কামরুল হাসান, মৌলভীবাজার
আপডেট: ২০:০০, ৩ আগস্ট ২০২২
প্রবল উৎসাহে বৃক্ষমেলায় বিক্রি হচ্ছে পরিবেশের শত্রু ইউক্যালিপটাস গাছ
পরিবেশের শত্রু ইউক্যালিপটাস গাছ প্রবল উৎসাহে বিক্রি হচ্ছে মৌলভীবাজারের বৃক্ষমেলায়। ছবি- আইনিউজ
দেখতে সোজাসাপ্টা, বেশি ডালপালার ঝামেলাও নেই। কিন্তু দেখতে সহজ-সরল হলেও যে কাজে এমন হবে তা সবসময় ঘটে না, ইউক্যালিপটাস গাছের (Eucalyptus Tree) ক্ষেত্রেও এই কথাটি সহজেই মিলে। সুন্দর, বাড়ন্ত এই গাছটি সহজেই দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম, তাই দিনদিন চাহিদাও দেখা যাচ্ছে, এই কারণে গাছটি দেখা গেছে এবছরের বৃক্ষমেলাতেও। তবে এই গাছের রয়েছে প্রচুর ক্ষতি, এটি পরিবেশের শত্রু।
মৌলভীবাজারে “বৃক্ষপ্রাণে প্রকৃতি-প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ” এ প্রতিপাদ্য নিয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন এবং মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের আয়োজনে বৃক্ষরোপন অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২২। এই মেলায় বৃক্ষমেলায় বিক্রি হচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ।
বুধবার (৩ অক্টোবর) সরেজমিনে বৃক্ষেমেলা ঘুরে তিনটি স্টলে ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ বিক্রি হতে দেখা গেছে। মুহিদ নার্সারি, কালাম নার্সারি, সাইমা নার্সারির স্টলে প্রতিদিন ইউক্যালিপটাস গাছ বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা।
বিক্রেতা জানান, প্রতিদিনই ইউক্যালিপটাস গাছের চাহিদা বড়ছে। পরিবেশের ক্ষতিকর হলেও মানুষের মধ্যে এর চাহিদা প্রচুর। এই গাছ দ্রুত বড় হয় এবং বিক্রির উপযোগি হয়।
গত রবিবার মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সাতদিন ব্যাপি বৃক্ষমেলা-২০২২ এর উদ্বোধন করা হয়।
পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে ইউক্যালিপটাস গাছের ভূমিকা রয়েছে। এই গাছ খেয়ে ফেলছে মাটির উর্বরাশক্তি, নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে এই ইউক্যালিপটাস গাছের কারণে ভবিষ্যৎ মরু প্রক্রিয়া শুরুর আশঙ্কা করা হয়েছে। আর এসব কারণেই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ‘ইউক্যালিপটাস’। কিন্তু আশঙ্কার কথা, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও থেমে নেই ইউক্যালিপটাসের রোপণ।
- আরও পড়ুন- টর্নেডো: কি, কেন কীভাবে?
কালেঙ্গা থেকে আসা মুহিদ নার্সারির শাহিন মিয়া বলেন, এটা গ্রামে বলে সাদা আকাশী গাছ। আমরা এই গাছ ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা বিক্রি করে থাকি। এই মেলায় ২ হাজার ইউক্যালিপটাস গাছ নিয়ে এসেছিলাম। আজ ৩০০ বিক্রি করেছি এখন স্টলে গাছ নেই, বাগান থেকে আনা হচ্ছে।
পরিবেশর জন্য ক্ষতির কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা তো জানি পরিবেশের জন্য ক্ষতির। এই গাছগুলোতে একটি পাখিও বসে না, বাসাও বাধে না। কিন্তু মানুষের চাহিদা প্রচুর এই গাছের জন্য। এই ইউক্যালিপটাস গাছ টিনের ঘর তৈরীতে ব্যবহার করা হয়।
কুসুমবাগের কালাম নার্সারীর মো. আবুল কালাম বলেন, বৃক্ষমেলায় ১ হাজার ইউক্যালিপটাস নিয়ে এসেছি প্রতিদিনই বিক্রি হচ্ছে। মেলায় ১৫ টাকা করে বিক্রি করছি। কিছুদিন আগে আমার নার্সারী থেকে একজনই ১৮ শত ইউক্যালিপটাস গাছ কিনে নিয়েছেন।
ইউক্যালিপটাস গাছ।
বৃক্ষ মেলায় গাছ ক্রেতা হেলাল আহমদ বলেন, আমি একজন পরিবেশ প্রেমিক মানুষ, বৃক্ষ পরিবেশ নিয়ে কাজ করি। আজ মেলায় এসে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ দেখে বিস্মিত হয়েচ্ছি। এই বৃক্ষ মেলায় প্রতিপাদ্য “বৃক্ষপ্রাণে প্রকৃতি-প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ”। এ ইউক্যালিপটাস গাছগুলো আগমী প্রজন্মকে কি দিতে পারবে? শ্বাসকষ্ট এবং হার্টের অসুখ এগুলো দিয়ে কি আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ গড়া সম্ভব?
