আই নিউজ ডেস্ক
বিশ্বনাথ উপজেলায় নির্মানাধীন মসজিদ নিয়ে দুই পক্ষের উত্তেজনা

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তর দৌলতপুরে নির্মানাধীন ‘উত্তর দৌলতপুর মদিনা জামে মসজিদ’ নিয়ে আবারও দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় তাদের মধ্যে আবারও সংঘর্ষের আশংকা করা হচ্ছে।
দু’পক্ষের এক পক্ষে রয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া ও তার ভাই মোতাওয়াল্লী আলা মিয়া। আর অন্য পক্ষে রয়েছেন মোস্তফা মিয়া। তারা সকলেই দৌলতপুর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং সম্পর্কে একে অপরের চাচা-ভাতিজা।
গত বুধবার (২৬ জুলাই) চাচা মোস্তফা মিয়া বাদী হয়ে ভাতিজা আলা মিয়াসহ ৭জনকে অভিযুক্ত করে নির্মানাধীন মসজিদকে নির্মানাধীন ভবন উল্লেখ করে মসিজিদের জায়গাসহ আরও কয়েকটি দাগ উল্লেখ করে ১৪৪ধারা জারি করান। আর এনিয়ে নতুন করে দু’পক্ষে ফের উত্তেজনা দেখা দেয়।
স্থানীয়রা জানান, ২০২১ সালে গ্রামে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন মোস্তফা মিয়া ও তার ভাতিজা (আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে) আলা মিয়াদের গোষ্টির লোকজন। এরপর ওই বছরের ৬ডিসেম্বর আলা মিয়াকে সভাপতি, শফিক মিয়াকে সাধারণ-সম্পাদক ও মোস্তফা মিয়াকে সদস্য এবং তার আপন ভাতিজা লিটন মিয়াকে কোষাধ্যক্ষ করে ১৩সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এরপর মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করা হলে ৫লাখ টাকা নিয়ে মোস্তফা মিয়ার ভাতিজা মসজিদের কোষাধ্যক্ষ লিটন মিয়ার সঙ্গে কমিটির সভাপতি-সম্পাদকদের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে ৫লাখ টাকা না দেওয়ায় ২০২২ ইং সালের ৭ নভেম্বর লিটন মিয়াকে কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে বহিস্কার করা হয়। আর মসজিদের সভাপতি ও মোতাওয়াল্লী আলা মিয়ার ভাই ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ধন মিয়াকে কোষাধ্যক্ষ পদে পদায়ন করা হয়। আর এতে করে তাদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি দেখা দেয়। এতে কমিটির সভাপতি মোতাওয়াল্লী আলা মিয়া ও তার ভাই ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া এক পক্ষে এবং কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ লিটন মিয়া ও তার চাচা মোস্তফা মিয়া অপর পক্ষে অবস্থান নেন।
এরপর ওই ৫লাখ টাকাসহ পূর্ব বিরোধের জেরে ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল আলা মিয়া ও মোস্তাফা মিয়া পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষে প্রায় ১০জন আহত হন। পরদিন ১৯ এপ্রিল আলা মিয়াসহ তার পক্ষের ১৯জনকে আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন মোস্তফা মিয়া, (মামলা নং ১৩)। মামলায় নির্মানাধীন মসজিদের সভাপতি মোতাওয়াল্লী আলা মিয়া, তার ভাই কোষাধ্যক্ষ ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসন ধন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শফিক মিয়া ও তাদের পক্ষের কুতুব আলী কিছুদিন জেল খাটেন।
ওই মারামারি মামলার পর গত ৩মে মোস্তফা মিয়া বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের আলা মিয়াসহ ৩জনকে অভিযুক্ত করে মসজিদকে নির্মানাধীন ভবন উল্লেখ করে সাটারিংয়ের মালামাল জব্দ করতে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে মামলা দায়ের করেন, (বিবিধ মামলা নং ৩৭/২০২৩ইং)। মামলার প্রেক্ষিতে সেখানে ১৪৪ধারা জারি করা হয়। তবে, দৌলতপুর মৌজার বিএস ৩৭৪৩,৩৮০৬,৩৮০৭,৩৮০৮,৩৮০৯,৩৮১০ দাগের জায়গা নিজেদের উল্লেখ করা হলেও ৩৮০৬,৩৮০৭ ও ৩৮০৮ নং দাগের ৬৩ শতক জায়গায় নির্মানাধীন মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮০৬ নং দাগের ২১শতক জায়গার মালিক মাসুক মিয়া, ৩৮০৭ নং দাগের ২৪শতক জায়গার মালিক ইরণ মিয়া এবং ৩৮০৮ নং দাগের ১৮শতক জায়গার মালিক হচ্ছেন সুরুজ আলী। তারা মসজিদে ওই জায়গাটুকু দান করেছেন।
১৪৪ধারা জারির পর বিশ্বনাথ থানা পুলিশের এসআই অমিত সিংহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গত ২৫জুন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আর এতে ৩৮০৬,৩৮০৭ ও ৩৮০৮ নং দাগের ৬৩শত জায়গায় নির্মানাধীন মসজিদ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। আর কেবলমাত্র ৩৮০৯ নং দাগের মসজিদের সামনের জায়গা মোস্তফা মিয়ার রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তিনি।
