হেলাল আহমেদ, আই নিউজ
সিসিক নির্বাচন : জাপা প্রার্থী বাবু্লের ইশতেহার ঘোষণা
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার প্রাক্কালে প্রার্থী বাবুল।
আর একদিন পরেই সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ২০২৩ অনুষ্ঠিত হবে। ইসির নিয়মানুযায়ী আজ মধ্যরাত থেকে শেষ হচ্ছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। ভোটের আগে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে প্রার্থীরা ইশতেহার ঘোষণা দিচ্ছেন; হচ্ছেন ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সিসিক নির্বাচনকে ঘিরে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
রোববার (১৮ জুন) বিকাল ৩টার দিকে তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ সময় তার সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচিত হলে সিলেটকে নাগরিকবান্ধব, শিল্পবান্ধব, যানজটমুক্ত, পরিবেশবান্ধব, জলাবদ্ধতামুক্ত, সুপরিকল্পিত আবাসনের নগর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে ইশতেহারে বাবুল উল্লেখ করেন, সিলেট সিটি করপোরেশনকে সর্বজনিন এবং দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলার কথা।
বাবুল বলেন, নগরের উন্নয়নে করপোরেশনের সঙ্গে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। নগর উন্নয়নে স্থায়ী কমিটিগুলোর সঙ্গে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ নাগরিকদের সম্পৃক্ত করা হবে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নগর ভবনকে আধুনিক ও ঐতিহ্যের মিশেলে একটি দৃষ্টিনন্দন নগর ভবনে রূপান্তর করব।
নির্বাচিত হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ডের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবিরোধী নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। যে কমিটি এলাকার উন্নয়ন ও শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
নগরের সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হবে জানিয়ে ইশতেহারে বাবুল বলেন, এজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হবে। যদিও একজন মেয়র ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন কিন্তু তাকে অন্তত সামনের ১০০ বছর মাথায় রেখে পরিকল্পনা নিতে হয়। যাতে নগরবাসী কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে পারেন। আমি সেটাই করতে চাই। সিলেট একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবন নির্মাণের অনুমতি প্রদানে যথাযথভাবে তৈরি করা হচ্ছে কি-না সেট কঠোরভাবে নিশ্চিত করা হবে।
প্রথমেই নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নগরের বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিদ্যমান রাস্তাঘাটের সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
নগরের পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে সিলেট ওয়াসা গঠন করা প্রয়োজন বলে জানান জাতীয় পার্টির এই প্রার্থী।
এছাড়া একাধিক কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে যে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা, বন্ধ থাকা পৌর পাঠাগার চালু ও নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া, কর্মজীবী নারীদের সন্তানদের দেখাশুনার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার চালু, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারীদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টারের ব্যবস্থা করা ও নারীদের জন্য স্বল্প খরচে থাকার সুবিধার্থে হোস্টেলের ব্যবস্থা করা হবে ইশতেহারে উল্লেখ করেন বাবুল।
তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরার জন্য জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। একটি সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তুলব। যেখানে নাট্যমঞ্চ, সিনেপ্লেক্সসহ সাংস্কৃতিক চর্চার সবধরণের সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সিলেটে খেলার মাঠের সল্পতার কথা উল্লেখ করে নির্বাচিত হলে করপোরেশনের উদ্যোগে খেলার মাঠ তৈরি এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলাধুলার প্রসার ঘটাতে ব্যবস্থা নেযা এবং বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নগরকে সবুজে আচ্ছাদিত করা হবে বলে জানান তিনি।
