নিজস্ব প্রতিবেদক
বন্যায় পর্যটকশূণ্য সিলেট, হাজার কেটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

বন্যায় সিলেটের পর্যটন খ্যাতে নেমেছে ধ্বস। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র জাফলং। এই পর্যটন এলাকায় গ্রিন রিসোর্ট ও গ্রিন রেস্টুরেন্ট নামে দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন বাবুল আহমদ। গত ২৫ জুন থেকে নিজের রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বাবুল আহমদ বলেন, ‘লোকসান আর সামাল দিতে পারছি না। গত ঈদের পর থেকে এখানে কোন পর্যটক নেই। পর্যটক না হলে আমাদের ব্যবসাও নেই। ফলে প্রায় দুই মাস ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
ঈদুল আযহা পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে জানিয়ে বাবুল বলেন, ‘রিসোর্টটি বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই লোকসান গুনেও এটি চালু রাখতে হচ্ছে।’ জাফলং এলাকার গুচ্ছগ্রাম দিয়ে এখানকার মূল পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ করেন পর্যট’করা। পর্যটকদের উপর ভিত্তি করেই এই এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
- আইনিউজ এ আরও পড়ুন : ‘জীবনে আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদ করছি না, ইবার আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদ’
গত রোববার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুয়েকটি ছাড়া সবগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। যেগুলো খোলা আছে সেগুলোতেও ক্রেতা নেই। আর পুরো ফাঁকা জাফলং পর্যটন কেন্দ্র। একজনও পর্যটক নেই সেখানে। জাফলংয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ছবি তোলার কাজ করেন আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘বন্যার পর থেকে এখানে পর্যটকরা একেবারে আসছেন না। পর্যটক না আসায় আমরা প্রায় বেকার হয়ে পড়েছি।’
কেবল জাফলং নয়, সিলেটের সবগুলো পর্যটনকেন্দ্রই দেড় মাসের বেশি সময় ধরে পর্যটকশূন্য অবস্থায় আছে। দুই দফা বন্যার কারণে সিলেটে আসছেন না কোন পর্যটক। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্ষা মৌসুমে সিলেটে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম হয়। এখানকার পাহাড়, ঝর্না, হাওর, জলাবরণ, নদী- বর্ষায় সবচেয়ে সুন্দর রূপ ধারণ করে। তাই এসময়ে সিলেট অঞ্চলে পর্যটক সমাগম হয় সবচেয়ে বেশি। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। এবার ভরা বর্ষায়ও পর্যটক নেই সিলেটে। এতে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়েছেন পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা। ক্ষতির অংকে তা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
- আরও পড়ুন : ‘রাত অইলে ঘুম লাগেনা সাপ-আফালের ডরে’
পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার কারণে দুই বছর একেবারে স্থবির ছিল পর্যটন খাত। করোনার দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে চলতি বছর থেকে চাঙ্গা হতে শুরু করেছিলো সিলেটের পর্যটন শিল্প। গত ঈদে রেকর্ডসংখ্যক পর্যট’ক ভিড় করেছিলেন সিলেটে। তবে মে মাস থেকে ফের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে পর্যটন শিল্পে।
মে মাসে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে সিলেট। সে সময় মে মাসের বন্যাকে বলা হয়েছিলো, গত ১৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব’ন্যা। ওই বন্যার পানি কমে আসতে না আসতেই জুনের মাঝামাঝিতে ফের বন্যা দেখা দেয় সিলেটে। চলতি বন্যাকে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক পর্যটনকেন্দ্রও। বন্যার কারণে মে থেকে সিলেটে আসছেন না পর্যটকরা।
সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র বিছানাকান্দি। বর্ষা মৌসুমেই এখানকার নদী-ঝর্ণা-পাহাড় মোহনীয় রূপ নেয়। তবে এবার বর্ষায় পর্যট’ক নেই বিছানাকান্দিতে। বিছানাকান্দি পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বলেন, ‘অন্যান্য বছর বর্ষায় এখানে পর্যট’কদের ভিড় লেগে থাকে। এবার একেবারে পর্যট’ক আসছেন না। প্রায়ই দিনই ফাঁকা থাকছে পর্যটন কেন্দ্র।’
তিনি বলেন, বিছানাকন্দি পর্যটন কেন্দ্রে রেস্টুরেস্ট, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন পণ্যের অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে। দেড় মাস ধরে সবগুলো দোকান বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা বড় অংকের ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্ষায় পর্যটকদের ভিড় বাড়ে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরেও। তবে এবারের বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ। যথারীতি সেখানেও কোন পর্যট’ক নেই।