এর আগে গত ১৯ এপ্রিল মোস্তফা মিয়ার মারামারি মামলার প্রায় ২১দিন পর গত ১০মে আলা মিয়া পক্ষের কুতুব আলী বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের মোস্তফা মিয়া, লিটন মিয়াসহ ৭জনকে আসামি করে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৩য় আদালতে টাকা আত্মসাৎ ও মারামারির মামলা দায়ের করেন, (পিটিশন মামলা নং ৫৯ এবং মামলার জিআর নং ১৯৪/২৩ইং)।
এরপর ১৪৪ ধারা জারি করা নির্মানাধীন ওই মসজিদের সাটারিং খোলে নেন ঠিকাদির প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এঘটনাকে পুঁজি করে বেআইনি কার্যক্রমের অভিযোগ এনে গত বুধবার (২৬জুলাই) আবারও আলা মিয়াসহ ওই পক্ষের মোট ৭জনকে অভিযুক্ত করে মোস্তফা মিয়া সিলেটের অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওইদিন শুনানী শেষে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট ইমরুল হাসান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজী আতাউর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭জুলাই) আবারও থানা পুলিশের এসআই অমিত সিংহ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্তিশৃংখলা বাজায় রাখতে বলেন। এ নিয়ে নতুন করে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
উত্তর দৌলতপুরের মুরব্বি মাসুক মিয়া, ইরণ মিয়া ও সুরুজ বলেন, তারা তাদের মোট ৬৩শতক জায়গা মসজিদে দান করেছেন। অথচ, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নির্মানাধীন মসজিদকে বারবার নির্মানাধীন ভবন উল্লেখ করে আদালতে মামলা দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করাচ্ছেন মোস্তফা মিয়া। মুলত তার ভাতিজা লিটন মিয়ার ৫লাখ টাকা আত্মসাৎকে কেন্দ্র করে গত এপ্রিল মাসে মারামারি হয়।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও মোতাওয়াল্লি আলা মিয়া এবং তার ভাই ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া বলেন, লিটন মিয়া মসজিদের টাকা আত্মসাৎ করায় মসজিদ কমিটি ও নিজেদের গোষ্টির মধ্যে ফাটল ধরে। আর এই টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ এপ্রিল মারামারি হয়। এরপর তাদেরকে ঘায়েল করতে আদালতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নির্মানাধীন মসজিদকে নির্মানাধীন ভবন উল্লেখ করে মোস্তফা মিয়া বারবার অভিযোগ করেন এবং ১৪৪ ধারা জারি করান। যা আদৌ সত্য নয়।
তবে, টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা দাবি করেছেন মোস্তফা মিয়ার ভাতিজা মসজিদ কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ লিটন মিয়া। তিনি বলেন, মসজিদের সামনে তার চাচা মোস্তফা মিয়ার জায়গায় মাটি ভরাট শুরু করা হলে তা নিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। আর বাকিবিতন্ডার পর আলা মিয়া পক্ষ তাদের উপর হামলা করলে দু’পক্ষে মারামারির ঘটনা ঘটে।
টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কোষাধ্যক্ষ হিসেবে তাকে মুল্যায়ন না করে সভাপতি ও মোতাওয়াল্লী আলা মিয়া বিচ্ছিন্নভাবে টাকা খরচ করেন। এনিয়ে বেশ কিছুদিন দু’পক্ষে বাক বিতন্ডা হয়েছে। আর এইসকল বিষয়াদি নিয়ে তাকে ও তার চাচাকে ঘায়েল করতেই এমন মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এছাড়া যেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে মসজিদের নামে কোন ওয়াক্ফ না করায় তার চাচা নির্মানাধীন ভবন উল্লেখ করেছেন বলেও জানান তিনি।
বিশ্বনাথ থানার এসআই অমিত সিংহ বলেন, মোস্তফা মিয়া নির্মানাধীন ভবন উল্লেখ করে যেখানে ১৪৪ ধারা জারি করিয়েছেন সেখানে ভবন নয় নির্মানাধীন মসজিদ রয়েছে। তিনি (মোস্তফা মিয়া) যেসকল জায়গার দাগ নং উল্লেক করেছেন সেই দাগের বেশিরভাগ জায়গাতেই মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে খালি জায়গা খুব কমই আছে। গত ২৫জুন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এসকল বিষয় উল্লেখ করে একটি তদন্ত প্রতিবেদনও দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু তারপর গত বুধবার আবারও আদালতে পিটিশন দেওয়ায় দু’পক্ষে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজী আতাউর রহমান বলেন, উত্তর দৌলতপুরে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে এমন কোন কাজ পরিলক্ষিত হয়নি। আর যদি এমন কেউ করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইনিউজ/ইউএ
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’