১৯ দিন পর কাজে ফিরলেন চা শ্রমিকরা

মজুরি বৃদ্ধির দাবি নিয়ে টানা ১৯ দিনের আন্দোলনের ইতি ঘটলো প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের মধ্য দিয়ে। ১৯ দিন পর কাজে ফিরেছেন চা শ্রমিকরা। রবিবার (২৮ আগস্ট) সকাল থেকে চা বাগানে চা পাতা তোলাসহ বাগানের বিভিন্ন কাজে ফিরতে দেখা গেছে চা শ্রমিদকের।  সর্দারের নেতৃত্বে সেকশন থেকে পাতা তুলে ঝুলি ভর্তি করছেন তারা।

এর আগে গত ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘন্টা করে চার দিন কর্মবিরতী ও ১৯ আগস্ট থেকে নূন্যতম মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করে আসছিলেন চা শ্রমিকরা। জনপ্রতিনিধি, সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তার দেয়া আশ্বাসে বিশ্বাস না করে আন্দোলনের শেষকালে চা শ্রমিকরা অপেক্ষা করছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের।

অবশেষে গতকাল শনিবার (২৭ আগস্ট) রাতে মালিক পক্ষের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর শ্রমিকদের ১৭০ টাকা মজুরি দিতে রাজি হয় বাগান মালিকরা।প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের প্রেসব্রিফিংয়ের পর চা বাগানগুলোতে চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যাওয়ার ঘোষনা দেন চা শ্রমিকরা।

চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা

রবিবার (২৮ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে শ্রীমঙ্গলের  বিভিন্ন চা বাগানে ঘুরে দেখা গেছে চা শ্রমিকদের কর্মচঞ্চলতা। এদিন সকাল নয়টার অনেক আগে থেকেই চা পাতা তুলতে শুরু করেন চা শ্রমিকরা। বাগানের কারখানাগুলো চালু করা হয়েছে সকাল থেকেই। দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে বড় হয়ে উঠা চা পাতাগুলো দ্রুত তুলছেন শ্রমিরা।

এদিকে আন্দোলন শেষে কাজে ফেরা ভাড়াউড়া বাগানের নারী চা শ্রমিক উষা হাজরা বলেন, পেটের দায়ে আন্দোলন করেছিলাম। আমাদের অনেকে অনেক মিথ্যা কথা বলেছে। অনেকে আন্দোলন বন্ধ করতে বলেছে। আমরা বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর কথা ছাড়া আমরা আন্দোলন বন্ধ করবো না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা ভাবেন। তিনি যে সীদ্ধান্ত দিবেন সেটা আমরা মেনে নিবো। কাল প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারন করে দিলেন । আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি। তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তিনি শ্রমিকদের জন্য ভাবেন।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার হচ্ছে বাংলাদেশও

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা আইনিউজ প্রতিবেদককে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব মেনে আজ সাপ্তাহিক ছুটি থাকার পরেও সবাই কাজে যোগ দিয়েছেন। চা বাগানের ফ্যাক্টরীগুলো চালু হয়েছে। কিছু চা বাগানে চা পাতা রাখার জায়গায় পুরোনো চা পাতা থাকায় আজ কাজে যোগ দেয় নি। আর ছুটির দিন থাকায় কিছু চা বাগানে শ্রমিকরা যায়নি। সোমবার থেকে পুরোদমে কাজ হবে বলে আশা করছেন বাগান মালিক কতৃপক্ষ।

প্রাণ ফিরেছে চা বাগানগুলোতে

এদিকে আন্দোলন শেষ চা শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে (বাগানে) ফিরে আসায় যেন প্রাণ ফিরে এসেছে চা বাগানগুলোতে। রবিবার বাগানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও সবাই কাজে যোগ দিয়েছেন। চালু হয়েছে কারখানা, শুরু হয়েছে চা-কে ঘিরে শ্রমিক-মালিক-কর্মচারিদের ব্যতিব্যস্ততা।

লাগাতার আন্দোলনের ফলে প্রায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছিলো অধিকাংশ চা বাগানে। অনেক বাগানে নষ্ট হয়েছে বহু চা পাতাও। চা শ্রমিকরা কাজে ফিরে আসায় সেই অচলাবস্থা এখন কেটে গেছে অনেকটাই। কাজে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেক চা শ্রমিক।

ক্যান্টিনের ভাতে পোকা, ফ্রিজে মাংস পচা— ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীর

শনিবার (২৭ আগস্ট) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন ১৩টি চা বাগানের মালিক। দীর্ঘসময় বৈঠক শেষে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।  নতুন মজুরি নির্ধারণ করে চা শ্রমিকদেরকে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়েই যেন বাগানে কাজে ফিরছেন চা শ্রমিকরা। ফলে চা বাগানের চিরচেনা সে রূপ আবারও ধরা দিচ্ছে সাধারণ মানুষের চোখে।

আইনিউজ/এইচএ

আইনিউজে আরও পড়ুন-

• মৌলভীবাজারে বঙ্গবন্ধু : খুঁজে পাই পিতার পদচিহ্ন (ভিডিও)
• দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ: ইতিহাসে ভিন্নরকম এক সঙ্গীতায়োজন
• এ পি জে আব্দুল কালাম: ‘দ্য মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’