- আরও পড়ুন : বন্যা তলিয়ে গেছে তাদের ঈদ আনন্দ
তাহিরপুরের ইঞ্জিন নৌকার চালক আসকর আলী বলেন, ‘পর্যটকদের পরিবহনের জন্য সুন্দর করে আমার নৌকাটি বানিয়েছিলাম। রাতে থাকা, রান্না করার সুবিধা ছিলো এখানে। এখন পর্যটক নেই, তাই এখন এই নৌকা ত্রাণ বিতরণকারীদের পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি না হয় কোনমতে চলতে পারছি। কিন্তু পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল অনেক ছোটছোট ব্যবসায়ী এখন পথের ফকির হয়ে গেছেন।’ পর্যটক না আসায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন সিলেটের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা। সিলেট জেলায় পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। যার বেশিরভাগই এখন পুরো ফাঁকা।
বন্যার কারণেই পর্যটকরা আসছেন না বলে জানিয়ে নগরের জিন্দাবাজার এলাকার হোটেল গোল্ডেন সিটির ব্যবস্থাপক মৃদুল দত্ত মিষ্ঠু বলেন, ‘এক বন্যার পানি নামতে শুরু করার সাথে সাথে আরেক বন্যা শুরু। এর আগে দীর্ঘসময় করোনা ছিলো। ফলে আমাদের ব্যবসার অবস্থা খুবই করুণ।’ পর্যটক না আসায় এই খাতের ব্যবসায় চরম মন্দা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কিছু কর্মীকে ছুটি দিয়ে দিতে হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তাদের ডাকা হবে।’
বন্যায় পর্যটন শিল্পে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে জানিয়ে সিলেট হোটেল মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি সুমাত নুরী জয়েল বলেন, ‘ক্ষতি সামলাতে না পেরে অনেকেই এখন হোটেল বিক্রি করে দেয়ার কথা ভাবছেন। কর্মীদের ছাঁটাইও করছেন অনেকে।’ জুয়েল বলেন, ‘করোনার দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে এই খাত যে-ই একটু ঘরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলো তখনই বন্যার ধাক্কা শুরু হলো।’
বন্যার কারণে পুরো বিভাগজুড়েই পর্যটক শূন্যতা ও পর্যটন খাতে মন্দা দেখা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক বড় বড় হোটেল রিসোর্ট ৬০/৭০ পার্সেন্ট ছাড়ের ঘোষণা দিয়েও পর্যটক আকর্ষণ করতে পারছে না।’ সিলেট চেম্বার অব কমার্সের তথ্যমতে, বন্যায় সিলেটে পর্যটন খাতের ক্ষতিই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ‘কেবল হোটেল-মোটেল নয়, সিলেটের একজন রিকশা চালক, একজন কাপড় ব্যবসায়ীও পর্যটকের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। শ্রীমঙ্গল, জাফলংসহ কিছু এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য তো পুরোটাই পর্যটকদের উপর নির্ভশীল। তার উপর এখন সিলেটে পর্যটনের ভরা মৌসুম।’
তাহমিন বলেন, ‘বন্যা কমে গেলেও সিলেটে এখন পর্যটকদের ফেরানো যাবে না। কারণ বেশিরভাগ রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের মনে বন্যা নিয়ে আতঙ্কও আছে। ফলে এই খাতে ক্ষতি আরও বাড়বে। সরকারি সহায়তা ছাড়া এই ক্ষতি সহজেই কাটিয়ে উঠা যাবে না।’
প্রসঙ্গত, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছিল সিলেট ও সুনামগঞ্জ। সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী সে বন্যায় শত কোটি টাকার ক্ষতি হয় এ দুই জেলায়। এরপর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরও ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয় এই দুই জেলায়। পানিতে এখনও তলিয়ে আছে দুই জেলার বেশিরভাগ এলাকা। বন্যায় ক্ষতির মুখে পড়েছে সবগুলো খাতই।
আইনিউজ/এসকেএস
আইনিউজ ইউটিউব চ্যানেলে দেখুন আকর্ষণীয় সব ভিডিও
কুরবানির বাজারে দেখা মিললো বিরল বনগরু | Eid lasted cow market update | Goyal | Bison || Eye News
মহিষ ব্যবসা করে আট বছরেই কোটিপতি || New Vairal Funny interview | Bangla funny News Video | Eye News
মৌলভীবাজারে বিশেষ পদ্ধতিতে মৌমাছির মাধ্যমে মধু চাষ হচ্ছে | Honey Farming Process in Bangla
যে পানিতে মানুষের মল পড়ে, সে পানি খাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জবাসী | Narayanganj | শীতলক্ষ্যা নদী | Eye News
মৌলভীবাজারের যে সীমান্তে এক হাটে বাজার করে ভারত-বাংলাদেশের মানুষ | Eye News
সড়কের দু`পাশে ফুটেছে আগুন রাঙ্গা ফুল | নতুন দর্শনীয় স্থান | Beautiful places | Flowers || Eye News
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’