অপবাদ সইতে না পেরে রাজনগরে চিরকুট লিখে স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নে গলায় ফাঁস দিয়ে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। তার পড়ার ঘর থেকে পরিবারের লোকজন একটি চিরকুট উদ্ধার করেছেন। বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুর ৩টার দিকে উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুপ্রাকান্দি গ্রামে এঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) ময়নাতদন্ত শেষে তার মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্কুলছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের সুপ্রাকান্দি গ্রামের আওলাদ মিয়ার মেয়ে সিমলা আক্তার (১৬) কান্দিগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবছর এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। পাশ্ববর্তী ফতেপুর ইউনিয়নের জোড়াপুর গ্রামের নানার বাড়ি থেকে সে লেখাপড়া করত। একমাস আগে তাকে নিজের বাড়িতে নেয় তার পরিবার। সেখান থেকে তাকে বিদ্যালয়ে আনা-নেয়ার জন্য ফতেপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী নামের এক সিএনজি অটোরিক্সা চালককে ভাড়ায় রাখা হয়।

সম্প্রতি ওই চালক ও সিমলার সম্পর্ক নিয়ে এলাকার মানুষের মুখে মুখে নানা কথা ছড়িয়ে পড়ে। এব্যাপারে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। বুধবার দুপুরে নিজ বাড়িতে ঘরের তীরের সাথে গলায় ওড়না বেঁেধ ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। বিষয়টি টের পেয়ে তার স্বজনরা মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে তার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা তার পড়ারঘর থেকে একটি চিরকুট উদ্ধার করেন।

চিরকুটের লেখা রয়েছে তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

“আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র ডাইভার দায়ি। ডাইভারকে জেন সঠিক শাস্তি দেওয়া হয়। ডাইভারকে ও আমার কাছে পাঠাইয়া দিয়। আমার কথা বেভে কেউ কষ্ট পাইয় না। কষ্ট একটাই ভাই-বোন আর আব্বার সাথে শেষ ভারের মাততে পারলাম না। কিনতা না করিয়া ও নিজর ইজ্জত রাখতে পারলাম না। সবাই জেনে গেছে আমি খারাপ। আমি খারাপ না। এই অপবাধ ঘাড়ে লইয়া চলতে পারতাম নায়। তাই নিজর জিবন নিজেই নিয়ে নিলাম। ডাইভারদের বলছি বিশেষ করে জুলমানদের সঙ্গে ডাইভারদেরকে কার বিষয়ে না জেনে মিথ্যা অপবাধ দিয় না। এই অপবাধের কারণে সেই মানুষের জিবন ও নিয়ে নিতে পারে। আল্লায় সকলের মা বইন আল্লায় দিছইন। এখন তেকে মানুষর রিরুদ্ধ কোনতা কউয়ার আগে জেন অনেক ভার বাবে। দোয়া কর আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। সবাই আমার জন্য দোয়া করিয় আল্লাহ আমাকে জেন দুজখের আগুনে যেন না পুরান। ইতি সিমলা।”

আত্মহত্যার আগে সুইসাইড নোট লিখে গেছেন সিমলা

নিহত সিমলার চাচা মালিক উস্তার বলেন, মৃতদেহ হাসপাতালে রেখে বাড়িতে এসে তার পড়ার ঘরে তল্লাসি করি। এসময় তার খাতার ভিতর থেকে চিঠির মতো লেখা একটি কাগজ পাই। সেখানে সে মৃত্যুর জন্য ড্রাইভারকে দায়ী করে লিখে গেছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক এই ঘটনার বিচার চাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য তপুর আলী বলেন, মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মারা গেছে। পরে তার পরিবারের লোকজন আমাকে একটি চিরকুট দেখিয়েছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে।

এব্যপারে রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি কি কারণে আত্মহত্যা করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মেয়েটির মা বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। মৃতদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আইনিউজ/মো. ফরহাদ হোসেন