নিজস্ব প্রতিবেদক:
আপডেট: ১৭:০০, ২৭ মে ২০২২
সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি,বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে সিলেটজুড়ে নতুন বিপদ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা। ডায়রিয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চর্মরোগসহ নানা পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে ১৭১ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ৫৫ জন, সুনামগঞ্জে ৪৫ জন রয়েছেন, বাকীরা হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বাসিন্দা। এদিকে চলতি গত ১ সপ্তাহে সিলেট বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৪২ জন।
সিভিল সার্জন সিলেট অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে ১৭ মে থেকে বন্যাজনিত রোগের হিসাব শুরু হয়। ১৭ মে থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় ৪০০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া চর্মরোগ ও শ^াসনতন্ত্র জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৫০ জন। দিন দিন পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ১৭১ জন। এরমধ্যে সিলেটে ৫৫, সুনামগঞ্জে ৪৫, হবিগঞ্জে ৪৩, মৌলভীবাজারে ২৮ জন রয়েছেন। এদিকে গত এক সপ্তাহে বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৪২ জন। এরধ্যে সিলেটের ৩৭২ জন, সুনামগঞ্জের ৪৬৫ জন, হবিগঞ্জের ৪৬১ জন ও মৌলভীবাজারের ২৪৪ জন রয়েছেন। গত ১ মাসে বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৫১৪ জন। এরমধ্যে সিলেটের ১ হাজার ৪৭২ জন, সুনামগঞ্জের ১ হাজার ৪১৭ জন, হবিগঞ্জে ১ হাজার ৮৭৮ জন ও মৌলভীবাজারের ৭৪৭ জন রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার ৩১টি উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে সিলেট জেলার ১৩টি, সুনামগঞ্জ জেলার ২টি হবিগঞ্জ জেলার ৮টি ও মৌলভীবাজার জেলার ৮টি উপজেলকে ডায়রিয়া উপদ্রæত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। সিলেট বিভাগে ৪২৭টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে। এরমধ্যে সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলায় ১৪০টি মেডিকেল টিম, সুনামগঞ্জে ১২৩টি মেডিকেল টিম, হবিগঞ্জে ৯০টি ও মৌলভীবাজারে ৭৪টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে।
আরো পড়ুন : সাকিবের বিদায়ের পর ২৬ বল টিকেছিল বাংলাদেশ
গেল সপ্তাহের ডায়রিয়া রিপোর্ট পর্যালোচনা করে জানা যায়, সর্বোচ্চ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার ৪৬৫ জন, এরপর রয়েছে হবিগঞ্জ জেলা সেখানে আক্রান্ত ৪৬১ জন। সবচেয়ে কম মৌলভীবাজারে, সেখানে আক্রান্ত ২৪৪ জন। এছাড়া সিলেট জেলায় ৩৭২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ায় ৩য় স্থানে রয়েছে।
এদিকে গত মাসের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ১ মাসে সর্বোচ্চ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন হবিগঞ্জ জেলায়। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮৭৮ জন। মাসের হিসাবে সিলেট রয়েছে ২য় স্থানে, আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৪৭২ জন, ৩য় স্থানে সুনামগঞ্জ, সেখানে আক্রান্ত ১ হাজার ৪১৭ জন। মাসের হিসাবেও সবচেয়ে কম মৌলভীবাজার। সেখানে আক্রান্ত ৭৫৭ জন।
সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহমদ হোসেন বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে বন্যা ছাড়াও এই সময়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। বন্যার কারণে এর প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। তবে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা তেমন নেই। সুনামগঞ্জে ২টি উপজেলা ডায়রিয়া উপদ্রæত ঠিক। তবে সকল উপজেলাতে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
সিভিল সার্জন সিলেট সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিনে সিলেটে ডায়রিয়ার প্রকোপ দ্রæত বাড়ছে। গত ১৭ মে থেকে ২২ মে রোববার পর্যন্ত ১১৪ জন ডায়রিয়ার রোগী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী ৩ দিনে তা ৫৫০ জনে পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জেলায় ১৪০টি এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ৩টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে সর্বোচ্চ ১৬টি করে মেডিকেল টিম রয়েছে। এছাড়া কানাইঘাটে ১২টি, জৈন্তাপুরে ১১টি, বিশ্বনাথে ১১টি, গোয়াইনঘাটে ১০টি, জকিগঞ্জে ১০টি, সদর উপজেলায় ১০টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ১০টি, ওসমানীনগরে ৯টি, দক্ষিণ সুরমায় ৮টি, বালাগঞ্জে ৭টি ও কোম্পানীগঞ্জে ৭টি টিম কাজ করছে। এর বাইরে জেলা শহরের জন্য ৩টি টিম রাখা হয়েছে।
সিলেটের ডেপুটী সিভিল সার্জন ডা. জন্মে জয় শংকর দত্ত বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে জেলা সাড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি চর্মরোগ সহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে চর্মরোগ নিয়ে অনেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। তবে ডায়রিয়া ছাড়া অন্যান্য রোগের রিপোর্টিং এখনো পুরোপুরিভাবে নেয়া হচ্ছেনা। বর্তমানে ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু রিপোর্টিং করা হচ্ছে। সিলেটে বন্যাপরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য পরিস্থিতির তেমন অবনতি ঘটছেনা। আমাদের মেডিকেল টীম সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের ৩টি মেডিকেল টীম সার্বক্ষনিক কাজ করছে। এছাড়াও ওয়ার্ডভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন চালু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা প্রতিদিন ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পেইন করবো। যা আগামী ১৫ দিন অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, নগরীর বন্যা কবলিত প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি আর বস্তি এলাকার মানুষ বেশী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে নগরী ১ লক্ষ ৬০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিনই যে এলাকায় যাচ্ছে পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেট বিতরণ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, সিলেটে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগী বাড়ছে। তবে আতঙ্কজনক পর্যায়ে নয়। গ্রামীণ জনপদ নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তিত নই। তবে সিটি কর্পোরেশন নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। কারণ নগরীর যেসব এলাকা পানিতে তলিয়েছে এর একটা বিশাল জনগোষ্টী বস্তিবাসী। এই নি¤œ আয়ের মানুষই বেশী ঝুঁিকতে রয়েছে। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট তাদের বেশী। আগের ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগে ১৮৩ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছিলেন। আজকের (বৃহস্পতিবারের) রিপোর্টে সেই সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৭১ জনে। হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর কোন চাপ নেই। ওসমানী হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত কিছু রোগী থাকলেও তারা দ্রæত সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন। শাহী ঈদগাহের সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালেও ডায়রিয়া রোগীর কোন চাপ নেই। সব মিলিয়ে সিলেটের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খুব একটা খারাপ বলা যাবেনা।
তিনি বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বিশুদ্ধ পানি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সিলেটের উদ্যোগে ৪টি ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে ১টি, মোট ৫টি ভ্রাম্যমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ মেশিন বর্তমানে কাজ করছে। এরমধ্যে নগরীতে ২টি মেশিন বিশুদ্ধ পানি দিতে কাজ করছে। একটি মেশিন ঘন্টায় ৫০০ লিটার পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারে। আর ১টি মেশিন সুনামগঞ্জে রাখা হয়েছে। অপর ২টি মেশিন সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে কাজ করছে।
আইনিউজ/জেপি
আইনিউজ ইউটিউব চ্যানেলে দেখুন দারুণ সব ভিডিও
ঝড়ে মারা যায় পাখির ছানা, গাছে বাসা দিলেন পুলিশ অফিসার
আলী আমজাদে রিইউনিয়ন
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’