নিজস্ব প্রতিবেদক
ঘুরে আসুন ঝর্ণার স্বর্গ মিরসরাই সীতাকুণ্ডে
বর্ষার শেষ, শরতের শুরু—ঝর্ণা দেখার এরচেয়ে ভালো সময় আর কী হতে পারে! বাংলাদেশে ঝর্ণার স্বর্গ বলা হয় মিরসরাই সীতাকুণ্ড অঞ্চলকে। কেননা এই রুটেই আছে ১০ টি ঝর্ণা।
এদের মধ্যে অনেকেই সারা বছর থাকে সুপ্ত। বর্ষায় জেগে ওঠে তারা। সবুজের সমারোহে কলকল ধ্বনির এই ঝর্ণাগুলো মনকে সত্যিই আন্দোলিত করে তোলে। তবে শান্তি পাওয়ার পথ সুগম নয় মোটেও।
বৃষ্টি হলেই এই পথ এতটাই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, ট্রেকিংয়ে অভিজ্ঞ না হলে বেশি সতর্ক থাকা উচিত। ৩ ধাপ বিশিষ্ট ঝর্ণাটি নিচ থেকে শুধু এক ধাপ দেখা যায়। বাকি দুই ধাপ দেখতে হলে উপরে উঠতে হবে আপনাকে, যা খুবই পিচ্ছিল। কিন্তু বিপদ কাটিয়ে একবার উঠে গেলে চোখ ভরে যে সৌন্দর্য্য দেখতে পাবেন তার তুলনা হয় না!
আপনাদের জন্য আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো ১০ টি ট্রেইলে কি কি আছে এবং যাওয়ার পথের রুট।
খইয়াছড়া ট্রেইল – মিরসরাই সীতাকুণ্ড রুটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেইল এটি। এখানে রয়েছে ৮ স্টেপ বিশিষ্ট ঝর্ণা আরো উপরে গেলে ডাবল ফলস। খৈয়াছড়ার ঝর্ণার সবগুলো স্টেপ ছাড়িয়ে আরো অনেকটুকু গেলে শেষ সীমা “আমতলী কুম” , সেখান থেকে হাতের ডানপাশে (দক্ষিণ) একটি চিকন ঝিরি। সেই পাথুরে সংকীর্ণ ঝিরিপথে একটু এগুলে পাবেন ৩ স্টেপ বিশিষ্ট “শিমুলতলী ঝর্ণা”।
যেভাবে যাবেন-ঢাকা থেকে মিরসরাইয়ের আগে বড় তাকিয়া বাজারে। এখান থেকে খইয়াছড়া স্কুলের পাশ থেকে সোজা পূর্ব দিকে চলে যাবেন।
বোয়াইল্যা বাউশ্যা ট্রেইল- এই ট্রেইলটি হলো মিরসরাই সীতাকুণ্ড অঞ্চলের সবচেয়ে সুন্দর ট্রেইল। এই
ট্রেইলে আছে বোয়াইল্যা বাউশ্যা অমরমানিক্য ঝর্ণা। এই রুটে মোট তিনটি ঝর্ণা। এছাড়া আছে ন হাইত্যে কুম, এবং উঠান ঢাল। এই ট্রেইলটা এককথায় অপূর্ব এবং অতুলনীয়।
যেভাবে যাবেন – ঢাকা থেকে নামবেন মিরসরাই বাজারে। মিরসরাই কলেজ রোড থেকে ব্র্যাক পোল্ট্রি ফিড পর্যন্ত যাওয়ার সিএনজি পাবেন। ওখানে নেমে পূর্বদিকে হাঁটা ধরবেন।
হরিণমারা হাঁটুভাঙ্গা ট্রেইল- এই ট্রেইলটা মিরসরাই রুটের অন্যতম সুন্দর একটি ট্রেইল। এই ট্রেইলে পাবেন হরিণমারা, হাঁটুভাঙ্গা এবং সর্পপ্রপাত ঝর্ণা। এছাড়াও সর্পপ্রপাতের পাশে বাওয়াছড়ার মুখ। এই রুটে ঢুকতেই পাবেন অপূর্ব নীলাম্বর লেক।
যেভাবে যাবেন- ঢাকা অথবা চট্টগ্রামী যেকোনো বাসে সীতাকুণ্ডের আগে ছোট কমলদহ বাজার। বাজারের পরের রাস্তা আর বাইপাস যেখানে মিলেছে সেখানে নামবেন। রাস্তার পূর্ব দিকে ঢুকবেন। বাকিটা রাস্তা ধরা গেলে আর ছড়ার পথ ধরে এগিয়ে যাবেন।
সোনাইছড়ি ট্রেইল – এই ট্রেইলটি বাকি ট্রেইলগুলোর তুলনায় অপরিচিত এবং দুর্গম। তবে এককথায় অপার্থিব। বিশাল বিশাল পাথর আর গিরিখাদের সমন্বয়ে এই ট্রেইল। আছে গভীর বাদুইজ্যা কুম। একপাশে পাহাড়ের খাঁজ আর নিচ দিয়ে চলার পথ। অনেক জায়গায় সূর্যের আলোতেও ছায়া পড়ে।
যেভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে মিরসরাইয়ের পরে নামবেন হাদী ফকিরহাট বাজার। তারপর রাস্তার পূর্ব দিকে হাঁটা ধরবেন।
বাড়বকুন্ড ট্রেইল- এই ট্রেইলে পাবেন বাংলাদেশের একমাত্র গরম পানির ঝর্ণা। কালভৈরবী মন্দির ও অনিন্দ্য সুন্দর পাহাড়ী ঝিরি পথ এবং বেশ কয়েকটি ছোট ক্যাসকেড ও কুম।
যেভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে নামবেন বাড়বকুন্ড বাজারে।সীতাকুণ্ডের পরই বাড়বকুন্ড বাজার। বাড়ব কুন্ড বাজার থেকে ৪০ -৪৫ মিনিটের হাঁটা পথ প্রাচীন কালভৈরবী মন্দিরে। ওখান থেকে হেঁটে ঝিরিপথ ধরবেন।
ঝরঝরি ট্রেইল-সীতাকুন্ড ও মিরসরাই অঞ্চলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুন্দর ট্রেইল এটি। এটি মিরসরাই সীতাকুণ্ড অঞ্চলের সবচেয়ে লম্বা ট্রেইল। তবে এটি অপরিচিত ট্রেইল। অপূর্ব সব ঝর্ণা ক্যাসকেড এবং ঝিরিপথের সমন্বয়ে এই ট্রেইল।
যেভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে নামবেন সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলা বাজারে। ওখান থেকে হেঁটে পূর্ব দিকের রাস্তা ধরে আধা ঘন্টা হেঁটে ঝিরিপথ ধরবেন।
কমলদহ ট্রেইল – এই ট্রেইলটা এককথায় অসাধারণ। এই ট্রেইলে পাবেন বড় কমলদহ ঝর্ণা সহ মোট চারটি ঝর্ণা। এই ট্রেইলের ঝর্ণাই বড়। বর্ষায় গেলে অপার্থিব সৌন্দর্য দেখতে পাবেন তবে এটি বিপজ্জনক বেশ।
যেভাবে যাবেন – ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ডের বড় দারোগারহাট নামবেন। এখান থেকে একটু হেঁটে পূর্ব পাশের রাস্তা ধরে ঝিরিপথ ধরবেন।
সুপ্তধারা সহস্রধারা ট্রেইল – সীতাকুণ্ড রুটের সবচেয়ে সহজ ট্রেইল এটি তবে সুন্দর। এখানে পাবেন সুপ্তধারা এবং সহস্রধারা ঝর্ণা সহ কয়েকটি কুম ও ক্যাসকেড পাবেন।
যেভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের রাস্তার মাথা থেকে ইকোপার্কে ঢুকলেই দেখিয়ে দিবে।
সহস্রধারা মূল ট্রেইল- এটিও আগের ট্রেইলের মতো সহজ তবে আগের ট্রেইল থেকে সুন্দর। এই ট্রেইলে পাবেন প্রাচীন এক মন্দির, সহস্রধারা মূল ঝর্ণা, সহস্রধারা লেক এবং বুদবুদকুন্ড।
যেভাবে যাবেন- ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ড বাজারে নামবেন। এখান থেকে ছোট দারোগাহাটের লোকাল সিএনজি পাবেন।
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল- মিরসরাই রুটের অন্যতম সুন্দর একটি ট্রেইল নাপিত্তাছড়া ট্রেইল। নাপিত্তাছড়া, বাঘবিয়ানী ও বান্দরকুম ও কুপিকাটাকুম নামে চারটি ঝর্ণা এই ট্রেইলে। ঢাকা থেকে নামবেন মিরসরাইয়ের পর নয়াদুয়ারী বাজারে।
যেভাবে যাবেন- বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে যাত্রা করে নাপিত্তছড়া আসা যায়। ঢাকা থেকে যেকোনো বাসে করে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারীবাজারে নামতে হবে। এছাড়া ট্রেনেও চট্টগ্রাম নেমে মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারীবাজারে আসা যায়। তাছাড়া চট্টগ্রামের অলংকার থেকে বাসে নয়দুয়ারীবাজার যেতে পারবেন। নয়দুয়ারী বাজারে নেমে সেখান থেকে স্থানীয় গাইড নিয়ে অথবা নিজেই নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় চলে যেতে পারেন। নয়দুয়ারী থেকে হেঁটে যেতে ৩০/৪০ মিনিট লাগবে।
আইনিউজ/এসডিপি
- সিলেট ট্রেনের সময়সূচি ২০২৩ দেখুন
- ঢাকা টু সিরাজগঞ্জ ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- চট্টগ্রাম টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা
- শীতকালে সিলেটের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ
- ঢাকা টু পাবনা ট্রেনের তালিকা এবং সময়সূচী
- ‘লাসুবন’- শ্রীমঙ্গলে প্রাচীন গিরিখাতের সন্ধান!
- এবার মাল্টার ভিসা পাওয়া যাবে ঢাকা থেকেই!
- ঢাকা টু দিনাজপুর ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়ার তালিকা ২০২৩
- টাঙ্গাইল টু ঢাকা ট্রেনের সময়সূচী এবং ভাড়া তালিকা
- ঘুরে আসুন ঝর্ণার স্বর্গ মিরসরাই সীতাকুণ্ডে