‘আমার গাড়িতে ছয়জন অপরিচিত লোক একজন পঙ্গু মানুষকে নিয়ে উঠেন। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের কথাবার্তায় অপ্রাসঙ্গিকতা আর অপরিচিত হওয়ায় মনে সন্দেহ জাগে। পরিচিত আরও দুই-চার জনকে মোবাইলে কল দিয়ে বিষয়টা নিয়ে কথা বলি। তারা আমাকে মৌলভীবাজার যাওয়ার কথা বলছিলো কিন্তু কৌশলে তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে’। এভাবেই আজ কুলাউড়ায় জঙ্গি সন্দেহে ১৭ জনকে আটকের বৃত্তান্ত বলছিলেন বৃদ্ধ সিএনজি চালক রবিউল্লাহ। তিনিসহ আরও কয়েকজন সিএনজি চালকের সাহসিকতায় জঙ্গি সন্দেহে তাদেরকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। 

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে দুর্গম পাহাড়ে সিটিটিসির জঙ্গি অভিযান ও জঙ্গি গ্রেফতারের একদিনের মাথায় আজ কুলাউড়ায় আবার জঙ্গি সন্দেহে ১৭ জন আটক হয়েছে। যাদের মধ্যে একজন আছেন চিকিৎসক। শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে সিটিটিসি অভিযান শেষে জানিয়েছিল সেদিন ১০ জনকে আটক করা গেলেও কাফেলার আরেক সদস্য চিকিৎসক পাকিয়ে গিয়েছেন। আজকে চিকিৎসক সহ ১৭ জনকে আটকের পর কুলাউড়ায় নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। 

ঘটনার শুরু সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল ১০টায়। স্থানীয় সিএনজিচালক রবিউল্লাহ বলেন, ‘অপরিচিত লোকজন পঙ্গু একব্যক্তিকে কাঁধে বহন করে নিয়ে গাড়িতে আসে। আমার গাড়িতে তিনজন উঠে। তারা আমাদের জানায় বনভোজনে এসেছে। তারা মৌলভীবাজার যাবে বলছে। আমরা তাদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করে কথাবার্তা সন্দেহজনক হলে কৌশলে কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি।’

আরেক সিএনজিচালক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার গাড়িতে ছয়জন অপরিচিত লোক উঠেন। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। আমিও তাদের নিয়ে আসি ইউনিয়ন পরিষদে।’

সোমবার সকালে জঙ্গি সন্দেহে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

ধারণা করা হচ্ছে, এই ১৭ জনই মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের সেই জঙ্গি আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি! তাদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল তানজিমও রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আব্দুল আহাদ মেন্দি নামের একজন পঙ্গুও রয়েছেন।

উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাজার থেকে সিএনজি চালক ও স্থানীয় লোকজন জঙ্গি সন্দেহে তাদের আটক করে। বর্তমানে আটককৃতদের কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে (সিটিটিসি) খবর দেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে আসছেন। আটককৃতরা জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদ কাফেলার সদস্য বলে আমরা সন্দেহ করছি।

এর আগে শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে কর্মধা ইউনিয়নের বাইশালী টিলায় থাকা জঙ্গি আস্তানা থেকে নারী-পুরুষসহ ১০ জঙ্গিকে আটক করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, সোয়াট ও পুলিশ। এসময় অভিযানের খবর পেয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে থাকা অনেকেই পাহাড়ের ভেতরে আত্মগোপনে চলে যায়।

অভিযানের পর থেকে স্থানীয় এলাকায় আতঙ্ক কাজ করছিল। সবার ধারণা ছিল পাহাড়ের ভেতরে সেই আস্তানা থেকে জঙ্গিদের কমান্ডার হিসেবে পরিচিত আব্দুল আহাদ মেন্দিকে কাঁধে বহন করে চলে যায় তারা।

• ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র ৯ সদস্য রিমান্ডে, ২ জন কারাগারে

• কুলাউড়ায় জঙ্গি: ওরে ডাক্তার বানাইতে কত কষ্ট করছি, ও হইল জঙ্গি: ডা. সোহেলের বাবা

জানা যায়, সোমবার সকাল ১০টার দিকে কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ চা-বাগানের বাশফিল্ড খেলার মাঠ থেকে জঙ্গিরা ৫টি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে পলায়ন করার চেষ্টা করছিল। এসময় সিএনজিচালকরা তাদেরকে নিয়ে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের আসে। পরে কুলাউড়া থানা পুলিশ ও স্থানীয়রা তাদের আটক করে। খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

স্থানীয় এক সিএনজি চালক বলেন, ‘আমার গাড়িতে ল্যাংড়া (পঙ্গু) একজন ব্যক্তি সহযোগীদের নিয়ে উঠেছিল। আমি তাদেরকে রবিরবাজার থেকে পরিষদের ভেতর নিয়ে আসি।’

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করার কাজ চলছে। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।’

আই নিউজ/এইচএ