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার আগে নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, একটি পরিকল্পিত নগরের ক্যানভাস অনেক বড়। শুধু রাস্তাঘাট আর ড্রেন করলেই নগরটি পরিকল্পিত হয়ে উঠে না। সিলেট নগরের এখনও অনেক সমস্যা রয়েছে। যানজট, জলাবদ্ধতা ছাড়াও অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সিটি করপোরেশনের আয়তন অনেক বেড়েছে। ২৭টি ওয়ার্ড থেকে হয়েছে ৪২টি ওয়ার্ড। বর্ধিত এলাকায় অনেক সমস্যা রয়েছে। অনেক পিছিয়ে রয়েছে নতুন এলাকাগুলো। সুতরাং এই নগরকে যে বা যারা ভালোভাবে জানে, বুঝে তাঁর হাতেই নগর উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
বাবুল বলেন, 'উড়ে এসে জুড়ে বসা' কেউ এই নগরের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। যে নগরের অলিগলিই চেনে না তার পক্ষে নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণ কতটুকু সম্ভব এই বিচারের ভার আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। আমি এই শহরেরই সন্তান। সুরমার এপার-ওপার দুপারই আমার চেনা। এই নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে আমার পদচারণা রয়েছে। তাই নগরবাসীর কাছে আমার আহ্বান আপনারা যেন সবকিছু বিবেচনায় রেখে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেন।
এসময় বাবুল বলেন, আমি কথা দিচ্ছি, আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করলে সিলেটকে একটি আধুনিক মহানগর হিসেবে গড়ে তুলব। নগরবাসীর নিরাপত্তা, যোগাযোগের উপযোগী নতুন নতুন রাস্তা, ফুটপাত নির্মাণসহ যানজট নিরসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেবো।
এর আগে শনিবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইমতেহারে তিনি গ্রিন-ক্লিন-স্মার্ট সিলেট গড়ার অঙ্গীকার করেন।
আনোয়ারুজ্জামানের ২১ দফা ইশতেহার ঘোষণা
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আলোচিত আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও। শনিবার (১৭ জুন) দুপুর ১টার দিকে নগরীর হোটেল নির্বানা ইনের হলরুমে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদলে, কার্যনির্বাহী সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভরপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার আগে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, সিলেটের সমস্যা ও সমাধান জানতে ইতোমধ্যেই আমরা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, নগর-বিশেষজ্ঞ, পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। সেমিনারে অংশ নিয়েছি। অনলাইনে হাজার হাজার মানুষের সুনির্দিষ্ট মতামত, পরামর্শ এসেছে। নির্বাচিত হলে যার অনেক কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব। নগরবিদদের মতো আমারও আকাক্সক্ষা ‘সুন্দর সমৃদ্ধ সিলেট’। বিশেষজ্ঞ মতামত ও জরিপের কারণে এখন আমি এই শহরের প্রতিটি সমস্যা ও তার সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে সচেতন। যেসব সমস্যা ইতোমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে, তা সমাধানে স্বল্প-মধ্যম-দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পরিকল্পনাও করেছি আমরা। জনগণ আমাকে নির্বাচিত করলে, ৫ বছরের মধ্যে সিলেট একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে নাগরিকদের সামনে দৃশ্যমান হবে ইনশাআল্লাহ।
এ সময় আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননত্রেী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। সিলেটেও আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, যা অতীতে কোনও সরকার করেনি। আমি সিলেটকে একটি স্মাট নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করুন।
ইশতেহারে স্থান পাওয়া ২১ দফা হলো-
১. স্মার্ট নগরভবন, ২. সবুজ, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব সিলেট, ৩. জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ৪. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা , ৫. রিকল্পিত নগরায়ন, ৬. নিরাপদ স্বাস্থ্যকর সিলেট, ৭. দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা, ৮. শিক্ষা ও সংস্কৃতিবান্ধব সিলেট, ৯. নারীবান্ধব সিলেট, ১০. ব্যবসা বান্ধব সিলেট , ১১. পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা, ১২. সচল সিলেট, ১৩. মানবিক উন্নয়নে সিলেট, ১৪. প্রবাসী বান্ধব সিলেট, ১৫. সম্প্রীতির সিলেট, ১৬. পর্যটনবান্ধব সিলেট, ১৭. সামাজিক অপরাধ নির্মূল, ১৮. অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত সিলেট, ১৯. নাগরিকবান্ধব সিলেট, ২০. তারুণ্যের সিলেট, ২১. প্রযুক্তির সিলেট।
আই নিউজ/এইচএ
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’