নিজস্ব প্রতিবেদক
সিসিক নির্বাচন নিয়ে শেষ মুহূর্তে উভয় সংকটে মেয়র আরিফ!
দল না নির্বাচন- কোনটি ছাড়বেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য এখনও অপেক্ষা করতে হচ্ছে পুরো দুই দিন। আগামী ২০ মে জনসভা করে সিলেটবাসীকে সিদ্ধান্ত জানাবেন- এমন কথা আবারও বললেন তিনি।
বুধবার (১৭ মে) বিকালে নগরভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন মেয়র আরিফ। মঙ্গলবার (১৬ মে) রাতে তাঁর বাসার নিরাপত্তায় থাকা আনসার সদস্যদের প্রত্যাহারের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- আমি নির্বাচনকে ভয় পাই না। যারা ভয় পায় তারাই নানাভাবে আমাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আরিফ বলেন- আমি বিএনপি করি। আমার দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে- বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। এবার যদি আমাকে নির্বাচন করতে হয় তবে দল ছাড়তে হবে। দলের আদর্শ থেকে সরে আসতে হবে। আর দল করতে হলে নির্বাচন ত্যাগ করতে হবে। আমি কী করবো সেটি ২০ মে বলবো।
নির্বাচন না করতে তাঁর উপরে দলীয় কোনো চাপ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিসিক মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফ বলেন- কোনো চাপ নেই।
এ সময় তিনি এখন পর্যন্ত মনোনয়ন কিনেননি বলেও জানান।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মেয়র আরিফ বলেন- ‘আমাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার রাতের আঁধারে হঠাৎ করে আমার বাসার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা আনসার বাহিনীর ৬ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সিলেটে নতুন যোগদান করা আনসার ও ভিডিপি কমান্ডার। মৌখিক বা লিখিত- কোনোভাবেই আমাকে বা সিসিকের কাউকে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। অথচ গত ৬ বছর ধরে মাসিক বেতনের বিনিময়ে আনসার বাহিনীর ২৪ জন সদস্যকে নগরভবন ও আমার বাসার অফিসসহ সিসিকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করে আমার বাসা ও বাসা সংলগ্ন অফিসের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৬ জনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এতে আমার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।’
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার আগে গুঞ্জন ছিলো- সিসিক নির্বাচনে নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে যাচ্ছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তবে তাঁর সে চিন্তা-ভাবনা প্রথম হোঁচট খায় সাম্প্রতিক এক লন্ডন সফরে।
সিলেট সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার ঠিক আগের দিন (২ এপ্রিল) হঠাৎ লন্ডনের উদ্দেশে উড়াল দেন মেয়র আরিফ। ওইদিন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী সিলেটভিউ-কে জানান- ব্যক্তিগত সফরে তিনি লন্ডনে গেছেন। এক সপ্তাহের মতো সেখানে আরিফ অবস্থান করবেন।
কিন্তু আরিফুল হক লন্ডনে থাকেন পুরো দুই সপ্তাহ। লন্ডন সফরে থাকা অবস্থায় গুঞ্জন উঠে- আসন্ন সিসিক নির্বাচনে ফের মেয়র প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে আরিফের। তাঁর পলিসি হবে- নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক সমাজের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। বিজয়ী হওয়ার পর দল তাকে ‘এমনিতেই কাছে টেনে নেবে’- শুনা গিয়েছিলো এমন কথাও।
তবে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত। ‘বিএনপি এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না’ এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েন আরিফ। তাই লন্ডনে থাকা দলের নীতি নির্ধারক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে রাজি করিয়ে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই সেখানে যান সিলেট সিটি মেয়র। আর এ গুঞ্জন সত্যি করে ১০ এপ্রিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন মেয়র আরিফ। লন্ডনের কিংস্টন এলাকার একটি ভেন্যুতে তাদের এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।
তবে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষেই আরিফ ঘোষণা দেন- আর প্রার্থী হচ্ছেন না সিসিকে।
ওই সময় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়- সিসিকে প্রার্থী না হলেও নতুন চমক নিয়ে লন্ডন থেকে ফিরছেন আরিফ। হাই কমান্ডের নির্দেশনা মেনে সিসিক নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী না হয়ে তাঁর এই ‘ত্যাগ স্বীকারে’ দল তাঁকে অন্যভাবে মূল্যায়ন করবে। আগামীতে আরিফকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করার আশ্বাস দিয়েছেন তারেক রহমান। তাছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে সিলেটের একটি আসনে আরিফকে প্রার্থী করবে বিএনপি।
তবে দেশে ফিরে অনেকটা ‘বোল পাল্টে’ ফেলেন আরিফ। ফেরার দিন সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের দেওয়া সংবর্ধনাকালে তিনি বলেন- ‘হাই কমান্ড থেকে সিগন্যাল পেয়েছি। তবে কী সিগন্যাল তা খোলাসা করবো ঈদুল ফিতরের পরে।’
পরবর্তীতে ১ মে শ্রমিক দিবসের এক সমাবেশে মেয়র আরিফ বলেন- সারা দেশে বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও সিলেটের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আমি প্রার্থী হলে কেন হবো তা ২০ মে জনসভা করে সবার সামনে ব্যাখ্যা করবো।
আরিফের এই বক্তব্যে ফের শুরু হয় তোলপাড়। বিএনপি নির্বাচনে না থাকলেও সিলেটে বিএনপি নেতা আরিফকে নিয়ে চলে জোর আলোচনা।
এদিকে, ২০ মে’র অপেক্ষায় নগরবাসী থাকা অবস্থায় গত ১০ মে সন্ধ্যরাতে সিলেট মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সিলেট মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতৃবৃন্দকে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেন। তারেক রহমানের এ নির্দেশনায় আরেক দফা ‘বাধার মুখে’ পড়তে হলো আরিফুল হক চৌধুরীকে।
এদিকে, সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দলের ৩২ জন নেতাকে মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়। এ চিঠি আরিফুল হক চৌধুরীকেও না দেওয়া হলেও মৌখিকভাবে প্রার্থী না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে তাকে।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন সদস্য। ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে আরিফুল হক সিসিকের একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের আশীর্বাদ হয়ে তিনি সিলেটের প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। সেসময় তাকে ‘ডিপ্লোম্যাটিক লিডার’ হিসেবে আখ্যা দেন সাইফুর। ওই সময় আরিফ সিটি কর্পোরেশনের নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
২০১৩ সালের ১৫ জুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে মনোনয়ন নিয়ে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন আরিফ। আওয়ামী লীগের শাসনামলেই তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মেয়র হন তিনি। ২০১৮ সালে ফের কামরানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফ।
আরিফুল হকের জন্ম ১৯৫৯ সালের ২৩ নভেম্বর সিলেটের কুমারপাড়ায়। তাঁর পিতা মো. শফিকুল হক চৌধুরী এবং মা আমিনা খাতুন।
আইনিউজ/ইউএ
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’