তিনি আরও বলেন, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের উচিৎ ছিল এই ইউক্যালিপটাস গাছ না লাগানোর জন্য সচেতনমূলক প্রচারণা করা। যাতে পরিবেশের জন্য কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তা জনসাধারণকে জানানো সম্ভব হয়।
কলেজ ছাত্র হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এই গাছের বিষয়ে বইয়ে পড়েছি। ইউক্যালিপটাস ফলের রেণু নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করলে অ্যাজমা হয়। শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট হয়। আমাদের পুকুরে পাশে এই গাছ ছিল, এই গাছের পাতা পানিতে পরে মাছ মরে যায়। এখন বর্ষা মৌসুম সবাই চারিপাশে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগাচ্ছে। এই গাছ তাড়াতাড়ি বড় হয় তাই মানুষ ক্ষতিকর না জেনেই এই গাছ লাগাচ্ছে।
মৌলভীবাজার বন্যপ্রানী ব্যাবস্থাপক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ইউক্যালিপটাস গাছ কিছুটা বেশি পানি শোষণ করে। এখন আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে অনুৎসাহিত করছি। উত্তরাঞ্চলে প্রচুর মানুষ লাগাচ্ছে এটি। গাছ সোজা হয়, ডালপালা কম হয়, জ্বালানী কাঠ হয় ও দ্রুত বড় হয়। আমরা অফিসিয়ালি অনুৎসাহিত করছি যে এটা পরিবেশের ক্ষতি করে এটার দরকার নেই।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতিতে আমাদের কাছে চিঠি এসেছে অফিসিয়ালি অনুৎসাহিত করতে হবে। আমরা যেটা করেছি নার্সারির মালিক, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে বলে দিয়েছি আপনারা এই গাছের চারা করবে না। নার্সারির কাজাগুলো মূলত সিলেট বনবিভাগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের লেভেলে যতটুকু আছে চিঠি দিয়ে জানাচ্ছি। আমরা নিজেরা তো প্রায় ২০ বছর ধরে এই ইউক্যালিপটাস গাছ চারা করছি না।
বৃক্ষমেলায় ইউক্যালিপটাস গাছের চারা আছে এমন প্রশ্নে জাবাবে বলেন, স্টলে কিছু চারা আছে। অফিসিয়ালি ৫-৬ দিন আগে চিঠি এসেছে অনুৎসাহিত করতে হবে। এই চারাগুলো তো আগেরই করা। এখন বলা হয়েছে ভবিষ্যতে এই চারা আর করবেন না।
কেন ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে একটি ইউক্যালিপটাস গাছ ৪০ থেকে ৫০ লিটার পানি শোষণ করে যা মাটিকে নিরস ও শুষ্ক করে ফেলে। এছাড়া মাটির নিচের গোড়ায় ২০-৩০ ফুট জায়গা নিয়ে চারদিকে থেকে গাছটি পানি শোষণ করে বলে অন্যান্য গাছ প্রয়োজনীয় পানি শোষণ করতে পারে না। এই গাছে কোনো পাখি বাসা বাঁধে না। ইউক্যালিপটাস গাছের ফলের রেণু নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহে প্রবেশ করলে অ্যাজমা হয়। বাসাবাড়িতে অধিক পরিমাণে ইউক্যালিপটাস গাছ আছে সেসব বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
ইউক্যালিপটাসের মূল থাকে মাটির ১৫ মিটার গভীরে। গাছগুলো পানি ও খনিজ লবণ শোষণ ছাড়াও মাটির গভীর থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণ করে ডালে জমা রাখে। এজন্য যে স্থানে এ গাছ থাকে সেই স্থান হয়ে পড়ে পানিশূন্য ও অনুর্বর। একারণে ওই অঞ্চলের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অন্য গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০-৩০ বছর কোনো স্থানে গাছগুলো থাকলে সেখানে অন্য প্রজাতির গাছ জন্মাতে পারে না। কারণ পাতার টক্সিক কেমিক্যাল মাটিতে থাকা নাইট্রোজেন পরমাণু ভেঙ্গে দিয়ে ছোট ছোট উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। এতে মাটির পুষ্টি-প্রবাহও নষ্ট হয়।
এছাড়া এই গাছের পাতা পড়ে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত মাটির স্তর বিষাক্ত করে ফেলে। এতে ওই স্থানে ঘাস ও লতাপাতা জন্মাতে পারে না। ইউক্যালিপটাস গাছ বিভিন্ন পোকামাকড় ও পাখিদের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। এই গাছ অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে বলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া আমাদের দেশের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০৩ সেন্টিমিটারের বেশি নয়। অথচ এ প্রজাতির গাছের জন্য স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭০০-৮০০ সেন্টিমিটার দরকার। ফলে আশপাশের এলাকা সবসময় শুষ্ক থাকায় দাবানল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আইনিউজ/কেএইচ শাওন/এসডি
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
মৌলভীবাজারে কেমন চলছে রেলওয়ে সেবা, মিলছে কী টিকেট?
লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে ট্রেন, যেভাবে উপভোগ করে পর্যটকরা
সড়কের দু`পাশে ফুটেছে আগুন রাঙ্গা ফুল | নতুন দর্শনীয় স্থান | Beautiful places | Flowers || Eye News
রাস্তায় অবৈধভাবে সিএনজি-কার-মোটরসাইকেল পার্কিং করলেই আইনগত ব্যবস্থা | Moulvibazar | Eye News
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’