শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি
ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত শ্রীমঙ্গল, নেই আশানুরূপ সাড়া

এবছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটক কম পাবার আশঙ্কা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ছবি- সাজু মারছিয়াং
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্র্যেভরা সবুজের সমারোহে পরিপূর্ণ চায়ের দেশ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। ঈদের ছুটিকে আরও আনন্দময় করে তোলার জন্য এ উপজেলায় রয়েছে বহু দর্শনীয় স্থানসহ সুন্দর সুন্দর সব প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র। অন্যান্য বারের মতো এবার ঈদকে সামনে রেখে দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটক বরণে ব্যবসায়ীরা হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ ও রিসোর্টগুলে অপরূপ সাজে সজ্জিত করে বিশাল প্রস্তুত করে রেখেছেন।
কিন্তু এই বিশাল প্রস্তুতি থাকার পরেও পর্যটকরা নানাবিধ কারণে আশানুরূপ পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না। রিসোর্টগুলেতে বুকিং দিয়ে তা আবার বাতিল করা হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বুকিং না থাকায় এরিমধ্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
জানা যায়, এবছর শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫৯টি হোটেল রিসোর্টে পর্যটকদের নেই আগাম বুকিং। প্রতিবছর এ উপজেলার হোটেল রিসোর্ট কটেজগুলোতে যেখানে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ আগাম বুকিং হয়, এবছর সেখানে আগাম বুকিং হয়েছে মার ৩০ শতাংশ।
পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মনে করছেন অতিরিক্ত গরমে পর্যটকরা বেড়াতে আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। সেই সাথে পর্যটনে নতুন নতুন সংযোজন কিংবা সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না হওয়াও একটি বড় কারণ।
গতবছর অনেক রিসোর্টেই পর্যটক প্রচুর থাকার কারণে ঈদের কোন প্যাকেজ দিতে হয়নি। এই বছর ঈদে পর্যটক কম থাকার কারণে অনেক হোটেল রিসোর্টে প্যাকেজ দিচ্ছে। কোনো কোনো রিসোর্টে ৫০ শতাংশ গেস্ট, কোন হোটেল রিসোর্টে ৩০ শতাংশ, কোন রিসোর্টে ৪০ বা ৭০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। হোটেল রিসোর্ট মালিকরা বলছেন আশানুরূপ পর্যটক নেই এই ঈদে।
ট্যুর অপারেটর এবং ট্যুর গাইড তাপস দাশ বলেন, “আমরা বহুদিন থেকেই এ শিল্পে কাজ করছি, কিন্ত করোনা যেভাবে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তারপর শুধুই ঘুরে দাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা। ইতিমধ্যেই ট্যুরিস্ট গাইড অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আর ঈদের ভরা মৌসুমে পর্যটক শূন্য হচ্ছে, এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো। আমরা এর ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত।
শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে আসা উচ্চবিলাসী পর্যটকদের আকর্ষণের শীর্ষে থাকে এই গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ। ছবি- সাজু মারছিয়াং
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ১৯৯৬ সালের পর থেকে দেশি বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বৃদ্ধি পায় চায়ের দেশ খ্যাত শ্রীমঙ্গলে। কিন্ত দীর্ঘদিন পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না হওয়া এবং নানাবিধ জটিলতায় এখানে আসতে পর্যটকরা উৎসাহ হারাচ্ছেন বলে মনে করছেন এখানকার পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তারা।
হোটেল গ্রীনভিউ এর পরিচালক মো. মিছবা উদ্দিন বলেন, আমরা যারা পর্যটনখাতে বিনিয়োগ করেছি আমাদের অনেকেরই ব্যাংক লোন রয়েছে। কিন্ত এখানকার পর্যটন শিল্পে পর্যটকদের আগ্রহ যেভাবে হারাচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যত কী হবে সেটাই এখন আমাদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের প্রশাসন আর সরকার যদি এই শিল্পের জন্য নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করে, এই শিল্প কেন্দ্রিক স্থানগুলোকে যদি ঢেলে সাজানো না হয় তাহলে এই জেলায় পর্যটন শিল্প স্থবির হয়ে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে এখানকার শত শত ব্যবসায়ীরা। এতে সরকারও রাজস্ব হারাবে।
শ্রীমঙ্গলের পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ এন্ড গলফ। ছবি- সাজু মারছিয়াং
পর্যটনসেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক ও গ্রিনলিফ গেস্ট হাউসের স্বত্বাধিকারী এস কে দাশ সুমন বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫৯টি হোটেল রিসোর্টে বুকিং নেই বললেই চলে। ৩০ শতাংশ বুকিংও কনফার্ম হয়নি। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন অতিরিক্ত গরমে পর্যটকরা বেড়াতে আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
উপজেলার ভবিষ্যত পর্যটন কেন্দ্র কিংবা শিল্প নিয়ে শঙ্কিত এখানকার পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রচণ্ড গরমের কারণে ৪ থেকে ৫ টি বুকিং দিয়ে পরে তা বাতিল করছেন পর্যটকেরা।
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ এর জিএম আরমান খান বলেন, গতবছরের তুলনায় এবছর ঈদে পর্যটকের সাড়া একটু কম রয়েছে। তবে খুব যে কম তাও না, আবার খুব যে বেশী তাও না। মোটামুটি ভালো। ঈদের পরে এসএসসি পরীক্ষা থাকার কারণে বেশীরভাগ পর্যটক আসছেন না। আরো দুইদিন আছে, দেখা যাক; আশা করি ভালো হতে পারে।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সহ সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, পর্যটন কেন্দ্রে ঈদের প্রস্তুতি ভালো তবে গেস্ট এর অবস্থা ভালো না। তাছাড়া বুকিং দিয়ে তা আবার বাতিল করে দিচ্ছেন পর্যটকেরা। গরমের কারণে আমার এই পর্যন্ত বড় ৩টা বুকিং বাতিল হয়েছে। সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশ বুকিং ও নাই এখন। গতবছর এই সময় সব হোটেল বুকিং হয়ে গেছিল, কিন্তু এইবার সে অবস্থা নাই।
“অন্য সময়ে ১৫ রোজার মধ্যেই ৮০ শতাংশ বুকিং হয়ে যায়। এবছর ৪০ শতাংশ বুকিং হয়ে তার মধ্যে ১০ শতাংশই বাতিল হয়েছে, এবং ৩০ শতাংশ গেস্ট রয়েছেন। তার একটাই কারণ গরমে মানুষ বের হতে সাহস পাচ্ছে না। ৩ থেকে ৪ টা রুম বুকিং দিয়ে পরে বলছে, এখন আসবে না পরে আসবো। গতবছর রোজার ঈদে তিনদিনে আমাদের রিসোর্টে ১০০ শতাংশ গেস্ট ছিল।’’ যোগ করেন সেলিম আহমেদ।
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার চক্রবতী নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, ঈদে মৌলভীবাজার জেলায় একটা বিশাল সংখ্যক পর্যটক বেড়াতে আসেন, তাই পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে একটি কুইক রেসপন্স টিম তৈরি করা হয়েছে, সেই সাথে বাদ দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তাগণের ছুটি। আমরা সার্বক্ষণিক পর্যটক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কাজ করছি।
আই নিউজ/এইচএ
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’