আইনিউজ ডেস্ক
বন্যার কারণে এসএসসিতে পাসের হার কমেছে সিলেটে
কিছুদিন আগে বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেট জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। ছবি- সংগৃহীত
সিলেট, সুনামগঞ্জ, তাহিরপুর, কোম্পানিগঞ্জ, জামালপুরসহ সিলেটের বেশিরভাগ উপজেলাই এবছর পরপর দুইবার ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন। বন্যার প্রভাব পড়েছে এই এলাকার শিক্ষাক্ষেত্রেও। বন্যার কারণে বিরূপ প্রভাব দেখা গেছে কাল প্রকাশিত এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও।
সোমবার প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে সিলেটে পাস করেছে ৭৮.৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী। যা সারাদেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার আগে ভয়াবহ বন্যার কারণেই এবার মূলত সিলেটে পাসের হার কমেছে।
চলতি বছরে সিলেটে তিন দফা বন্যা হয়। এরমধ্যে ১৫ জুন স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেট জেলার ৮০ শতাংশ এলাকা। আর সুনামগঞ্জের ৯০ শতাংশ এলাকাই ছিলো পানির নিচে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় বিভাগের অন্য দুই জেলা হবিগঞ্জ আর মৌলীবাজারও।
বন্যার কারণে বিপাকে পড়ে শিক্ষার্থীরাও। বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় অনেকেই বই-খাতাসহ শিক্ষা সরঞ্জাম ভেসে যায় পানিতে। জুনে এসএসসি পরীক্ষা কথা থাকলেও বন্যার কারণে তা পিছিয়ে নেওয়া হয়।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সোমবার ফলের বিস্তারিত তুলে ধরার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও এ বিষয়টি তোলেন।
পরীক্ষায় পাসের হার নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই সব শিক্ষার্থী পাস করবে। আমাদের সবকিছুই ঠিক ছিল, তবে একটা কারণে (বন্যা) সেটা হয়নি। সবকিছু বাদ দিয়েছি। নতুন করে আবার রুটিন দিয়েছি। এ কারণে কিন্তু শিক্ষার্থীর ওপর একটা চাপ পড়ে। একরকম প্রিপারেশন থাকে, সেটা ব্যাহত হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বোর্ডের রেজাল্ট কিন্তু একটা আলাদা আলাদা প্রভাব ফেলে। যশোর বোর্ডে যেমন ৯৫ ভাগ আছে, আবার কোথাও কোথাও ৭৮ ভাগ। বন্যার কারণে এটা হতেই পারে। অনেক স্কুলে সমস্যা হয়েছে, অনেক পরীক্ষার্থীকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হয়েছে।’
সোমবার দুপুরে সিলেট শিক্ষাবোর্ড মিলনায়নে এসএসসির ফলাফল ঘোষণা করেন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল। এসময় বোর্ডের সচিব কবির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
পাসের কমার জন্য বন্যাকে দায়ী করে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন চন্দ্র পাল বলেন, এবার পরীক্ষার আগে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা ছিলো। বন্যায় অনেকে পরীক্ষার্থী বই, খাতা ও নোট হারিয়েছে। ভালো করে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। বন্যার পর বই দেওয়া হলেও নোট বই দেয়া যায়নি। বন্যার কারণে পরীক্ষাও পিছিয়েছে। এসব কারণেই পাসের হার কমেছে।
তিনি বলেন, এছাড়া কারণে গত বছর গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা ছিলো না। কেবল তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। এবার গণিত ও ইংরেজি পরীক্ষা হয়েছে। ফলাফলে এর প্রভাবও পড়েছে।
এবার ইংরেজিতে পাসের হার ৯২.৩৩ শতাংশ ও গণিতে ৮৯.৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে বলে জানান তিনি।
মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী অধিক হওয়ায়ও পাসের হার কমেছে জানিয়ে অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, দেশের অন্যান্য বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী বেশি থাকে। কিন্তু সিলেটে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী যেখানে ২৩ হাজার ৩১৮ জন সেখানে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ৮৪ হাজার ২৭৩ জন। পাসের হারেও মানবিক বিভাগ অনেক পিছিয়ে। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৩.৫৭ শতাংশ, অপরদিকে মানবিকে পাসের হার ৭৩.৮০ শতাংশ।
তবে ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবারের ফলাফলে আমরা খুশি। আমরা উন্নতি করছি।
বন্যায় পাসের হার কমলেও কীভাবে জিপিএ-৫ বাড়লো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গ্রামের প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা। আর জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে শহরের শিক্ষার্থীরা। বন্যায় ক্ষতি তাদের তুলনামূলক কম হয়েছে।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৯০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ৯০ হাজার ৯৪৮ জন পাস করেছে।
সিলেট বোর্ডে ৪৯ হাজার ৮৭জন ছেলে ও ৬৬ হাজার ৩০৪ জন মেয়ে পরীক্ষার্থী পাস করেছে। ছেলে ও মেয়েদের পাসের হার যথাক্রমে ৭৮ দশমিক ৭১ শতাংশ ও ৭৮ দশমিক ৯শতাংশ। এবারে ৩ হাজার ২৫৪জন ছেলে ও ৪ হাজার ৩১১জন মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, সিলেট শিক্ষাবোর্ডের অধীন ৯৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ১৫০টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শূন্য। তিনি বলেন, আগের বছরের চেয়ে এবারে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা ২ হাজার ৭৩১জন বেড়েছে।
এবারে সিলেট বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৭শতাংশ। এই বিভাগে ২৩ হাজার ৩১৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ হাজার ২৩০ জন পাস করেছে। এদেরমধ্যে ৬ হাজার ৮৯৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
মানবিক বিভাগে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৮শতাংশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৮৯ জন। এই বিভাগে ৮৪ হাজার ২৭৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসকরেছে ৮৩ হাজার ৩১৫।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৩৬শতাংশ। এই বিভাগে ৮ হাজার ৮৯৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭ হাজার ৭২৮ জন। ২৮২জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এদিকে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীন চার জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে সিলেট জেলার শিক্ষার্থীরা। এই জেলায় পাসের হার ৮১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ, হবিগঞ্জে ৭৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ ও মৌলভীবাজারে ৭৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
আইনিউজ/এইচএ
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’