সাহিত্য ডেস্ক:
আপডেট: ২০:৩২, ১৫ জুন ২০২২
বাঙালী কবিদের বর্ষা বন্দনা

আজ থেকে শুরু হয়েছে আষাঢ় মাস। ঋতুচক্রের হিসেবে বর্ষাকাল শুরু হয়েছে আজ থেকে। গ্রীষ্মের তাপদাহে অতিষ্ঠ প্রাণ-প্রকৃতিতে বাদলের স্পর্শে ফিরে আসবে সতেজতা। এমন দিনে বর্ষা ব্যস্ত নাগরিক জীবনেও প্রভাব রেখে যায়। তাই কবিরাও এমন দিনে হারিয়েছেন স্মৃতির কল্পনায়। বৃষ্টি-বাদল সকল সময় মুগ্ধ করেছে কবি, সাহিত্যিকদের। যা ফুটে ওঠেছে তাদের লেখায়, পদ্যে, গদ্যে। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বাদলা দিনের প্রেমে পড়েছিলেন। তাইতো 'বর্ষার দিনে' শিরোনামে কবিতায় কবি লিখেছেন-
এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায় –
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।।
সে কথা শুনিবে না কেহ আর, নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার –
জগতে কেহ যেন নাহি আর।।
সমাজ সংসার মিছে সব, মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি-অনুভব –
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।
বলিতে ব্যথিবে না নিজ কান, চমকি উঠিবে না নিজ প্রাণ।
সে কথা আঁখিনীরে মিশিয়া যাবে ধীরে,
বাদলবায়ে তার অবসান –
সে কথা ছেয়ে দিবে দুটি প্রাণ।।
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার, নামাতে পারি যদি মনোভার!
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।।
আছে তো তার পরে বারো মাস – উঠিবে কত কথা, কত হাস।
আসিবে কত লোক, কত-না দুখশোক,
সে কথা কোনখানে পাবে নাশ –
জগৎ চলে যাবে বারো মাস।।
ব্যাকুল বেগে আজি বহে বায়, বিজুলি থেকে থেকে চমকায়।
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
আষাঢ়ে বর্ষা প্রকৃতির কবি জীবনানন্দকেও প্রভাবিত করতে ছাড়েনি। ঘন বর্ষা নিয়ে জীবনানন্দ দাশ পদ্য লিখেছেন। প্রকাশ করেছেন বর্ষা নিয়ে তাঁর কবিমনের আঁকা চিত্রপট। জীবনানন্দ দাশের 'রূপসী বাংলা' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত 'কেমন বৃষ্টি ঝরে...' কবিতায় তিনি লিখেছেন-
কেমন বৃষ্টি ঝরে—মধুর বৃষ্টি ঝরে—ঘাসে যে বৃষ্টি ঝরে—রোদে যে বৃষ্টি ঝরে আজ
কেমন সবুজ পাতা—জামীর সবুজ আরও—ঘাস যে হাসির মতো—রোদ যে সোনার মতো ঘাসে
সোনার রেখার মতো—সোনার রিঙের মতো—রোদ যে মেঘের কোলে—তোমার গালের টোলে রোদ
তোমার চুলে যে রোদ—মেঘের মতন চুলে—তোমার চোখে যে রোদ—সেও যে মেঘের মতো চোখ
আকাশে সোনালি চিল পাখনা ছড়ায়ে কাঁদে—(এমন সোনালি চিল)—
সোনালি রেণুর মতো ঝরিছে কান্না আহা, মিশরে শুনেছি যেন কবে
আকাশে এমন ছেঁড়া ময়লা মেঘের রাশ—পড়েছে তাদের ছায়া নীলের ঘোলা জলে নিঝুম পিরামিডে
এমনই সোনালি রোদ—সোনার থামের মতো—ঘিয়ের শিখার মতো রয়েছে আকাশ ছিঁড়ে তবু
কেঁদেছে সোনালি চিল এমনই আকাশ ঘুরে—শুনেছি মিশরে আমি হাজার হাজার যুগ আগে
তোমার চুলে যে রোদ—মেঘের মতন চুলে—তোমার চোখে যে রোদ—সেও যে মেঘের মতো চোখ
কেমন বৃষ্টি ঝরে—মধুর বৃষ্টি ঝরে—ঘাসে যে বৃষ্টি ঝরে—রোদে যে বৃষ্টি ঝরে আজ।
প্রেমের কবি মহাদেব সাহা বর্ষার সাথে জড়িয়েছেন বিচ্ছেদ আর বিরহকে। এমন দিনে কবি শুনতে আর শোনাতে চান বিদ্যাপতির বিষণ্ণ পদাবলী। এমন দিনে ঝরা বকুলেই কবি ভরে রাখতে চান এই প্রশস্ত অঞ্জলি। তাই কবি তাঁর 'কোথা সেই প্রেম, কোথা সেই বিদ্রোহ' কবিতায় লিখেছেন-
বৃষ্টির কথা থাক, বিরহের কথা বলি।
শুনাই দুজনে বিদ্যাপতির বিষণ্ন পদাবলী,
বর্ষার কথা থাক, বকুলের কথা বলি।
ঝরা বকুলেই ভরে রাখি এই প্রশস্ত অঞ্জলি।
আকাশের কথা থাক, হৃদয়ের কথা শুনি।
যদিও বিরহ তবু মিলনের স্বপ্নজালই বুনি,
অশ্রুর কথা থাক, আবেগের কথা শুনি-
সহস্র রাত কেটে যাক
দূর আকাশের তারা গুনিব।
গরিমার কথা থাক, বিনয়ের পাঠ ধরি।
কলহের কোনো কাজ নেই, কিছু করুণার গান করি।
বিদ্যার কথা থাক, প্রেমের কবিতা পড়ি।
চারদিকে এই জলধারা তবু সৃষ্টির দ্বীপ গড়ি।
চণ্ডিদাসের মতো পঞ্চদশ শতকের মৈথলী কবি বিদ্যাপতির রচনায়ও বিরহ বেদনা কম নয়। বিদ্যাপতিও যেন বর্ষার মেঘের মাঝেই পেয়েছেন মনের খোরাক। পেয়েছেন বেদনাকে উজাড় করার মতো সঙ্গ। বুকের ভেতরে আগলে রাখা যাতনাকে তাই প্রকাশ করেছেন ভরা ভাদরের বেদনার্ত রূপের সঙ্গে মিল করে :
‘এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর- এ ভরা ভাদর মাহ বাদর
শূন্য মন্দিরও মোর।’
মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতায় বর্ষা আবার ধরা দিয়েছে প্রকৃতির অপরূপ শক্তি হিসেবে। তাঁর কবিতায় বর্ষার প্রকৃতি ও মানব প্রকৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তার সঙ্গে দেবতারাও ঘোষণা করেছেন একাত্মতা। ‘বর্ষাকাল’ কবিতায় কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বর্ষার রূপকে ভাবনার তুলিতে বর্ণনা করেছেন এভাবে :
‘গভীর গর্জন করে সদা জলধর উথলিল নদ-নদী ধরনীর উপর
রমণী রমন লয়ে সুখে কেলি করে দানবাদি দেব যক্ষ সুখিত অনন্তরে।’
আইনিউজ/এইচএ
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’