মো. আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার
মনু তীরে শুভ্রতা ছড়াচ্ছে কাশফুল, আছে অযত্ন কেটে ফেলার অভিযোগ
![অযত্ন আর অবহেলার কারণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অবশিষ্ট কাশফুল অযত্ন আর অবহেলার কারণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অবশিষ্ট কাশফুল](https://www.eyenews.news/media/imgAll/2021April/মনু-তীরে-সারি-সারি-লাশফুল-শুভ্রতা-ছড়াচ্ছে-eyenews-2210011759.jpg)
অযত্ন আর অবহেলার কারণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অবশিষ্ট কাশফুল
বর্ষার শেষেই শুরু হয় শরৎের রাজত্বকাল। শরৎ বেশ তাৎপর্য বহন করে প্রকৃতি প্রেমি আর ভ্রমণ পিপাষুদের কাছে। শরৎ ঘিরে রয়েছে কাশফুলের চমৎকার মিতালী। রোমাঞ্চে ভরা কাশফুলের নরম শুভ্রতা নিয়ে বরেণ্য কবিদের অসংখ্য কবিতার পঙক্তিমালা মন ছুঁয়ে যাবে যে কারো।
শরৎ নিয়ে কবিতা লিখেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি নির্মেলেন্দু গুণসহ বিখ্যাত কবিরা। শরৎ মানেই নিল আকাশের নিচে ডানা মেলা পরীর মতো সাদা সাদা কাশফুল। আবহমানকাল থেকে শরৎে জেগে উঠা কাশফুল এখন অনেক নদী তীর কিংবা পাহাড়ী উঁচু টিলাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পাহাড়-প্রকৃতিতে কাশফুলের দেখা মেলা কল্পনাতীত।
বর্তমানে জেলার পর্যটন উপজেলা শ্রীমঙ্গলের বেশ কয়েকটি চা বাগান কিংবা চা বাগানের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ছড়ার পাড়ে জেগে উঠা চরে সারিবদ্ধ কাশফুলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। পর্যটন এলাকা হওয়ায় এসব কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের জটলা লেগেই থাকে। গণমাধ্যমের কল্যানে ওই এলাকার কাশফুলের সৌন্দর্যের বার্তাও পৌঁছে গেছে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটকের কাছে।
তবে অন্যান্য বছরের মতো এবার দুর্গাপূজার আগে আগে মৌলভীবাজারের মনু নদীর তীর ঘেঁষে জেগে উঠা বালুচরে দেখা মিলেছে সাদা কাশফুলের অভয়ারণ্য। যদিও লোকচক্ষুর আড়ালে হওয়ায় এখানকার কাশবন নিয়ে মাতামাতি খুব একটা নেই। কিন্তু যারা জানেন, চেনেন তারা ঠিকই ক্যামেরা আর সঙ্গীসাথী নিয়ে চলে আসেন মনু নদীর তীরের কাশবনে।
সাধারণত নদীর তীর, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু জায়গায় কাশবনের দেখা মেলে বেশি। তবে নদীর তীরেও কাশফুল জন্মাতে দেখা যায়।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নের ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে মনুনদীর ঢেউপাশা খেয়াঘাটের বিশাল এলাকাজুড়ে জেগে উঠা চরে সাদা কাশফুলের সারি। মনুনদীর বাঁধের উপর বন আর গাছের ছায়ায় অনেকটা আড়ালে পরে যাওয়ায় সাধারণত কাশফুল মূল সড়ক থেকে অনেকটা দেখা যায় না।
কিন্তু প্রকৃতি প্রেমীদের চোখ ফাঁকি দেয়া সম্ভব না যে, তা এখানকার স্থানীয় কয়েক যুবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে। বছর দুয়েক আগেও এই এলাকার জেগে উঠা বালুচরে সাদা কাশফুলের নরম স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে ছুটে আসতেন ভ্রমণ পিপাষু প্রকৃতি প্রেমীরা।
প্রতিদিন দুই থেকে তিনশো নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ সড়ক দিয়ে যাওয়ার পথে একনজর কাশফুল দেখতে ছুটে আসতেন এখানে। এখানকার জেগে উঠা কাশবনের দূরত্ব মূল সড়ক থেকে খুব একটা বেশি নয়। সড়ক থেকে মনুর বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে চোখ মেললেই দেখা দিবে নীল আকাশের নীচে হাতছানি দিচ্ছে অসংখ্য সাদা কাশফুলের লম্বা সারি।
তবে এখানে কাশফুলের অভয়ারণ্য হলেও আগের মতো আর লোকজনের আনাগুনা খুব একটা নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কারণ হিসেবে তারা জানান, সংরক্ষণের অভাব। অতিরিক্ত কাশফুল হওয়ায় বেশ কিছু কাশফুল কেটে ফেলা হয়েছে কিংবা জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।
