ২০১০ সালে, যখন তিনি স্পেনের অন্যতম সফল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন। রিয়াল মাদ্রিদে যোগদানের পরপরই তিনি দ্রুত দলের অপরিহার্য সদস্য হয়ে ওঠেন। তার গতি এবং ড্রিবলিং দক্ষতা, পাশাপাশি চমৎকার অ্যাসিস্ট প্রদান করার ক্ষমতা, তাকে দলের জন্য অপরিহার্য করে তোলে।
২০১৩-১৪ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ডি মারিয়ার পারফরম্যান্স ছিল উল্লেখযোগ্য। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দলকে ‘লা ডেসিমা’ তথা দশম ইউরোপিয়ান কাপ জয়ে সাহায্য করে। সেই ম্যাচে তাকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ঘোষণা করা হয়, যা তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত।
পিএসজি এবং ফ্রান্সের ফুটবলে নতুন চ্যালেঞ্জ
২০১৫ সালে ডি মারিয়া ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইনে (পিএসজি) যোগ দেন। পিএসজিতে তিনি আরও একবার প্রমাণ করেন যে, তিনি কেবল একজন অসাধারণ ফুটবলারই নন, বরং একজন নির্ভরযোগ্য দলনায়ক। পিএসজিতে তার সময়ে তিনি লিগ ১-এ দলের অসাধারণ সাফল্যে অবদান রাখেন এবং একাধিক লিগ শিরোপা ও কাপ জয়ী হন।
পিএসজির হয়ে ২০১৯-২০ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তার ভূমিকা ছিল অসাধারণ। যদিও ফাইনালে তারা বায়ার্ন মিউনিখের কাছে পরাজিত হয়, তবে ডি মারিয়া পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলেন এবং পিএসজিকে ফাইনালে পৌঁছাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আর্জেন্টিনার হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল
ডি মারিয়া কেবল ক্লাব ফুটবলে নয়, আর্জেন্টিনার জাতীয় দলেও তার অসামান্য দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে আর্জেন্টিনার হয়ে স্বর্ণপদক জয়ের সময় তার পারফরম্যান্স ছিল উল্লেখযোগ্য। সেই টুর্নামেন্টে তার করা গোল আর্জেন্টিনাকে স্বর্ণপদক এনে দেয়।
কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে তার সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত আসে ২০২১ কোপা আমেরিকার ফাইনালে। ব্রাজিলের বিপক্ষে মারাকানা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই ফাইনালে ডি মারিয়া একমাত্র এবং জয়সূচক গোলটি করেন, যা আর্জেন্টিনাকে তাদের দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপা খরা থেকে মুক্তি দেয়। এই জয় তাকে আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে স্থায়ী স্থান দিয়েছে।
খেলার ধরন এবং বৈশিষ্ট্য
ডি মারিয়া একজন চমৎকার ড্রিবলার এবং দ্রুতগতির উইঙ্গার হিসেবে পরিচিত। তার বল কন্ট্রোল এবং পাসিং দক্ষতা অসাধারণ, যা তাকে বিপক্ষের রক্ষণভাগকে ভাঙতে সহায়তা করে। ডি মারিয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল তার অ্যাসিস্ট দেওয়ার ক্ষমতা। তিনি তার সতীর্থদের গোল করার সুযোগ তৈরি করতে দক্ষ এবং তার প্লেমেকিং ক্ষমতা দলের জন্য অমূল্য।
তবে ডি মারিয়ার খেলার ধরন শুধু আক্রমণাত্মক নয়, তিনি রক্ষণাত্মক কাজেও সমান দক্ষ। মাঠের যে কোনো অংশে খেলার সময় তার পরিশ্রম এবং নিবেদন তাকে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
চোট এবং প্রতিকূলতা
ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে ডি মারিয়া বিভিন্ন চোটের সম্মুখীন হয়েছেন, যা তাকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ম্যাচে বাইরে রেখেছে। ২০১৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তার চোট তাকে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে খেলতে দেয়নি। আর্জেন্টিনার সেই বিশ্বকাপ জয় না পাওয়ার পেছনে এই চোটকে অনেকেই অন্যতম কারণ মনে করেন। তবুও, প্রতিটি প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ডি মারিয়া বারবার নিজের দক্ষতা এবং অধ্যবসায়ের প্রমাণ দিয়েছেন।
উত্তরাধিকার
ডি মারিয়ার ফুটবল ক্যারিয়ার তার দক্ষতা, অধ্যবসায় এবং সাহসের মিশ্রণে গঠিত। আর্জেন্টিনা থেকে ইউরোপ এবং বিশ্বের বিভিন্ন লিগে তার অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে ফুটবল ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে। বিশেষ করে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জয় এবং রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে তার অবদান তাকে আর্জেন্টিনার সেরা ফুটবলারদের তালিকায় স্থান দিয়েছে।
- চেন্নাই সুপার কিংস বনাম গুজরাট টাইটান্স লাইভ স্কোর
- ভারত বনাম নেপাল লাইভ স্কোর | India Vs Nepal Live
- অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজিল্যান্ড লাইভ | Aus বনাম New
- অস্ট্রেলিয়া বনাম আফগানিস্তান লাইভ | Aus Banam Afg
- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান লাইভ স্কোর এশিয়া কাপ
- বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া লাইভ খেলা
- বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান লাইভ স্কোর | Ban Vs Afg Live Score
- আফগানিস্তান বনাম পাকিস্তান লাইভ স্কোর | Pak vs afg Live
- পাকিস্তান বনাম শ্রীলংকা লাইভ টিভি | Pakistan Vs Srilanka Live
- ইংল্যান্ড বনাম আফগানিস্তান লাইভ খেলা