সাজু মারছিয়াং ( শ্রীমঙ্গল)
নাচে গানে বর্ষকে বিদায় জানালো খাসিয়ারা
ঐতিহ্যবাহী খাসি নৃত্য পরিবেশন করছেন খাসি তরুণীরা। ছবি- সাজু মারছিয়াং
মাঠের এক পাশে তৈলাক্ত একটি বাঁশ। তার ঠিক ওপরে একটি মোবাইল ফোন রাখা। তৈলাক্ত সেই বাঁশ বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করছেন কয়েকজন। অনেক চেষ্টার পর একজন বাঁশ বেয়ে জিতল মোবাইল। আরেক পাশে তির-ধনুক নিয়ে তির ছুড়ছেন কয়েকজন তরুণ। কেউ আবার গুলতি দিয়ে সামনে রাখা লক্ষ্যে ছুড়ে মারছেন। নারীরা অবশ্য সব প্রতিযোগিতায় নেই। তাঁরা ব্যস্ত পান গোছানোর প্রতিযোগিতায়। মাঠের মাঝে রাখা পান কে কত কম সময়ে গোছাতে পারেন, সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তাঁরা।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মাঠে শনিবার (২৩ নভেম্বর) এমন নানা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বর্ষ বিদায় দিয়েছেন খাসিয়ারা। খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান ‘সেং কুটস্নেম’ উপলক্ষে এ আয়োজন করে ‘খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল’। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন খাসিয়াপুঞ্জি থেকে আসা খাসিয়া সম্প্রদায় ও অন্যান্য সাধারণ জনগোষ্ঠীর মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) সম্প্রদায়ের ১২৫ তম বর্ষ বিদায় ও ১২৬ তম নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম' নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। যদিও প্রথমে খাসিদের আয়ের ও জীবিকার প্রধান উৎস পান চাষ চলতি মৌসুমে পানের ব্যবসা মন্দার কারণে ও আর্থিক সংকট থাকায় "খাসি সেং কুটস্নেম " অনুষ্ঠান হবে না বলে জানিয়েছে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি মান্রী জিডিসন প্রধান সুছিয়াং এর সভাপতিত্বে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট শাওন মজুমদার, কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ডি এম সাদিক আল শাফিন, লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি মান্রী ও খাসি সোস্যাল কাউন্সিলের সাধারন সম্পাদক ফিলা পতমী, কাউন্সিলের সদস্য অনিল জয় ডিখার, খাসি নারী নেত্রী মনিকা খংলা, কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) শামীম আখঞ্জিসহ বিভিন্ন পুঞ্জির প্রধানগণ।
আয়োজকরা জানান, ‘সেং কুটস্নেম’ বা বর্ষবিদায় খাসিয়াদের সর্বজনীন উৎসব। প্রতিবছরের মতো এবারও কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া পুঞ্জির খেলার মাঠে নানা সমাহারে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এদিন বর্ষবিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান খাসিয়ারা। বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১২৫তম বর্ষকে বিদায় ও ১২৬ তম বর্ষকে বরণ করে নিচ্ছেন তাঁরা। ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ২৩ নভেম্বর ‘খাসি সেং কুটস্নেম’ পালন করা হয়। ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হবে খাসি বর্ষবরণ।
সরেজমিনে মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে দেখা যায়,খাসিয়া সম্প্রদায়ের ১২৫তম বর্ষ বিদায় ও ১২৬ তম নতুন বছরকে বরণের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘খাসি সেং কুটস্নেম' উপলক্ষে নানান রঙের পোশাক পরে খাসিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নাচগান,খেলাধুলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।মাঠের একপাশে খাসি দের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে মেলা বসে। তবে এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় সময় স্বল্পতার কারনে আয়োজন কিছুটা সীমিত ছিল কারণ একদম শেষ সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিনটি আয়োজন করা হয়।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল সুত্রে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর ২৩ নভেম্বর মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির খেলার মাঠে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠািত হয়।খাসিয়ারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সাজসজ্জায় সেজে নেচে–গেয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন।
‘সেং কুটস্নেম উৎসবের দিন সবাই মিলে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে আনন্দে নিজেদের সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করেন। অনুষ্ঠানস্থলে পুরো মাঠ জুড়ে মেলা বসে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়ারা পোশাক, পান, তীর, ধনুক, বাঁশ-বেতের তৈরী জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন।এই উৎসবে সিলেট বিভাগের প্রায় ৭০টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এসে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন।
হেলোনা ডিখার বলেন, আমরা প্রতি বছর আমাদের বর্ষ বিদায় ও নতুন বছরকে বরণের অনুষ্ঠানটি করে আসছি। অনুষ্ঠানটি ঘিরে আমরা খাসি সম্প্রদায়ের সবাই একসাথে জমা হয়ে উৎসবে মেতে উঠি। খাসি নারী নেত্রী ও মান্রী মনিকা খংলা বলেন, সারাবছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকি বর্যকে বিদায় জানানোর জন্য। এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব, বছরের এদিনে এখানে এসে সবার সাথে দেখা হয়। আনন্দ উদযাপন করি।
এ বিষয়ে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফিলা পতমী বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনুষ্ঠানটি করতে পারছিলামনা। পরবর্তীতে সরকারের সহযোগীতায় আমরা 'সেং কুটস্নেম' আয়োজন করি।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন,‘সিলেট বিভাগের প্রায় ৭৩টি খাসিয়া পুঞ্জির মানুষ এই উৎসবে এসে অংশ নেন। দেশ–বিদেশের পর্যটকেরাও এই অনুষ্ঠানে আসেন। খাসি সেং কুটস্নেম বা বর্ষ বিদায় খাসিয়াদের একটি সার্বজনীন উৎসব।
আই নিউজ/এইচএ
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’