মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
আপডেট: ১৫:৪২, ৯ নভেম্বর ২০২২
মৌলভীবাজারের সকল পথ গিয়ে যেন মিশেছিল মনিপুরি রাস উৎসবে
![এবারের রাস পূর্ণিমায় কমলগঞ্জের মাণ্ডপে রাসনৃত্য শিল্পীরা। ছবি- হেলাল আহমেদ এবারের রাস পূর্ণিমায় কমলগঞ্জের মাণ্ডপে রাসনৃত্য শিল্পীরা। ছবি- হেলাল আহমেদ](https://www.eyenews.news/media/imgAll/2021April/মণিপুরি-রাসলীলা-শ্রী-কৃষ্ণের-রাসলীলা-কমলগঞ্জ-মৌলোভিবাজার-eyenews-2211091541.jpg)
এবারের রাস পূর্ণিমায় কমলগঞ্জের মাণ্ডপে রাসনৃত্য শিল্পীরা। ছবি- হেলাল আহমেদ
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল মনিপুরি মৈতৈ ও বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী মহারাসলীলা উৎসব। ১৮০ তম আয়োজনে পা রাখা বৃহৎ এ আয়োজন সময়ের সাথে সাথে মনিপুরীরা ছাড়াও এ অঞ্চলের অসাম্প্রদায়িকতার মেলবন্ধনের প্রতীক হয়ে ওঠেছে। আর তাই তো মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের সকল পথ যেন মিশেছিলো রাস উৎসবে।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) কমলগঞ্জের মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় মনিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের ১৮০তম এবং আদমপুরে মৈতৈ সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাসলীলা উৎসব।
এতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নানা শ্রেণী পেশার হাজারো মানুষের সমাবেশ ঘটে।
রাখাল নৃত্য দিয়ে শুরু
বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের প্রথম পর্ব রাখাল নৃত্য বা গোষ্ঠলীলা। এই পর্বে মূলত শ্রী কৃষ্ণের গোষ্ঠলীলার বিভিন্ন কাহিনী নৃত্য-গানে প্রদর্শিত হয়। রাখাল নৃত্য সকালে শুরু হয়ে চলে গোধূলী পর্যন্ত।
শ্রী কৃষ্ণ বাল্যকালে গরু চড়াতেন। তাই মনিপুরী তরুণদের রাখাল বেশে এই রাখাল নৃত্য বা গোষ্ঠলীলা।
অপেক্ষার অবসান শেষে শুরু হয় রাসনৃত্য
রাত ১১ টার পর শুরু হয় মূল পর্ব- রাসনৃত্য। যা দেখতে দেশের বিভিন্ন বিভাগ থেকে, বিভিন্ন দেশ থেকে দর্শনার্থীরা ভীর জমিয়েছেন মাণ্ডব জুড়ে। গোধূলি পেরিয়ে হেমন্তের রাতে দ্বিপ্রহরের চাঁদ। কার্তিকের পূর্ণিমা তিথি। ধবল জ্যোৎস্নায় মন্ডপগুলো উদ্ভাসিত। ঠিক সে সময় কৃষ্ণরূপে বাঁশি হাতে উপস্থিত হন এক কিশোর। অপরূপ সাজে রাধা আর গোপী বেশে মণিপুরী তরুণীদের আবেগী ঢঙে শুরু হয় রাসনৃত্য। সেই সাথে মণিপুরী বন্ধনাগীতি।
রাতভর চলে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম কাহিনী। ভোররাতে শ্রীকৃষ্ণের বিদায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মনিপুরি যুবক-যুবতীরা। সকলেই ফিরে আসেন নিজ নিজ ঘরে। এভাবেই উদযাপিত হয় ঐতিহ্যবাহী মহারাসলীলা উৎসব।
রাসলীলায়- গোপীগণকে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনে বিমুগ্ধ বিহার, যমুনা পর্ব, কৃষ্ণের অন্তর্ধান। গোপীবধু আর কৃষ্ণের পদচিহ্ন ধরে একাকী রোদনরত গোপীবধুকে খুঁজে পাওয়া। কৃষ্ণ বিরহে ব্রজগোপীগণের রোদন। বিরহ কাতর চিত্তে ১১টি শ্লোকের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি বন্ধনা করা হয়। কৃষ্ণের বিচিত্র মহিমা শক্তির স্তুতি গীত পরিবেশিত হয়।
