Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৭ ১৪৩২

সাজু মারছিয়াং, শ্রীমঙ্গল

প্রকাশিত: ২১:৫৭, ২২ জুলাই ২০২২

চা-বাগানে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছে আলোর দিশারী

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয় মানুষের ভোগান্তি দূর করতে স্বেচ্ছাশ্রমে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছে আলোর দিশারী নামের একটি সামাজিক সংগঠন। সাঁকোটি দেখতে বেশ সুন্দর, পাশাপাশি এটি শিশু ও বয়স্কদের পারাপারের জন্য নিরাপদও।

সংগঠনের সদস্যদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্থানীয় জনগণের সহযোগিতায় বাঁশের সাঁকোটি এখন নজর কাড়ছে সবার। উপজেলার কালিঘাট চা–বাগানের ধোবিঘাট এলাকায় প্রায় ১০০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকোটি স্থানীয় ব্যক্তিদের সাময়িক ভোগান্তি দূর করলেও সেখানে সরকারিভাবে একটি পাকা সেতুর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

সরেজমিন কালিঘাট চা–বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ, কাঠ, গাছের গুঁড়ি, রশি, মোটা তার দিয়ে ছড়ার ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি প্রায় ১০০ ফুট লম্বা। সাঁকোটি সবার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে বিভিন্ন রং ব্যবহার করে নানাভাবে এটিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সাঁকোটির ঠিক মাঝখানে বসানো হয়েছে লাল–সবুজের জাতীয় পতাকা। বাতাসে পতপত করে উড়ছে পতাকাটি। টিফিনের সময় বাড়িতে যাওয়া একদল ছোট শিক্ষার্থীকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ছড়া পার হতে দেখা যায়। তাদের চোখে মুখে আনন্দের ঝলখানি। 

আলোর দিশারীর সংগঠকরা

আলোর দিশারী সামাজিক সংগঠনের সভাপতি পরিতোষ কুমার তাঁতী বলেন, ‘আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে শুনে আসছি, এখানে ছড়ার ওপর সেতু হবে। মূল সড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়ক হবে। কিন্তু এত বছরেও কিছুই হয়নি। ছড়ার একদিকে কালিঘাট চা–বাগানের মূল অংশ, বাজার, উপাসনালয়। আরেক পাশে স্কুল ও মানুষের বসতি, বড় রাস্তা, পোস্ট অফিস ইত্যাদি। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে, শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে ছড়ার ওপর দিয়ে যায়। আমরা লক্ষ করেছি, এখানে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিশুদের। শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সময় ছড়ার পানিতে নেমে অনেক কষ্ট করে ছড়া পার হয়। ছড়ায় পানি বাড়লে সেটা সম্ভব হয় না। অনেকটা পথ ঘুরে স্কুলে যেতে হয়। এসব বিষয় দেখতে দেখতে আমাদের সংগঠন থেকে একটি উদ্যোগ নিলাম, এখানে একটি বাঁশের সাঁকো করার। আমাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে চা–বাগানের সবাই এগিয়ে এসেছে। কেউ নিজের বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কেটে আমাদের দিচ্ছে, কেউ কাঠ দিচ্ছে, কেউ কেউ টাকা দিচ্ছে। এভাবে আমরা ৩ জুলাই থেকে কাজ শুরু করে প্রায় দুই সপ্তাহের ভেতর একটি সাঁকো নির্মাণ করে ফেলেছি।

কালিঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিপন তাঁতী বলে,আমার বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব আধা কিলোমিটার হবে। আগে স্কুলের পোশাক পরে ছড়ার পাশে এসে জুতা খুলে ও প্যান্ট ভাঁজ করে কোনোরকমে ছড়া পার হতাম, অনেক সময় প্যান্টের অনেক অংশ ভিজেও যেতো। বৃষ্টির সময় এ ছড়ায় অনেক পানি থাকে। আমাদের তখন প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার ঘুরে স্কুলে যেতে হতো। হেঁটে যাওয়ার কারণে দেরি হতো। বৃষ্টির দিনে টিফিনের সময় আর বাড়ি যেতাম না। এখন বাঁশের সাঁকো হওয়ার পর বেশ আনন্দ হচ্ছে। ছড়ার পাশে এসে জুতা খুলতে হচ্ছে না। এক দৌড়ে ছড়া পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি।

পরিতোষ কুমার তাঁতী আরও বলেন,যেহেতু সাঁকো দিয়ে শিশু ও বৃদ্ধরাও চলাচল করবে, এ জন্য আমরা সাঁকোকে শিশুদের চলাচলের উপযোগী করেছি। নিচের অংশে ফাঁকা রাখিনি। আমরা বাঁশের সাঁকো করলাম, কিন্তু এগুলো তো স্থায়ী নয়, সরকারের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, এখানে একটি সেতু করে দেওয়ার।

আইনিউজ/সাজু মারছিয়াং/এসডি

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়