নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার
আপডেট: ০০:২১, ২ জানুয়ারি ২০২২
মৌলভীবাজারে মুগ্ধতা ছড়ালো ফরাসি নাটক ‘কঞ্জুস’
`কঞ্জুস` নাটকের একটি দৃশ্য
পর্যটন ও প্রবাসি জেলা মৌলভীবাজারে মুগ্ধতা ছড়ালো ফরাসি নাটকের বাংলা রূপান্তর ‘কঞ্জুস’।
ফরাসিদের পাশের দেশ ব্রিটেন। যেখানে থাকেন ফরাসিদের চিরশত্রু ব্রিটিশরা। সেখানে আছেন অনেক ‘বাংলাদেশী ব্রিটিশ’। যার বড় একটা অংশ মৌলভীবাজার ও সিলেট বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ, কিংবা ‘সিলটি ব্রিটিশ’। সেই সিলটি ব্রিটিশদের দেশ মৌলভীবাজারের মানুষজনও ফরাসি এই নাটকটি দেখে মুগ্ধ। অনেকের হাসতে হাসতে দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। ইংরেজি বছরের প্রথমদিন ‘কঞ্জুস’ নাটক এক নির্মল আনন্দ দিয়ে গেছে মৌলভীবাজারবাসীকে।
ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের কমেডি ‘দ্য মাইজার’র রূপান্তর ‘কঞ্জুস’। নাটকটির রূপান্তর করেছেন প্রখ্যাত অভিনেতা তারিক আনাম খান। নির্দেশা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। শনিবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যারাতে রূপান্তরিত এ নাটকটি মঞ্চস্থ হলো মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে।
‘হোক কলরব, আজ বিজয় মহোৎসব’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে মৌলভীবাজারে শুরু হয়েছে সাতদিনব্যাপী নাট্য উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও উদ্যোগে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জেলা প্রশাসন এ উৎসবের আয়োজন করেছে।
'কঞ্জুস' নাটকের একটি দৃশ্য
শনিবার (১ জানুয়ারি) উৎসবের দ্বিতীয় দিনে মঞ্চায়ন হয় বিখ্যাত নাটক ‘কঞ্জুস’।
লোকনাট্য দলের হাস্যরসধর্মী এ নাটকটি ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছে তার ৭০০তম মঞ্চায়ন। মৌলভীবাজারে দারুণ অভিনয় করেছেন সব কলাকুশলী।
নাটকের দৃশ্যগুলো দর্শকদের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন ও দর্শকমুগ্ধতা তার বড় প্রমাণ।
নাটক শেষে কলাকুশলীদের হাতে সম্মাননা তোলে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তানিয়া সুলতানাসহ অতিথিরা।
‘কঞ্জুস’ বা হাড়কিপ্টে কাহিনী
নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘কঞ্জুস’ বা হাড়কিপ্টে চরিত্রে ছিলেন হায়দার আলী খান। তার বয়স ষাট পেরিয়ে সত্তরের ঘরে। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে কাযিম আলী খান ও মেয়ে লাইলি বেগম। কোনো এককালে সমুদ্র ভ্রমণে গিয়ে তার মেয়ে লাইলির সঙ্গে পরিচয় হয় বদিউজ্জামান ওরফে বদি মিয়ার। প্রেমের দাম দিতে গিয়ে বদি মিয়া খাস চাকর হয়ে যায় হায়দার আলী খানের।
এদিকে, হায়দার আলী খানের ছেলে কাযিম আলী খান প্রেমে পড়ে পাশের বাড়ির মর্জিনা বেগমের। কাযিমের সঙ্গে মর্জিনার প্রেম যখন তুঙ্গে, তখন হায়দার আলীর চোখ পড়ে মর্জিনার ওপর। গোলাপজান ঘটকের মাধ্যমে লাইলির সঙ্গে হায়দার আলীর বিয়ের কথাবার্তা এগোতে থাকে। কাযিম তার আব্বা হুজুরের এহেন আচরণে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়। এরপর নানা ঘটনার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায় নাটকের গল্প।
'কঞ্জুস' নাটকের একটি দৃশ্য
অভিনয়ের পাশাপাশি দর্শকদের কাছে প্রশংসা পেয়েছে নাটকের কোরিওগ্রাফিও। বিভিন্ন দৃশ্যে দর্শকদের হাসি নির্মল আনন্দের প্রকাশ ঘটায়। অভিনয়ের দিক থেকে প্রধান চরিত্রগুলোর কুশলীরা যেমন বোদ্ধা শিল্পীর পরিচয় দিয়েছেন, ঠিক তেমনি অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন নাটকটির সহযোগী চরিত্রের কুশলীরাও।
দর্শকদের মতে, নাটকটির পরিবেশনায় মঞ্চসজ্জা, নৃত্য, আলোকসজ্জা, পোশাক, সংগীত, রূপসজ্জা ছিলো অত্যন্ত চমৎকার। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর গল্পের মধ্য দিয়ে মঞ্চায়ন হয়েছে কঞ্জুস নাটকটির।