রাসনৃত্য দেখে মুগ্ধ কবিগুরু
মনিপুরি রাসনৃত্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন কবিগুরু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। মনিপুরী নৃত্যকে বাইরের জগতের সাথে পরিচয় করে দেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে কবিগুরু সিলেটে বেড়াতে এসে এ নাচের কোমল আঙ্গিক দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে এর বীজ তিনি তার নৃত্যনাট্যে বপন করেন।
মৌলভীবাজারের এই রাসনৃত্য উৎসব সময়ের সাথে বিশ্ব ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। যেখানে দেশি-বিদেশী লাখো পর্যটকের ঢল নামে। জড়ো হন দেশি-বিদেশী গণমাধ্যমের সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহক, গবেষক, লেখক, সাহিত্যিকেরা।
যেভাবে হলো রাসনৃত্যের সূচনা
মনিপুরী ইতিহাসে জানা যায়, ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজা ভাগ্যচন্দ্র সিংহের আয়োজনে মণিপুরিরা প্রথম রাসলীলা পালন করেন। সে সময় মণিপুরি রাজা স্বপ্নাদীষ্ট হয়ে কন্যা লাইরোবিকে রাধার ভূমিকায় অবতীর্ণ করে রাস অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন।
মৈথিলি ও ব্রজবুলি ভাষার বিভিন্ন পদের মণিপুরি সংগীতের নিজস্ব গায়কী ও মুদ্রা-পদবিক্ষেপে জটিল এবং ধ্রপদি ধারার গীতি-নৃত্যধারায় তা পালন করা হয়েছিল।
মণিপুরিদের আদিভূমি ভারতের মণিপুর থেকে এই রাস উপমহাদেশে তথা সমগ্র বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান করে দিয়েছে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হলেও এর নৃত্যশৈলী বরাবরই সব ধর্ম ও জাতির মানুষকে আকর্ষণ করেছে।
রাসনৃত্যের প্রকারভেদ
রাসনৃত্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছি। মহারাস, বসন্ত রাস, কুঞ্জরাস, দিব্যরাস ও নিত্যরাস। এর মধ্যে মহারাস জাঁকজমকপূর্ণ। ভগবত পুরাণের পঞ্চম অধ্যায়ে বর্ণিত কৃষ্ণ অভিসারে রাধা, গোষ্ঠী অভিসার, গোপীগণের রাগ আলাপ, কৃষ্ণর্তন, রাধানর্তন, গোপীদিগের নর্তন, শ্রীকৃষ্ণের অন্তর্ধান, প্রত্যাবর্তন, পুষ্পাঞ্জলি, গৃহগমন প্রভৃতি পর্যায়ে মহারাস অনুষ্ঠিত হয়।
রাসনৃত্যে সাধারণত রাধা ও কৃষ্ণের ভূমিকা দেয়া হয় শিশুদের, যাদের বয়স পাঁচের কম। মনিপুরীদের বিশ্বাস, এই বয়সের পর শিশুদের দৈবশক্তি লোপ পেয়ে যায়। তবে প্রকৃত নাটনৃত্য ও গীত পরিবেশন করে তরুণীরা, যারা রাধার সহচরী হিসাবে মঞ্চে আসে।
রাসনৃত্যের কেন্দ্রবিন্দু ভঙ্গি পরেং অর্থাৎ নৃত্যমালিকা। রাসলীলা শুরু হয় নট সঙ্কীর্তন দিয়ে। গোবিন্দজীর মন্দিরের বিশাল মণ্ডপে আরাধ্য দেবতার মূর্তির সামনে শিল্পীরা মৃদঙ্গ ও করতাল সহযোগে সঙ্কীর্তন করে। বিশেষ পোশাকে সাজেন শিল্পীরা।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বন্দনা দিয়ে শুরু হয়ে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ব্যাপী রাসসঙ্গীত অনুষ্ঠিত হয়। রাসনৃত্যের মাধ্যমে ভক্ত-শিল্পীরা শ্রীকৃষ্ণের সাথে আবেগসূত্রে মিলিত হয়। বাংলা, মৈথিলী, ব্রজবুলি ও মৈতৈ কবিদের পদাবলি থেকে রাসনৃত্যের গীত গাওয়া হয়।
আইনিউজ/এইচএ
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’