বিশেষ প্রতিবেদক
আপডেট: ২২:০৪, ২২ আগস্ট ২০২২
চা শ্রমিক নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে, সিদ্ধান্ত মানছেন না শ্রমিকেরা
শ্রীমঙ্গলের লছনা বাজারে ঢাকা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে চা শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। জেলা প্রশাসক ও শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে শ্রমিক নেতারা স্বাক্ষর করেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে চা শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত শ্রমিক নেতারা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি পঙ্কজ কন্দ সাধারণ শ্রমিকদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন।
- আরও পড়ুন: ‘রাতের অন্ধকারের সিদ্ধান্ত মানি না’
দেশের চা বাগানগুলোতে শ্রম অসন্তোষ নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে রবিবার (২১ আগস্ট) রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতাদের সাথে জেলা প্রশাসকের এক বৈঠক হয়। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আসন্ন দুর্গা পূজার আগে প্রধানমন্ত্রীর সাথে চা শ্রমিক নেতাদের ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হওয়ার শর্তে পূর্বের মজুরি ১২০ টাকা রেখেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে সম্মত হন চা শ্রমিক নেতারা। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা বৈঠক শেষে এ সংক্রান্ত একটি যৌথ বিবৃতিতে শ্রমিকনেতারা স্বাক্ষরও করেছিলেন।
রোববার রাতের বৈঠকে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নাহিদুল ইসলাম, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাগণ এবং বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে সংগঠনের সহ সভাপতি পঙ্কজ কন্দ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, কমল চন্দ্র বুনারজি, মো. শহিদুল ইসলাম, নির্মল দাস পাইনকা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার (২২ আগস্ট) শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া, কাকিয়াছড়া, রাজঘাট, কালিঘাট সরেজমিনে দেখা যায়, অধিকাংশ চা বাগানের শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেননি। তারা বাগানে বাগানে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
ভাড়াউড়া চা বাগানে সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। এই খবর পেয়ে দুপুরে ফুলছড়া ও কালিঘাট চা বাগান থেকে হাজারখানেক শ্রমিক মিছিল নিয়ে ভাড়াউড়া চা বাগানে রওয়ানা দেন। পথে বিটিআরআই চৌমোহনায় বিক্ষোভরত শ্রমিকেরা স্থানীয় প্রশাসনের বাঁধার মুখে পড়েন। বাঁধা উপেক্ষা করে মিছিলটি ভাড়াউড়া চা বাগানে যায়। এসময় ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিকেরাও কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে যোগ দেন। এসময় চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি পঙ্কজ কন্দ আন্দোলনরত শ্রমিকদের হাতে নিগৃহীত হন।
এদিকে দুপুরে উপজেলার সাতগাঁও আমরাইলছড়া, গান্ধিছড়া, মকড়িয়াছড়া, ও ইছামতি চা বাগানের শ্রমিকেরা সাতগাঁও চা বাগানসংলগ্ন লছনা বাজারে ঢাকা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শ্রমিকেরা 'শেখ হাসিনার সরকার, ৩০০ টাকা দরকার' শ্লোগান দেন। তিন ঘণ্টা অবরোধের পরে বিকেল ৪টার দিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শ্রীমঙ্গল থানার ওসি'র অনুরোধে অবরোধ তুলে নিয়ে শ্রমিকেরা নিজ নিজ চা বাগানে ফিরে যান।
শ্রমিকদের এই আন্দোলনে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের সোমবার দেখা যায়নি। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে ভ্যালি কমিটির কয়েকজন নেতা, বাগান পঞ্চায়েত কমিটির নেতা এবং দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শ্রমিক সন্তানেদের আন্দোলনে বাগানের নারী শ্রমিকেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
- আরও পড়ুন: চা-বাগান যেভাবে জীবন মিশে আছে পাতার রঙে
এদিকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতার মোবাইলফোন বন্ধ ছিলো। গণমাধ্যমের কর্মীরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। আর যাঁদের ফোন খোলা ছিলো তাঁরা কল ধরেননি।
কালিঘাট চা বাগানের রঞ্জিতা তাঁতি বলেন, 'নেতারা আমাদের ৩০০ টাকা মজুরির জন্য আন্দোলনে নামিয়েছে। আমরা নয়দিন ধরে আন্দোলন করছি। আমরা ১২০ টাকা মজুরি মানি না।' তিনি শ্রমিক নেতারা টাকায় বিক্রি হয়ে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন।
গনেশ তাঁতি বলেন, 'নেতাদের কী লজ্জা-শরম নাই! আমাদের ১২০ টাকায় কাজ করার জন্য বলে। আমরা না খেয়ে আন্দোলন করছি। আমাদের এই রুটি রুজির সংগ্রাম চলবে। ১২০ টাকায় আমরা সংসার চালাতে পারি না।'
এদিকে চা শিল্পাঞ্চলের সিলেট, মনু-ধলই ও লস্করপুর ভ্যালির অধিকাংশ চা বাগানে শ্রকিকেরা কাজে যোগ দেননি বলে খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন।
সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, সিলেট ভ্যালিতে ২৪টি বাগান রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি খোলা রয়েছে। কিছু বাগানে ছুটি দেওয়া হয়েছে। আর বাকিগুলোতে কাজ বন্ধ রয়েছে।'
মনু-ধলই ভ্যালির সহ-সভাপতি গায়ত্রী রাজভর বলেন, 'আমাদের ভ্যালিতে ২৩টি বাগানের মধ্য ২-৩টি খোলা আছে। বাকি বাগানের শ্রমিকেরা আন্দোলনে আছেন।' বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের সভাপতি খাইরুন আক্তার বলেন, 'লস্করপুর ভ্যালিতে ২৩টি বাগান বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকেরা কাজে যোগ না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।'
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নৃপেন পাল বলেন, 'আমরাতো ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতেই আছি। শ্রমিকদের এখন পূর্বের ১২০ টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরে তাদের মজুরি নির্ধারণ করে দেবেন। কিন্তু শ্রমিকেরা এটা মানছে না।'
উল্লেখ্য, গত শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে চা শ্রমিকেরা ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে এই আন্দোলন করছেন। গত রোববারের (২১ আগস্ট) আগেও সরকার ও মালিকপক্ষের সাথে শ্রমিকদের শ্রীমঙ্গল এবং ঢাকায় তিন দফা বৈঠক হয়েছিলো। এই বৈঠকগুলোতে কোন সুরাহা হয়নি।
আইনিউজ/ বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী/এসকেএস
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
চা শ্রমিক মা কিভাবে ছেলেকে পড়ালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, শুনুন সেই সংগ্রামের গল্প || Eye News
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
নৌযান বানিয়ে এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ছোট কিশোর হাকিমুল || Eye News || Moulvibazar || Bout
সিরিজ বোমা হামলা দিবসে মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ মিছিল || Eye News || Awami League || Moulvibazar
মৌলভীবাজারে জাতির পিতার পদচিহ্ন নিয়ে ‘খুঁজে ফিরি পিতার পদচিহ্ন’
বিস্ময় ছোট বালিকা দেয়ালিকা চৌধুরী বলতে পারে ১৯৫ দেশের রাজধানীর নাম | Deyalika | Eye News
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’