নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
নবীগঞ্জে বকেয়া না পেয়ে ২৪ দিন ধরে কর্মবিরতিতে চা শ্রমিকরা
ফাইল ছবি
বার বার আশ্বাস দিলেও মিলছে না বকেয়ার টাকা; বিপরীতে চা শ্রমিকদের দিনাতিপাত করতে হচ্ছে মানবেতর ভাবে। নিরুপায় হয়ে কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিও দিয়েছে। কিন্তু তাতেও সুফল মিলছে। ৩৬০ জন চা শ্রমিকের কথা পৌঁছাচ্ছে না বাগান মালিকদের কানে।
চলমান তলব, রেশন, বকেয়া মজুরি, বোনাস, উৎসব ভাতা, ভবিষ্যত তহবিলের বকেয়া টাকা, চিকিৎসা, স্থায়ী বাসস্থান নিশ্চিত করণের দাবীতে দফায় দফায় নানা কর্মসূচি পালন করে আসলেও মিলছেনা সমাধান। টানা ২৪ দিন ধরে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করে আসছে দুটি চা বাগানের প্রায় ৩৬০ জন চা শ্রমিক।
চা শ্রমিকদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়- নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগান। এই দুটি বাগানে কাজ করেন ৩৬০ জন চা শ্রমিক। বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে সম্পাদিত শ্রমচুক্তি মোতাবেক তাদের বকেয়া অর্থ পরিশোধ করছেনা মালিকপক্ষ। এ নিয়ে গত ২৫ জুন চা শ্রমিকদের ৭ দফা দাবী বাস্তবায়ন করার জন্য ইমাম টি এস্ট্রেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবর লিখিত ভাবে জানায় চা শ্রমিকরা।
মালিক পক্ষ শ্রমিকদের অভিযোগ আমলে না নেওয়ায় ৩ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত কর্মবিরতী পালন করে চা শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দাবী, ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের ৩৬০ জন শ্রমিকের শ্রমচুক্তি মোতাবেক শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ বাবদ ২০১৯-২০ ও ২০২১-২২ অর্থ বছরের ৮১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, এরিয়া বোনাসের ১৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা পরিশোধ করছেনা মলিকপক্ষ।
এ ছাড়া চা বাগান শ্রমিক ভবিষ্যত তহবিলের (পিএফ) ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা মালিক পক্ষ পিএফ কার্যালয়ে জমা প্রদান না করার ফলে অবসর প্রাপ্ত শ্রমিকগণ পিএফ অর্থ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে চা শ্রমিকদের রোদ-বৃষ্টিতে বাসস্থানে অবস্থান করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত তারা।
সংকট সমাধানে (১১ জুলাই) বিকেলে শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের সমঝোতায় বৈঠকে বসে ইমাম টি এস্ট্রেট লিমিটেড ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। এ সময় ইমাম টি এস্ট্রেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান জিকে মাইনুদ্দিন চৌধুরী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ পরিশোধ, ভবিষ্যত তহবিলের টাকা ৩০ আগস্টের মধ্যে পিএফ কার্যালয়ে কিস্তি আকারে জমাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানে আশ্বাস দেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে এনিয়ে চুক্তি সই হয়।
এরপর ১২ জুলাই থেকে কাজে যোগদেন শ্রমিকরা। ১৮ জুলাই বকেয়া মজুরি/এরিয়ার অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় মালিক পক্ষ। পুনরায় নতুন তারিখ হিসেবে ২০ জুলাই বকেয়া টাকা পরিশোধ করার আশ্বাস দেয়া হয়। তবে ২০ জুলাইও বকেয়া পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ।
এছাড়া ১২ জুলাই হতে ২০ জুলাই পর্যন্ত চা শ্রমিকরা বাগানে কাজ করলেও ৮ দিনের দৈনিক তলব (মুজুরী) ও রেশন শ্রমিকদের দেয়নি মালিকপক্ষ। ফলে শুক্রবার (২১ জুলাই) থেকে আবার কর্মবিরতি পালন শুরু করে শ্রমিকরা। গত (২২ জুলাই) ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে চা শ্রমিকরা। (২৬ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে নবীগঞ্জ উপজেলার ইমাম ও বাওয়ানী বাগানের চা শ্রমিকরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। পরে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। এ সময় চা শ্রমিকদের দাবী পূরণসহ বর্তমান মালিকপক্ষের লিজ দ্রুত বাতিল করে নতুন মালিক নিয়োগ করে বাগান পরিচালনা করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। এ সময় জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মালিকপক্ষ (৩০ জুলাই) বকেয়া অর্থ পরিশোধ করার আশ্বাস দেয়। ফের আশ্বাস ভঙ্গ করে মালিকপক্ষ।
৩০ জুলাই টাকা না দেওয়ায় (২ আগস্ট) পুনরায় মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বার বার আশ্বাস দিয়েও বকেয়া অর্থ পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ। ফলে গত ২৪ দিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের চা শ্রমিকরা।
ইমাম চা বাগানের সভাপতি রামভজন রবিদাশ বলেন, বার বার আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েও মালিকপক্ষ বকেয়া পরিশোধ করেনি। ফলে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। গত ২৪ দিন ধরে দুটি বাগানের ৩৬০ জন শ্রমিকের পরিবার অনাহারে দিন-যাপন করছে। আশ্বাসের বেড়াজাল থেকে বের হয়ে দ্রুত এই সংকট সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া হউক।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের মালিকপক্ষ চা শ্রমিকদের সঙ্গে বৈষম্য করছে, বার-বার আশ্বাস দিয়েও টালবাহানা অব্যাহত রেখেছে মালিকপক্ষ। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা না হলে বৃহৎ আকারে কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের মহাব্যবস্থাপক ফখরুল ইসলাম বলেন, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে, বাগান পরিচালনায় মালিকপক্ষ নানা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বলেন, শ্রমিকদের বকেয়ার পাশাপাশি বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে সরকার ৮০ লাখ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর পাওনা। কোনোটিই তারা শোধ করছে না। এ জন্য লিজ বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
আই নিউজ/এইচএ
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’