১৯৮৭ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে বিগত ৩৪ বছর ধরে নাটকটি নিয়মিত প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলাদেশে মঞ্চ নাটকের দর্শক তৈরিতে এ নাটকটি বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া কঞ্জুস বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাটক। এ নাটকের কুশীলবরা দীর্ঘদিন ধরে এ নাটকে অভিনয় করেছেন। দীর্ঘ সময়ের মঞ্চায়ন অভিজ্ঞতা থেকে এ নাটকের ডিজাইন ও অভিনয় রীতি দর্শকদের মুগ্ধ করার এক অনন্য প্রয়াস।
'কঞ্জুস' নাটকের একটি দৃশ্য
হাসির নাটক হিসেবে শুরু থেকেই সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে নাটকটিতে একটি প্রাণবন্ত নাট্য-আবহ তৈরির। রূপান্তরের ক্ষেত্রেও প্রচলিত ভাষা ও কথ্যরীতির ব্যবহার বেশ চমৎকার বলেই মন্তব্য করেছেন দর্শকরা। তাদের মতে, পুরনো ঢাকার বাসিন্দা, যারা ‘ঢাকাইয়া’ ভাষায় কথা বলেন, তাদের প্রাত্যহিক জীবনের ভাষা ও সংস্কৃতি তুলে ধরেছে নাটকটি।
এত বছরেও বুড়ো হননি ‘কঞ্জুস’
৩৪ বছরের বেশি সময় ধরে ঢাকার মঞ্চে নিয়মিত ‘কঞ্জুস। এত বছরেও বুড়ো হননি ‘কঞ্জুস’। নাটকটি পুরোনো হয়নি। সেই যে শুরু হলো ১৯৮৭ সালের ৮ মে, এখন পর্যন্ত মঞ্চ মাতিয়ে রেখেছে নাটকটি। ১০০, ২০০ করে নাটকটি ৭০০ মঞ্চায়নের মাইলফলক অতিক্রম করে রেকর্ডও করেছে।
১৯৮৭ সাল থেকে ঢাকার মঞ্চে নিয়মিত হলেও ‘কঞ্জুস’নাটকের ইতিহাস আরও পুরোনো। ১৯৮২ সালে ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফেরেন কজন নাট্যকর্মী। দেশে ফিরে তাঁরা প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাট্যদল’নামের একটি মঞ্চনাটকের দল। সঙ্গে আরও কয়েকজন।
এর মধ্যে আছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ, তারিক আনাম খান, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, গোলাম সারোয়ার, লিয়াকত আলী লাকী, কামাল উদ্দিন নীলু প্রমুখ। তারিক আনাম খান ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে অনুবাদ করলেন ‘কঞ্জুস’।
১৯৮৩ সালের প্রথম দিকে নাটকটি মঞ্চে আনা হয়। ১০টি প্রদর্শনীর পর ১৯৮৭ সালে নাটকটি সম্প্রচারিত হয় বিটিভিতে। তারপর নাট্যদল আর নাটকটি মঞ্চস্থ করেনি। পরে নতুন আঙ্গিকে নাটকটি মঞ্চে আনে লোক নাট্যদল। নির্দেশনা দেন লিয়াকত আলী লাকী।
মলিয়েরের নাটকটি পুরোপুরি বাংলাদেশি আবহে এনে ফেলা হয়েছে। সংলাপে ব্যবহার হয়েছে পুরান ঢাকার ভাষা। পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের জীবনধারার আবহ তৈরি করার জন্য এই নাটকে পুরোনো দিনের জনপ্রিয় সব হিন্দি গান ব্যবহৃত হয়েছে।
জীবদ্দশায় মলিয়ের সমালোচকদের দ্বারা নানাভাবে সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর নাটক দেশে দেশে মানুষের মধ্যে কত যে শক্তি সঞ্চারিত করেছে, তা কঞ্জুস দিয়েই বোঝা যায়।
নাটকটির শততম প্রদর্শনী হয় ১৯৯৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। ৪০০তম প্রদর্শনী হয় ২০০১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর নাটকটির ৫০০তম প্রদর্শনী হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর নাটকটি ৭০০তম প্রদর্শনী হয়।
দেশ-বিদেশে পুরস্কৃত ‘কঞ্জুস’
দেশ ও বিদেশে বহু পুরস্কারও অর্জন করেছে কঞ্জুস। ১৯৯৩ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অলিম্পিকে অন্যতম সেরা প্রযোজনার পুরস্কার পেয়েছে। মোনাকোয় অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব থিয়েটার উৎসব ২০১৩’তে অংশগ্রহণ করে প্রশংসিত হয়। যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডি সেন্টারেও কঞ্জুস-এর উপস্থাপনা দর্শকনন্দিত হয়।
আইনিউজ ভিডিও
নাট্য উৎসবের উদ্বোধন
ঘুরে আসুন মৌলভীবাজারের পাথারিয়া পাহাড়
হাইল হাওরের বাইক্কাবিলে পর্যটক আর পদ্মটুনার ভিডিও ভাইরাল
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’