নিজস্ব প্রতিবেদক, মৌলভীবাজার
আপডেট: ০০:১৪, ১৬ জুন ২০২৩
মৌলভীবাজারসহ হাওরাঞ্চলের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারের উদ্যোগ
মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সহ দেশের হাওরাঞ্চলের দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ এবং উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্টে দিনব্যাপী এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি।
‘হাওরাঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মৎস্য সংরক্ষণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয়’ শীর্ষক এই কর্মশালায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, সাংবাদিক, স্থানীয় মৎস্যজীবী ও মৎস্য খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনরা অংশগ্রহণ করেন।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ডক্টর নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য, অনুমিত হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ডক্টর আব্দুস শহীদ এমপি।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক। মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ুম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক অলক কুমার সাহা। বক্তব্য রাখেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জাকারিয়া, সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক এম এ জলিল।
মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন, ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন বন্ধ, মৎসজীবীদের প্রণোদনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) প্রভাংশ সোম মহান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, বিটিভির জেলা প্রতিনিধি ও আই নিউজের সম্পাদক হাসানাত কামাল, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী বুলেট, শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও ইটিভির জেলা প্রতিনিধি বিকুল চক্রবর্তী, বাংলাদেশ প্রতিদিনের শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি দীপংকর ভট্টাচার্্য লিটন প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহ্সান শাহ প্রমুখ।
মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রীর বক্তব্য
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন- একসময় বলা হতো দেশে মাছের আকাল। এখন দেশ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশে বেড়েছে মাছের উৎপাদন।
মন্ত্রী বলেন- মিটা পানির মাছ উৎপাদন আরো বৃদ্ধি, ডিমওয়ালা মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন বন্ধ করতে হবে। এলক্ষ্যে সরকার নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। মৎস্যখাতে আমূল পরিবর্তন করতে যাচ্ছি। মন্ত্রী বলেন- আগামীতে মাছের কোনো প্রজাতি যেন বিলুপ্ত না হয় সেজন্য মাছের জিন ব্যাংক করা হয়েছে। দেশীয় মাছের প্রজনন মৌসুমে বিকল্প জীবিকায়ন ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ভিজিএফ কার্ড দেওয়ার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে।
দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করতে হবে
মন্ত্রী বলেন- হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করতে না পারলে সামগ্রিকভাবে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। হাওরের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় জনপ্রতিনিধি, মৎস্যজীবী প্রতিনিধি, মৎস্য চাষী, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের সামগ্রিক স্বার্থে হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষাসহ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।
দেশের সব মানুষের জন্য যেটা প্রয়োজন ও অনিবার্য সে মাছ যত্নের সঙ্গে বেড়ে উঠার সুযোগ দিতে হবে। এজন্য হাওরে দেশীয় মাছ রক্ষায় নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। মৎস্য খামারিরা পোনা মাছের প্রতি, ছোট মাছের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। বেপরোয়াভাবে পোনা মাছ ধরা যাবে না। মাছ বেড়ে ওঠার জন্য অভয়াশ্রম দিতে হবে। প্রজনন মৌসুমে মা মাছ নিধন করা যাবে না। হাওড়ে এমন কোন নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করা যাবে না, যে জাল দিয়ে পোনা মাছ নিধন হয়। অপরদিকে হাওরে কোন বিষাক্ত রাসায়নিক বা কীটনাশক যাতে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব মন্ত্রী যোগ করেন, হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। মৎস্যসম্পদ রক্ষায় জনগণকে বোঝাতে হবে, সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। সরকার দেশে মৎস্য আইন যুগপোযোগী করেছে।
মৎস্য আইনের পরিপন্থী কাজ যে করবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে ছিল তিনি বলেন, ভাতে মাছের বাঙালির ঐতিহ্য এক সময় প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। একটা সময় বলা হতো মাছের আকাল। এমনকি ইলিশ মাছও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত নির্দেশনা ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ইলিশের উৎপাদন সব রেকর্ড অতিক্রম করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ইলিশ জিআই সনদ পেয়েছে। সারাবিশ্বের মোট ইলিশের প্রায় ৮০ভাগ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। দেশীয় ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ৩৯ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশীয় মাছ যাতে বিলুপ্ত না হয় সেজন্য ময়মনসিংহে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে। যে অঞ্চলে কোন মাছ বিলুপ্ত হবে, লাইভ জিন ব্যাংক থেকে সে অঞ্চলে মাছের পোনা সরবরাহ করা হবে। যাতে সে অঞ্চলে নতুন করে দেশীয় মাছের বিস্তার হতে পারে। মেধার বিকাশে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মাছ তিনি আরও বলেন, খাবারের বড় যোগান দেয় মাছ। মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার ৬০ ভাগ যোগান দেয় মাছ। মেধার বিকাশে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, শিশুর পরিপূর্ণ পুষ্টির জন্য, বয়স্কদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে মাছ ও মাছ জাতীয় খাবারের কোন বিকল্প নেই। এজন্য মাছ রক্ষায় সবার ভূমিকা রাখতে হবে।
মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ বিতরণ
মন্ত্রী আরও যোগ করেন, মৎস্য আহরণ বন্ধকালে মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ বিতরণসহ বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে মৎস্যজীবীরাই লাভবান হবেন। পোনা মাছ না ধরলে মাছ বড় হওয়ারর সুযোগ পাবে। মৎস্যজীবীদের লাভের জন্যই সরকার কাজ করছে। হাওড় অঞ্চলের মাছ বড় হতে না দিলে এই অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা সবার কাছে জানাতে হবে।
আইনিউজ/ইউএ
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’