শুধু কাশফুল নয়, গাছপালা আর সবুজের সমারোহ থাকায় আশপাশের পরিবেশও বেশ নির্মল ও পরিপাটি। জায়গাটিকে পরিবেশবান্ধব ও একান্তে সময় কাটানোর উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্যেগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই সংগঠনটি তাদের নিজস্ব অর্থায়নে বাঁধের উপর কিছুটা দূর দূর স্টিলের তৈরি ব্রেঞ্চ বসিয়েছেন।
এতকিছুর পরও যথাযত উদ্যেগ না থাকায় এখানকার পরিবশে-প্রকৃতি ও কাশফুলের অপার সৌন্দর্য দেখতে আগের মতো লোকজন খুব একটা আসেন না বলে জানা যায়।
এদিকে সবুজে ঘেরা পাহাড়-প্রকৃতিসহ পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও প্রবাসী আধ্যুষিত মৌলভীবাজার জেলা সদরে দু-একটি রিসোর্ট ছাড়া পর্যটন কেন্দ্রিক অবকাঠামো এখনো তেমন একটা গড়ে উঠেনি। ব্যক্তি উদ্যেগে সদর উপজেলার কনকপুরে গড়ে উঠেছে দুবাই ফান সিটি নামক ছোট্র পরিসরে একটি মাত্র শিশুদের পার্ক। মনুতীরের কাশফুলের সামান্য দূরত্বে যার অবস্থান। যা বদলে দিতে পারে এই এলাকার পর্যটন সম্ভাবনার সমূহ চিত্র।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দূর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা সমাজকর্মী হুমায়ুন আহমেদ বলেন, এই জায়গায় একটা সময় প্রচুর কাশফুল ছিল, বিকেল বেলা ঘুরতে আসা মানুষের ভিড় লেগে থাকত। এখন অযত্ন আর অবহেলার কারণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অবশিষ্ট কাশফুল।
তবে যথাযত কর্তৃপক্ষ নজর দিলে সংরক্ষণ করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানকার প্রকৃতি বেশ বৈচিত্রময়, শুধু কাশফুল নয়, আশপাশের মনজুড়ানো দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে পর্যটক সম্ভানা হাতছানি দিচ্ছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা রহমান বাঁধন বলেন, এখানকার কাশবন যদি সরকারী খাস জমির উপর হয় তাহলে এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ব্যক্তিগত ল্যান্ডের উপর যদি হয় তাহলে তো আর কিছু করার নেই। আমি সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখব।
তিনি আরো বলেন, মৌলভীবাজারের প্রতিটি ইউনিয়ন কেন্দ্রিক সরকারি খাস ভুমি পাওয়া গেলে একটি করে পার্ক গড়ে তোলার উদ্যেগ নেয়া হবে। যাতে ওই এলাকার লোকজন অবসরে বিনোদনের সুযোগ পান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়কারী ও নাট্য ব্যক্তিত্ব আ.স ম সালেহ সুহেল বলেন, শরৎকালীন বিশেষ সময়ে সাধারণত কাশফুল ফুটে, এটি একটি বিশেষ ফুল। বর্তমানে মনু নদীর তীরে অনেক জায়গায় কাশফুলে দেখা মিললেও সংরক্ষণের অভাবে কাশফুল হারিয়ে যাচ্ছে। নদী কেন্দ্রিক জেগে উঠা কাশবন আগামী প্রজন্ম যাতে দেখতে পারে তার যথাযত সংরক্ষণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
- ‘গাছ হেংলানেছে- পয়সা মিলেগা’ : চা শ্রমিক ও চা শিল্প
- পোশাক নয়, নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ জরুরি
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের দেশ ।। Most beautiful woman in the world ।। Eye News
যে গ্রামে পুরুষ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন নারীরা | Women are pregnant without men | Kenyan Girls | Eye News
চুল বেঁধে ঘুমিয়ে নিজের যে ক্ষতি করছেন ।। Hair loss problems
পায়খানা ও প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ চেপে রাখলে যে ক্ষতি হয়??
- মেয়ের বাড়িতে ইফতার: সিলেটি প্রথার বিলুপ্তি চায় নতুন প্রজন্ম
- অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শ্রীমঙ্গলের শিশু শিক্ষার্থী নাঈম
- দেশের চতুর্থ ধনী বিভাগ সিলেট
- শ্রীমঙ্গল টু কাতারে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালি নেটওয়ার্ক
মৌলভীবাজারে অনলাইন জুয়ায় রাতারাতি কোটিপতি সাগর - এসএসসির ফলাফলে বিভাগে ৩য় স্থানে মৌলভীবাজার
- বিজ্ঞাপন
মৌলভীবাজারে হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় লাইফ লাইন হাসপাতাল (ভিডিও) - মৌলভীবাজারে ট্যুরিস্ট বাসের উদ্বোধন বৃহস্পতিবার
- ১ ঘন্টার জন্য মৌলভীবাজারে শিশু কর্মকর্তা হলেন তুলনা ধর তুষ্টি
- মৌলভীবাজার শহরে একদিনে ৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত
- বন্ধ থাকবে মৌলভীবাজারের ‘এমবি’