বিকাশ বিশ্বাস, শ্রীমঙ্গল
২০ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া নেই শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম। ছবি- আই নিউজ
দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের প্রবেশদ্বার শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে বিশ বছরে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। নানা অব্যবস্থাপনায় ভুগে যাত্রীসেবার মান হারিয়েছে সেই কবেই।
জানা যায়, ১৯১২ সালে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন প্রাথমিকভাবে চালু হয়। প্রথম দিকে ব্রিটিশরা রেলগাড়ি দিয়ে চা ও বিভিন্ন পণ্য উঠা-নামাতে এটি ব্যবহার করত। পরে ধীরে ধীরে এখানে ট্রেনে ভ্রমণকারী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, এবং জেলার সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের যাতায়াতের অংশ হিসেবে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনের নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়।
তাছাড়া, দীর্ঘদিন পর ততকালীন বিএনপি সরকারের মাননীয় অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং মৌলভীবাজার ৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত এম সাইফুর রহমান রেলওয়ে স্টেশনটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং আগের জরাজীর্ণ স্টেশন ভবনটি ভেঙে নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ শেষে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার উপস্থিতিতে ১৭ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে নতুন ভবনের উদ্ভোধন করেন।
কিন্তু, বর্তমানে আবারও নানা সমস্যায় জর্জরিত শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন চত্বরে ময়লা আবর্জনার স্তুপ পরে রয়েছে, ভিতরে আংশিক রং এবং প্লাটফর্ম উঁচু করার কাজ চলমান থাকলেও যাত্রীদের বসার স্থান না থাকায় অকেকেই শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এখানে শৌচাগার পরিচ্ছন্ন না থাকায় মহিলাদের পরতে হয় বিব্রতকর অবস্থায়। সেই স্টেশন চত্বর যত্রতত্র দাড় করিয়ে রাখা রিকশা জিপ সিএনজি এর কারনে সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি ট্রেন আসলে তৈরি হয় যানজটের। দীর্ঘদিন স্টেশন মাস্টারের পদটি শূন্য থাকায় স্টেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
তথ্য মতে, ১৯৯৬ সালে কমলগঞ্জের লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণার পর পাল্টে যায় এখানকার দৃশ্যপট। পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ হওয়াতে এখানকার পর্যটন শিল্প বিকশিত হতে থাকে। গড়ে উঠে নানান হোটেল রিসোর্ট কটেজ ও গেস্ট হাউজ। সেই সাথে বাড়তে থাকে দেশী বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা। কিন্ত পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রেল যোগাযোগ থাকায় অনেকেই বেছে নেন রেলসেবা। কিন্ত শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে টিকেট সংকট, অপরিচ্ছন্ন পাবলিক টয়লেট, নেই ভালো মানের বসার ব্যবস্থা, অপরিচ্ছন্ন প্লাটফর্ম, নেই আধুনিক ট্রেনের সময়সুচির বিলবোর্ড, কিংবা ফুড কোড সেই সাথে স্টেশন চত্বর হকারদের দখল তাছাড়া জরাজীর্ণ রেললাইন সহ সেবার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ এখানকার যাত্রীরা।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক মো. কবির মাহমুদ বলেন, ‘এদেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে এই আরো অসংখ্য কাজ করতে হবে, আমরা পরিবার সহ স্টেশন দাঁড়িয়ে আছি এখানে বসার কোনও স্থান নেই নেই একটি ভালো টয়লেট এমনকি একটি ভালো খাবার হোটেল ও নেই। একটা পর্যটন নগরীর স্টেশন থাকবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কিন্ত এখানে এসব ঠিকঠাক করা হচ্ছেনা মনে হচ্ছে। আসলে সবাই নিজ দেশকে ভালো না বাসলে দেশের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়।’
আরেক যাত্রী সুমাইয়া খাতুন বলেন, ‘টিকেট কাউন্টারে বলছে টিকিট নেই কিন্ত স্টেশন যে ভিড় আমি মহিলা মানুষ কিভাবে দাঁড়িয়ে যাবো সেটাই বুঝতে পারছি না এবং এতো চাপ কিন্ত এতো কম টিকেট দিয়ে কিভাবে যাত্রীসেবা হবে বুঝতে পারি না।’
স্টেশন গেইট কিপার মো. জুবায়ের আলী জানান, ‘শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জ সড়কের ভানুগাছ রোডস্থ রেল ক্রসিং এর বেরিয়ার গুলো ভালো না, দীর্ঘদিন ব্যবহার হওয়ার ফলে যে কোনও সময় তার ছিঁড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। তাছাড়া প্রচুর পর্যটক এবং এলাকার যাত্রীদের গাড়ির চাপ প্রচুর চাপ থাকায় অনেক সময় রোড বেরিয়ারগুলো কাজ করেনা এই বেরিয়ার গুলো পরিবর্তন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।’
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাবেক ভারপ্রাপ্ত সহ-সভাপতি মো. সেলিম আহমেদ জানান, ‘পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল অনেকদিন ধরেই অবহেলিত। এখানে প্রচুর দেশী বিদেশী পর্যটকদের আগমন হয়ে থাকে, কিন্ত শ্রীমঙ্গল স্টেশনে টিকেট সল্পতা থাকায় এখানে আগত পর্যটকদের পরিপূর্ণ সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছেনা। তাছাড়া বিদেশী পর্যটকদের জন্য নেই স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যাবস্থা কিংবা বসার স্থান। তাই পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করতে হলে রেল স্টেশনের সৌন্দর্য বর্ধন, টিকেট বৃদ্ধি, উন্নত কেন্টিনসহ ভালো টয়লেট অতীব জরুরী।’
সহকারি স্টেশন মাস্টার শিপলু সুত্রধর বলেন, ‘আমাদের অফিস টয়লেটটি পাবলিক টয়লেট হিসাবে ব্যবহার হয়। এখানে অতিরিক্ত মানসম্মত টয়লেট না থাকায় এখানে আগত যাত্রীরা আমাদের অফিস টয়লেট ব্যবহার করায় আমাদের অফিস কার্যক্রম ব্যহত হয়। পর্যটকদের এখানে বসার ভালো মানের ওয়েটিং রুম নেই, তাই স্টেশনের বারান্দা ব্যবহারে চাপ বেড়ে যায়। তাছাড়া ঢাকা-সিলেট এবং সিলেট চট্টগ্রাম লাইনে মোট ১২ টি ট্রেন যাতায়াত করে, তাই পর্যটক ও যাত্রীদের এখানে প্রচুর চাপ থাকে।’
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে রয়েছে টিকেট সল্পতাও। ভালো মানের একটি কেন্টিন থাকলে যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি পেতো বলে মনে করেন তিনি।
আই নিউজ/এইচএ
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’