Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৮ ১৪৩২

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:০৮, ১২ অক্টোবর ২০২৪

যে ব্যতিক্রমী দুর্গা প্রতিমা দেখতে ভিড় করেন হাজারও সনাতনী 

রাজনগরের পাঁচগাঁও গ্রামের আলোচিত লালবর্ণের দেবীদুর্গা। ছবি- আই নিউজ

রাজনগরের পাঁচগাঁও গ্রামের আলোচিত লালবর্ণের দেবীদুর্গা। ছবি- আই নিউজ

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের পাঁচগাঁও গ্রামের সাধক স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাসের বাড়িতে পালিত হয়ে আসছে ব্যতিক্রম লালবর্ণের দেবীদুর্গার পূজা। পাঁচগাঁও গ্রামের দুর্গাপূজা দেশের অন্য সবখানের চেয়ে আলাদা। কারণ, এখানকার দেবীর রং হয় লালবর্ণের। দুর্গাপূজার সময় যে লোহিত বর্ণ দুর্গাকে দেখতে সমবেত হন সারাদেশের লাখো মানুষ। 

বৃহত্তর সিলেট ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এমনকি ভারত থেকেও প্রচুর ভক্ত আসেন এই পূজামণ্ডপে। পূজার সপ্তমী থেকে নবমী এই তিনদিন কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে।

পূজা পালনকারীরা জানিয়েছেন, দেশের আর কোথাও দেবীদুর্গার রং লাল বর্ণের নেই। শুধু ভারতের আসাম ও কামাক্ষ্যায় লাল বর্ণের প্রতিমা আছে।

এলাকায় প্রচলিত আছে, সাধক পুরুষ স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস আসামের শিবসাগরে মুন্সীপদে চাকরি করতেন। তিনি একবার আসামের কামরূপ-কামাক্ষা বাড়িতে গিয়ে পূজার জন্য পাঁচ বছরের শিশু কন্যা চাইলে স্থানীয়রা তাকে একজন শিশু কন্যা দেন। সাধক সর্বানন্দ দাস সেই কন্যাকে পূজা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ধীরে ধীরে কন্যার রং বদলে লাল হয়ে ওঠে। বিস্মিত সাধক বুঝতে পারেন, কন্যার মধ্যে তখন স্বয়ং দেবী ভর করেছেন। সেই কন্যা তখন সাধককে বলেন, তুমি আমার কাছে বর চাও। আমি তোমাকে বর দিব। সাধক তখন তার কাছে বর চাইলেন। দেবী তখন নির্দেশ দিলেন পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রঙ লাল হবে। সাধক দেবীকে রাজনগরের পাঁচগাঁওয়ে যেনো দেখা দেন সেই আকুতি জানান। সেই থেকে এখানে লালবর্ণের মূর্তির পূজা হয়ে আসছে। 

পূজার একপর্যায়ে সাধক দেবীর কাছে আকুতি জানান, তিনি (দেবীদুর্গা) যে এখানে এসেছেন তার প্রমাণ কী ? তখন দেবীদুর্গা তার হাতের পাঁচ আঙুলের লাল ছাপ তৎকালীন নির্মিত কাঁচাঘরের বেড়ায় লেপ্টে দেন। দেবীর মাথার স্বর্ণের টিকলি রেখে যান। সেই থেকেই এখানে লাল বর্ণের মূর্তিতে দেবীর পূজা হয়ে আসছে। এমনকি পূজার সময় এখনো রেখে যাওয়া গয়না দেবীদুর্গার প্রতিমাকে পরানো হয়।

প্রতি বছর উৎসব মুখর পরিবেশে দেশ বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীরা আসেন এ মণ্ডপে। এখানে হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের নানা মনস্কামনা নিয়ে ছুটে আসেন দুর দূরান্ত থেকে। পূজার সপ্তমী ও নবমীতে পশুবলিতে হাজারখানেক পাঁঠা, কয়েকটি মহিষ, অগণিত হাঁস ও কবুতর বলি দেওয়া ছাড়াও অনেকেই বস্ত্র, অলঙ্কার নিবেদন করেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ প্রদীপ ও আগরবাতি প্রজ্জ্বলন করেন দেবীর উদ্দেশ্যে।

পাঁচগাঁওয়ের লালদুর্গার পূজা মূলত একটি পারিবারিক আয়োজন। বর্তমানে এই আয়োজনের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন সাধক সর্বানন্দ দাসের ষষ্ঠ বংশধর সঞ্জয় দাস।

আলাপকালে সঞ্জয় দাস বলেন, এই পূজা আমাদের পারিবারিক পূজা। তবে দেবীর জাগ্রত উপস্থিতির কারণে প্রতিবছরই লোকসমাগম বাড়ছে। এ জন্য পূজার এই কদিন হিমশিম খেতে হয়। তবে কোনো সমস্যা হয় না। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। এবারও স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসন থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।

এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে জেলা শহরের বেশকয়েকটি পূজা মন্ডপের নান্দনিক মূল ফটক সহ দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজানো হয়েছে। আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব উদযাপনে জেলা জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা জানান, এবারের দুর্গা পূজায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নির্বিঘ্নে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা সম্পন্ন করতে সবধরনের প্রস্তুতি আছে জেলা পুলিশের।

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সিলেট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়